কলকাতা, 18 অক্টোবর: দুর্গাপুজোয় মন্দিরে হামলা ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ ৷ তার আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে সীমান্তের এপারেও ৷ ঘৃণা এবং উস্কানিমূলক পোস্টে ছেয়ে গিয়েছে নেটমাধ্যম ৷ কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে এই অশান্তি যাতে বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে না পড়ে, এবার তারই প্রস্তুতি শুরু করে দিল নবান্ন ৷ বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে নিয়ে বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন সরকার ৷ তাই সাম্প্রদায়িক হিংসায় বাংলা যাতে কোনও ভাবেই উত্তপ্ত না হয়, তার জন্য কড়া হাতে প্রশাসনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৷
শারদীয়া উৎসবকে ঘিরে পড়শি রাজ্যে ঘটে যাওয়া হিংসার আঁচ সীমান্ত পেরিয়ে যাতে বাংলায় ঢুকে না পড়ে, তার জন্য বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে রাজ্য সরকার ৷ রাজ্যের শীর্ষস্তরের পুলিশকর্তাদের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা ৷ পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার, এসবি, অতিরিক্ত সিপি, সমস্ত পুলিশ সুপার, সব রেঞ্জের ডিআইজি ও আইজিপি, উত্তরবঙ্গের আইজি (আইবি), আঞ্চলিক আইজি, এডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), রেলের ডিজিপি-কে লিখিত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে এডিজি (আইবি)-র তরফে ৷ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এডিজি ইনটেলিজেন্স এবং সশস্ত্রবাহিনীকেও ৷ কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে, তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: Narendra Modi : বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে কেন মোদি নীরব, প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের কুণাল
নবান্নের তরফে চিঠি লিখে এডিজি ইন্টেলিজেন্স এবং ডিজি রেলকেও সর্তক করা হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনায় নেটমাধ্যম ঘৃণা এবং উস্কানিমূলক পোস্টে ভরে গিয়েছে ৷ তাতে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে ৷ বেশ কয়েকটি কট্টরপন্থী গোষ্ঠী উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছে প্রশাসন ৷ তাই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত হবে না ৷ কোনও রকম অশান্তির আঁচ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকেও নজর রয়েছে নবান্নর ৷
দুর্গাপুজো চলাকালীন সম্প্রতি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় একটি প্যান্ডেলে প্রতিমার পায়ের কাছে রাখা কোরানের একটি ছবি নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তা নিয়েই মুহূর্তের মধ্যে তেতে ওঠে পরিস্থিতি ৷ কোরানের অবমাননা হয়েছে বলে নেটমাধ্যেমে সরব হন হাজার হাজার মানুষ ৷ পুলিশ গিয়ে প্যান্ডেল থেকে কোরান সরিয়ে নিয়ে গেলেও, এরপরই একের পর এক পুজো প্যান্ডেলে হামলার ঘটনা সামনে আসতে থাকে ৷ যে প্যান্ডেল থেকে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই পুজো কমিটি যদিও দাবি করেছে, অশান্তি বাঁধানোর লক্ষ্যে কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই কোরানটিকে প্রতিমার পায়ের কাছে রেখে গিয়েছিল ৷
আরও পড়ুন: Bangladesh Violence : বাংলাদেশে পুজোমণ্ডপে হামলার নিন্দায় সরব বিপ্লব দেব
তবে তাতেও অশান্তি থামেনি ৷ বরং এরপর গত শুক্রবার নোয়াালিতে ইস্কনের মন্দিরে ঢুকে শয়ে শয়ে লোক হামলা চালায় বলে অভিযোগ সামনে আসে ৷ মন্দির চত্বরে দুই ভক্তকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগও ওঠে ৷ তাতেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে সরব হতে শুরু করেন এ রাজ্যের মানুষও ৷ বাংলাদেশ প্রশাসন যদিও দু’টি ঘটনাতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে ৷ সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় 4 হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ পরিকল্পিত ভাবেই অশান্তি বাঁধানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও ৷