ETV Bharat / city

কোরোনা-যুদ্ধে মাতৃত্বই "সিক্রেট এনার্জি" বেলেঘাটা ID-র চিকিৎসক অমৃতার - ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তী

হাসপাতালে কোরোনা যুদ্ধে দিনরাত এক করে লড়ছেন তিনি। তিনি একজন স্নেহময়ী মা-ও। মেয়ে আদৃতাই তাঁর "সিক্রেট এনার্জি"। মাতৃদিবসে জানালেন বেলেঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তী।

Motherhood is "Secret Energy"
ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তীর
author img

By

Published : May 10, 2020, 7:21 PM IST

কলকাতা, 10 মে: স্বামী-স্ত্রী এক পেশায় থাকলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয়। বস্তাপচা এমন ধারণার স্থান নেই তাঁদের জীবনে। ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তী ও ডাঃ মানস ভট্টাচার্য নিজেদের একে অপরের পরিপূরক বলতেই ভালোবাসেন। তাঁরা মনে করেন, কোরোনা যুদ্ধের মরিয়া লড়াইয়ে এই পার্টনারশিপ বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, হাসপাতালে দিনরাত এক করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যে চিকিৎসক, তিনি একজন দায়িত্বশীল, স্নেহময়ী মা-ও। কোরোনা-আবহে বেলেঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী যেন মাতৃদিবসের অনন্য প্রতিচ্ছবি ৷

বেলেঘাটা ID হাসপাতালে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডাক্তার অমৃতা চক্রবর্তী। নৈহাটির মেধাবী ছাত্রী চিকিৎসকের পেশাকে স্রেফ দশটা-পাঁচটার ডিউটি বলতে ভালোবাসেন না। তিনি বলেন, "অসুস্থ মানুষের মুখে সুস্থতার হাসি দেখতে ভালোবাসি আমি।" স্বভাবতই কোরোনা প্রকোপের এই দিনে দম ফেলার সময় নেই ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তীর। কার্যত নাওয়াখাওয়া ভুলে রোগীর সেবায় অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উঠতে হচ্ছে তাঁকে। এরই মধ্যে রয়েছে পরিবারের দায়িত্ব। অমৃতা চক্রবর্তী জানান, পেশা ও পরিবারে ভারসাম্য রক্ষার উৎসস্থল তাঁর স্বামী মানস ভট্টাচার্য এবং মেয়ে আদৃতা।

কোরোনা-আবহে রাজ্যের ব্যস্ততম বেলাঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী বলেন, "একই পেশা মানে ব্যক্তিত্বের সংঘাত। আমি কিন্তু বুঝিনি। বরং, প্লাস পয়েন্ট দেখতে পেয়েছি। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকলে সহমর্মিতার হাতটা এগিয়ে এসেছে আমার বেটার হাফের দিক থেকেই।"

এরপরই হাসিমুখে অমৃতা চক্রবর্তী জানান, "আমার যুদ্ধ জয়ের সিক্রেট এনার্জি কিন্তু মেয়ে আদৃতা। সন্তানের বড় হয়ে ওঠা দেখা একটা সুখকর অভিজ্ঞতা। সেই সন্তান যখন পরিণত হয়ে ওঠে তখন আরও ভালো লাগে। যা এই সময় আমি আমার মেয়ের মধ্যে দেখছি।"

গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপের আড়াল থেকে উঁকি দেয় গর্বিত মা। বেলাঘাটা ID হাসপাতালের ব্যস্ত চিকিৎসক বলেন, "যখন কোরোনা ভাইরাস ডালপালা ছড়াচ্ছে তখন অন্য সকলের মতো আমিও আতঙ্কিত হয়েছিলাম। এখনও আতঙ্ক কেটে গিয়েছে বলব না। সেই সময় ভেবেছিলাম মেয়েকে নৈহাটিতে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু, মেয়েই বলেছিল, এই লড়াই আমাদের সকলের। জয়-পরাজয়, মরি-বাঁচি, যা হবে একসঙ্গে মোকাবিলা করব। মা হিসেবে সন্তানের এই কথাগুলো আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। বলতে পারেন, ডাক্তার হিসেবে আমাকে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে আমার মেয়ে।"

যদিও, এখানেই দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না অমৃতা চক্রবর্তীর। বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি শয্যাশায়ী। বর্হিবিশ্বের বর্তমান অস্থিরতার কথা বোঝার ক্ষমতা নেই তাঁর। এমন একজন মানুষের শুশ্রুষার দায়িত্বও অমৃতা চক্রবর্তীর কাঁধে। এক্ষেত্রে তিনি ডাক্তার ও পুত্রবধূ। তাঁর কথায় "বাড়িতে ফিরে দূরত্ব বজায় রেখে সব কিছু করতে হয়। সংক্রমিত হলে ওঁকে বাঁচানো কঠিন হবে। একই কথা আমার বাবা-মা সম্পর্কেও বলা যায়। বয়স হয়েছে দু'জনেরই। সতর্ক থাকতে বলেছি। আগে নিয়মিত ফোনে কথা বলতাম। এখন কাজের চাপে সবসময় হয় না। তবে খবর রাখি, রাখতেই হয়।" চিন্তিত শোনায় বেলেঘাটা ID-র চিকিৎসকের গলা।

সব মিলিয়ে পারিবারিক ঝক্কি সামলে কোরোনার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম। কতটা চ্যালেঞ্জ? তাঁর মতে, "এইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার সুযোগ পাওয়া চিকিৎসক হিসেবে আনন্দের। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। গ্রাউন্ড জিরোতে দাড়িয়ে কাজ করছি। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে সমৃদ্ধ হচ্ছি।"

ডাক্তার অমৃতা চক্রবর্তী জানিয়ে দেন, "কোরোনা ভাইরাস নতুন নয়। এই ভাইরাস আগেও ছিল। ভোলবদলে নতুন শক্তিতে এসেছে। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ সামলাতে হচ্ছে। আপাতত নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি না পাওয়া গেলেও অচিরেই সেই সমস্যা মিটবে।"

তবে এতকিছুর পরেও সাধারণ মানুষের সচেতনার অভাব দেখে বিস্মিত ও হতাশ চিকিৎসক। তিনি বলেন, "হাসপাতালে আসার সময় পথে ঘাটে এখনও এত মানুষের ভিড়! অবাক হয়ে যাই।"

চিকিৎসা পেশা হলেও ছবি তুলতে ভালোবাসেন অমৃতা চক্রবর্তী। আপাতত সে সব শিকেয়। গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসেন। এখন হচ্ছে না। কারণ, কোরোনার সঙ্গে যুদ্ধে বেশি করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তবে, সামান্য অবসর পেলেই ফিরছেন পরিবারের কাছেই। আরও ভালো করে বললে, আদৃতার কাছে তার মা ফিরছেন ৷ বেলেঘাটা ID-র বিশিষ্ট চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী।

কলকাতা, 10 মে: স্বামী-স্ত্রী এক পেশায় থাকলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয়। বস্তাপচা এমন ধারণার স্থান নেই তাঁদের জীবনে। ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তী ও ডাঃ মানস ভট্টাচার্য নিজেদের একে অপরের পরিপূরক বলতেই ভালোবাসেন। তাঁরা মনে করেন, কোরোনা যুদ্ধের মরিয়া লড়াইয়ে এই পার্টনারশিপ বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, হাসপাতালে দিনরাত এক করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যে চিকিৎসক, তিনি একজন দায়িত্বশীল, স্নেহময়ী মা-ও। কোরোনা-আবহে বেলেঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী যেন মাতৃদিবসের অনন্য প্রতিচ্ছবি ৷

বেলেঘাটা ID হাসপাতালে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডাক্তার অমৃতা চক্রবর্তী। নৈহাটির মেধাবী ছাত্রী চিকিৎসকের পেশাকে স্রেফ দশটা-পাঁচটার ডিউটি বলতে ভালোবাসেন না। তিনি বলেন, "অসুস্থ মানুষের মুখে সুস্থতার হাসি দেখতে ভালোবাসি আমি।" স্বভাবতই কোরোনা প্রকোপের এই দিনে দম ফেলার সময় নেই ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তীর। কার্যত নাওয়াখাওয়া ভুলে রোগীর সেবায় অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উঠতে হচ্ছে তাঁকে। এরই মধ্যে রয়েছে পরিবারের দায়িত্ব। অমৃতা চক্রবর্তী জানান, পেশা ও পরিবারে ভারসাম্য রক্ষার উৎসস্থল তাঁর স্বামী মানস ভট্টাচার্য এবং মেয়ে আদৃতা।

কোরোনা-আবহে রাজ্যের ব্যস্ততম বেলাঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী বলেন, "একই পেশা মানে ব্যক্তিত্বের সংঘাত। আমি কিন্তু বুঝিনি। বরং, প্লাস পয়েন্ট দেখতে পেয়েছি। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকলে সহমর্মিতার হাতটা এগিয়ে এসেছে আমার বেটার হাফের দিক থেকেই।"

এরপরই হাসিমুখে অমৃতা চক্রবর্তী জানান, "আমার যুদ্ধ জয়ের সিক্রেট এনার্জি কিন্তু মেয়ে আদৃতা। সন্তানের বড় হয়ে ওঠা দেখা একটা সুখকর অভিজ্ঞতা। সেই সন্তান যখন পরিণত হয়ে ওঠে তখন আরও ভালো লাগে। যা এই সময় আমি আমার মেয়ের মধ্যে দেখছি।"

গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপের আড়াল থেকে উঁকি দেয় গর্বিত মা। বেলাঘাটা ID হাসপাতালের ব্যস্ত চিকিৎসক বলেন, "যখন কোরোনা ভাইরাস ডালপালা ছড়াচ্ছে তখন অন্য সকলের মতো আমিও আতঙ্কিত হয়েছিলাম। এখনও আতঙ্ক কেটে গিয়েছে বলব না। সেই সময় ভেবেছিলাম মেয়েকে নৈহাটিতে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু, মেয়েই বলেছিল, এই লড়াই আমাদের সকলের। জয়-পরাজয়, মরি-বাঁচি, যা হবে একসঙ্গে মোকাবিলা করব। মা হিসেবে সন্তানের এই কথাগুলো আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। বলতে পারেন, ডাক্তার হিসেবে আমাকে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে আমার মেয়ে।"

যদিও, এখানেই দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না অমৃতা চক্রবর্তীর। বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি শয্যাশায়ী। বর্হিবিশ্বের বর্তমান অস্থিরতার কথা বোঝার ক্ষমতা নেই তাঁর। এমন একজন মানুষের শুশ্রুষার দায়িত্বও অমৃতা চক্রবর্তীর কাঁধে। এক্ষেত্রে তিনি ডাক্তার ও পুত্রবধূ। তাঁর কথায় "বাড়িতে ফিরে দূরত্ব বজায় রেখে সব কিছু করতে হয়। সংক্রমিত হলে ওঁকে বাঁচানো কঠিন হবে। একই কথা আমার বাবা-মা সম্পর্কেও বলা যায়। বয়স হয়েছে দু'জনেরই। সতর্ক থাকতে বলেছি। আগে নিয়মিত ফোনে কথা বলতাম। এখন কাজের চাপে সবসময় হয় না। তবে খবর রাখি, রাখতেই হয়।" চিন্তিত শোনায় বেলেঘাটা ID-র চিকিৎসকের গলা।

সব মিলিয়ে পারিবারিক ঝক্কি সামলে কোরোনার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম। কতটা চ্যালেঞ্জ? তাঁর মতে, "এইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার সুযোগ পাওয়া চিকিৎসক হিসেবে আনন্দের। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। গ্রাউন্ড জিরোতে দাড়িয়ে কাজ করছি। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে সমৃদ্ধ হচ্ছি।"

ডাক্তার অমৃতা চক্রবর্তী জানিয়ে দেন, "কোরোনা ভাইরাস নতুন নয়। এই ভাইরাস আগেও ছিল। ভোলবদলে নতুন শক্তিতে এসেছে। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ সামলাতে হচ্ছে। আপাতত নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি না পাওয়া গেলেও অচিরেই সেই সমস্যা মিটবে।"

তবে এতকিছুর পরেও সাধারণ মানুষের সচেতনার অভাব দেখে বিস্মিত ও হতাশ চিকিৎসক। তিনি বলেন, "হাসপাতালে আসার সময় পথে ঘাটে এখনও এত মানুষের ভিড়! অবাক হয়ে যাই।"

চিকিৎসা পেশা হলেও ছবি তুলতে ভালোবাসেন অমৃতা চক্রবর্তী। আপাতত সে সব শিকেয়। গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসেন। এখন হচ্ছে না। কারণ, কোরোনার সঙ্গে যুদ্ধে বেশি করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তবে, সামান্য অবসর পেলেই ফিরছেন পরিবারের কাছেই। আরও ভালো করে বললে, আদৃতার কাছে তার মা ফিরছেন ৷ বেলেঘাটা ID-র বিশিষ্ট চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.