কলকাতা, 27 অগাস্ট : পরীক্ষায় ফেল করেছিল ৷ টাকা দিয়ে স্কুলে চাকরি পেতে চেয়েছিল । ভুয়ো নথিপত্র নিয়ে হাজিরও হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের দপ্তরে । কিন্তু ধরা পরে গেল সে ৷ গতকাল একটি ইন্টিমেশন লেটার নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে আসে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা অরিজিৎ দাস । স্কুল সার্ভিস কমিশন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ।
গতকাল গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের জন্য ভেরিফিকেশনের একটি ইন্টিমেশন লেটার নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে আসে অরিজিৎ ৷ গতকাল কোনও ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম ছিল না ৷ নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে নিয়ে যায় কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারের কাছে । সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৷ SSC সূত্রে খবর , 2016 সালে হওয়া গ্রুপ-ডি'র পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি অরিজিৎ দাস । তারপরও টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার আশা করেছিল সে ।
অরিজিতের দাবি, কমিশনের বাইরে বিক্রম মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয় । সে তাকে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় । সেই অনুযায়ী জমি-বাড়ি বিক্রি করে বিক্রম মণ্ডলকে আড়াই লাখ টাকাও দেয় বলে দাবি অরিজিৎ দাসের । পুরো ঘটনা জানর পর বিধাননগর ইস্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করে স্কুল সার্ভিস কমিশন । পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করে ৷ অভিযুক্ত বিক্রয় মণ্ডলের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ ।
এই বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, "অরিজিৎ দাস, বাড়ি নন্দীগ্রাম, এই ছেলেটি আমার অফিসে এসে হাজির হয় । এসে বলে আজ 26 অগাস্ট 2019 টেবিল নম্বর 29-এ দুপুর 2 টোর সময় আমার ভেরিফিকেশন টাইম আছে । এটা শুনে আমার অফিসের লোকজন অবাক হয়ে যান । কারণ আজ 26 তারিখ দুপুর 2টোর সময় কোনও ভেরিফিকেশন নেই আমাদের এবং 29 নম্বর টেবিল বলেও কিছু নেই । আমার কাছে নিয়ে আসে ছেলেটিকে । আমি ছেলেটির কাগজপত্র দেখে বুঝতে পারি যে এই ইন্টিমেশন লেটারটি ফেক । স্কুল সার্ভিস কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অসাধু চক্র ওর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে । এইরকম একটা ফেক ভেরিফিকেশন ইন্টিমেশন লেটার বানিয়ে দিয়েছে । এটা ফেক তার প্রমাণ হচ্ছে এতে যে ওয়েবসাইটের নাম রয়েছে সেটা SSC-র ওয়েবসাইট নয় । কিন্তু ইন্টিমেশন লেটার দেখতে আমাদের মতো । ওরা ওয়ার্ডে বানিয়েছে, আমার লোগোটাকে স্ক্যান করে এখানে বসিয়েছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে বিধাননগর ইস্ট পুলিশ স্টেশনে খবর দিই । সাইবার ক্রাইমেও খবর দিই । সেখানকার লোকজনও চলে এসেছেন । আমি FIR করে বিষয়টা থানায় তদন্তের জন্য দেব । সবচেয়ে বড় কথা ছেলেটি গ্রুপ-ডিতে কোয়ালিফাই করতে পারেনি । ওকে একটা ফলস ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে তুমি কোয়ালিফায়িড । তারপর এইরকম একটা ফেক ইন্টিমেশন বানিয়েছে । ওর বক্তব্য, টাকাটা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছে । আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে । আজ এটা করে যাওয়ার পরে আরও দেড় লাখ টাকা না কি দিত ।"
2016 সালে পরীক্ষা হয়েছিল রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও স্পন্সর্ড স্কুলগুলিতে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা । সেই পরীক্ষায় পাশ করেনি অরিজিৎ দাস । সেটা সে জানত বলেও স্বীকার করে নিয়েছে । কিন্তু, অকৃতকার্য জেনেও কি করে ভুয়ো নথি নিয়ে আসল? প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত অরিজিৎ দাস বলে, "না আমি আসিনি । আমি যোগাযোগ করেছিলাম বিক্রম মণ্ডলের সঙ্গে । সেই আমাকে বলেছিল, আমি তোর কাজটা করে দেব । আমাকে পয়সাকড়ি দিতে হবে । তখন আমি বলি ঠিক আছে তুমি তাহলে কাজ করে দাও । তারপর আমাকে প্রথমে রেজ়াল্ট দেখিয়েছিল । তখন নিয়েছিল আড়াই লাখ টাকা । তখন আমি বলি কাজ কমপ্লিট হলে বাদবাকি দেড় লাখ টাকা দেব ।"
কীভাবে পরিচয় হল এই বিক্রয় মণ্ডলের সঙ্গে? অরিজিৎ দাস বলেন, "2018-এ বিক্রম মণ্ডলের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল । আচার্য সদনের বাইরেই পরিচয় হয়েছিল । সে বলেছিল, আমি অফিসে কাজ করি । কোন অফিস তা বলেনি । আমাদের ওখানে নন্দীগ্রামে মধুবাবু বলে একজন বাজারে আসতেন । দোকানে বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কথা প্রসঙ্গে মধুবাবু ওঁর সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছিলেন যে, তুমি ওঁর সঙ্গে কথা বলো, উনি কাজকর্ম করিয়ে দেন বলে শুনেছি । সেই দিন থেকে বিক্রমবাবু ফোন করতেন আমাকে ।" এত টাকা, কীভাবে দিলেন? অরিজিৎ দাস বলে, "জায়গা জমি বিক্রি করে ।" ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই এই বিশাল অঙ্কের টাকা সে বিক্রম মণ্ডলকে দিয়েছে বলে দাবি অরিজিৎ দাসের ।