ETV Bharat / city

COVID-19-র জেরে শিশুদের নতুন অসুখ MIS-C

এতদিন মনে করা হত ছোটোদের কিছু হয় না । ছোটোদের কিছু করে না COVID-19 । কিন্তু ছোটোদের সমস্যায় ফেলে COVID-19 এবং এই MIS-C খুব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে ।

author img

By

Published : Nov 1, 2020, 4:08 PM IST

kolkata
শিশুদের নতুন অসুখ MIS-C

কলকাতা, 1 নভেম্বর : শিশুদের ক্ষেত্রে COVID-19 এর সংক্রমণ সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না, বিষয়টি আর এমন নয় । বরং, COVID-19 এর জেরে শিশুদের ক্ষেত্রে নতুন এক অসুখ এখন চিকিৎসকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । নতুন এই অসুখের নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন (MIS-C) । কয়েক মাস ধরে কলকাতায়-ও এই অসুখে আক্রান্ত শিশুদের দেখা মিলছে । ইতিমধ্যেই এই অসুখে আক্রান্ত বিশ্বের সব থেকে কম বয়সি শিশুর-ও খোঁজ মিলেছে কলকাতায় । দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু না হলে, এই অসুখে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুও এড়ানো যাচ্ছে না বলে মত চিকিৎসকদের ।

MIS-C-এ আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা বলেন, "এই MIS-C অসুখ সাধারণত 2 থেকে 12 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে । এই অসুখ তুলনায় বেশি হচ্ছে ছেলেদের । MIS-C-এ আক্রান্ত একটি শিশুকে সম্প্রতি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে । 25 দিন বয়সের এই শিশুকে COVID-19-এ আক্রান্ত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল । এই শিশুর হার্ট ফেলিওর ছিল । এই শিশুকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল । এই শিশুটিই হয়ত বিশ্বের সব থেকে কম বয়সি শিশু যার ক্ষেত্রে এই MIS-C অসুখ হয়েছিল ।" তিনি আরও বলেন, "25 দিন ধরে লড়াই করে 50 দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে এই শিশুটি বাড়িতে ফিরতে পেরেছিল । এই কেসটি আমরা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য চেষ্টা করছি । এত কম বয়সে MIS-C-তে আক্রান্ত হয়েছে, এই ধরনের কেস অন্য আর কোথাও পাওয়া গিয়েছে, তা রিপোর্টেড হয়নি ।"এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন যে, "আমার মনে হয়, শিশুদের যে কোনও বয়সেই MIS-C হতে পারে । কিন্তু, সাধারণত 2 থেকে 12 বছর বয়স, এই গ্রুপের ক্ষেত্রেই এই অসুখ হচ্ছে ।" প্রসঙ্গত দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে এই শিশুর জন্ম হয়েছিল । কোনও সমস্যা ছিল না, সুস্থই ছিল এই শিশুটি । কিন্তু, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার 4 থেকে 5 দিন পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয় এই শিশুটি । এরপরে দুর্গাপুরে কমপক্ষে তিনটি নার্সিংহোমে ভরতি করানো হয় এই শিশুকে । কিন্তু, তার জ্বর কমছিল না । 11 দিনের জ্বর নিয়ে এই শিশুর বয়স যখন 25 দিন, তখন তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালে । ওই হাসপাতালে এই শিশুর চিকিৎসা করেন সুমিতা সাহা । তিনি বলেন, "আমাদের এখানে এই শিশুকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তাঁর হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল । এই শিশুটি অ্যানিমিক ছিল এবং তাঁর শরীরে ছিল অদ্ভুত রকমের র্যাশ । প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম, সাধারণ কোনও সংক্রমণ । কিন্তু এই শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে । তাঁর কিছু ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট অদ্ভুত রকমের পাওয়া যায় । ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে দেখা যায়, এই শিশুর হার্ট কাজ করছে প্রায় 30 শতাংশ । হার্টের চারিদিকে জল জমেছে ।" চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "সব কিছু মিলিয়ে বোঝা যায় COVID-19 এর কারণে এই শিশুর শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম হচ্ছে । প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে COVID-19-এর কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম কমন বিষয়, কিন্তু ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে এটা আনকমন ।" এরপর ওই শিশুর শ্বাসকষ্ট আরও বাড়তে থাকে । তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হয় । ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেওয়া হয় ওষুধ । তা সত্ত্বেও, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় । চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "একটা সময় শিশুটির হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দেয় । আমরা সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম । এর পরে ধীরে ধীরে ওষুধগুলি কাজ করতে শুরু করে । পাঁচ দিনের মাথায় ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট থেকে বাইরে আনা হয় এই শিশুকে ।" এই চিকিৎসক বলেন, "আমরা মনে করেছিলাম এই শিশুটি প্রায় ভালো হয়ে গিয়েছে । কিন্তু আবার 2 - 3 দিন পর থেকে এই শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । আবার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে বোঝা যায়, এই শিশুর হার্ট ফেলিওরের দিকে এগোচ্ছে । এই শিশুকে আবার ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হয় । এই শিশুর কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় ।" তিনি বলেন, "শেষ পর্যন্ত এই শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় । আমাদের এই হাসপাতালে আসার 25 দিনের মাথায় এই শিশুর বয়স যখন 50 দিন, সেদিন এই শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় । এই শিশুটি MIS-C-তে আক্রান্ত হয়েছিল ।" এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "মা-বাবাদের জন্য বলব, ছোটোদের তেমন কিছু হয় না বলে তাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন না । যে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, সে সব মেনে চলুন । শিশুদের নিয়ে ভিড়ের স্থানে যাবেন না । শিশুদের মাস্ক পরাতে শেখান, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন । যদি দেখা যায়, জ্বর হয়েছে বা COVID-19-এ সংক্রমিত হয়েছে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন ।" তিনি বলেন, "এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে ছোটোরা সুস্থ হয়ে উঠছে ৷ এরপরে এক মাস পর্যন্ত এই MIS-C-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে । যার জন্য এমারজেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ।"

চিকিৎসকদের বক্তব্য শুনুন ভিডিয়োতে

কীভাবে বোঝা যেতে পারে কোনও শিশুর ক্ষেত্রে MIS-C দেখা দিচ্ছে কি না ? চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "যার ক্ষেত্রে জ্বর ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, সেই শিশু হয়ত ভালো আছে । কিন্তু জ্বর কমে গেল আবার দুই-তিন সপ্তাহ পরে জ্বর এলে, এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন । একসঙ্গে কাশি, পাতলা পায়খানা, শরীরে ব়্যাশ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, এসব উপসর্গ দেখা দিলে ভাইরাল ইনফেকশন বলে সময় নষ্ট করবেন না, নিজেরা ওষুধ খাওয়াবেন না । এ ক্ষেত্রে দ্রুত এমারজেন্সিতে নিয়ে যেতে হবে । এর পাশাপাশি অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে, খিঁচুনিও হতে পারে ।" তিনি বলেন, "গত এক মাসের মধ্যে যদি আপনার বাড়িতে কারও COVID-19 হয়ে থাকে এবং তখন হয়ত বাড়িতে থাকা শিশুর টেস্ট হয়নি কিংবা জ্বর আসেনি, তাহলে এই হিস্ট্রির কথা চিকিৎসককে অবশ্যই বলুন ।"

এই MIS-C অসুখ কলকাতায়-ও বেশ দেখা যাচ্ছে । কিন্তু, এই অসুখ কোথায়, কতটা হয়েছে, এটা এখনই বলা সম্ভব নয় । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "কারণ, MIS-C, এই অসুখটা নতুন । COVID-19 নতুন অসুখ, শিশুদের COVID-19 হওয়াও নতুন । আর, এই MIS-C আরও নতুন এক অসুখ । আমরা সকলেই এই MIS-C-এর বিষয়ে প্রতিদিন জানছি, শিখছি । WHO গাইডলাইন দিয়েছে। বিভিন্ন মেডিকেল অর্গানাইজ়েশনের তরফে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা হচ্ছে । কিন্তু, এই অসুখ কতটা কমন, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয় ।" তিনি বলেন, "আমরা নিয়মিত এই MIS-C এ আক্রান্ত শিশুদের দেখতে পাচ্ছি । আরও দুই-তিন মাস পরে হয়ত বলতে পারব এই অসুখ কতটা কমন, আমাদের দেশে বা কলকাতায় এই সংখ্যাটা বেশি না কম ।" এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "তবে, এই MIS-C অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে । এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে MIS-C-এ আক্রান্ত শিশুকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয় । MIS-C-এর জন্য বহু ক্ষেত্রে মৃত্যুও এড়ানো যাচ্ছে না । অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ।" তিনি বলেন, "এতদিন মনে করা হত ছোটোদের কিছু হয় না, ছোটোদের কিছু করে না COVID-19 । কিন্তু ছোটোদের সমস্যায় ফেলে COVID-19 এবং এই MIS-C খুব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে ।" COVID-19 নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার পরে শরীরে ইনফ্লামেটরি রিঅ্যাকশন হচ্ছে । সেই কারণে MIS-C-এর প্রধান চিকিৎসা হল ইনফ্লামেটরি রিঅ্যাকশন কমানোর জন্য ইমিউনোগ্লোবিনের ব্যবহার । অনেক ক্ষেত্রে স্টেরয়েডও ব্যবহার করা হয় । তবে, রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা দ্রুত শুরু করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রোগনির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে অবশ্যই শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "MIS-C অর্থাৎ,মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লয়ামেটরি সিনড্রোম অফ চিলড্রেন, এই অসুখটি নতুন । গত দুই-তিন মাস ধরে এই অসুখ আমরা দেখছি । এই অসুখের বিষয়ে শুনছি এবং শিখছি । COVID-19-এর সংক্রমণের পরে শিশুদের ক্ষেত্রে হয় এই অসুখ ।" তিনি বলেন, "এই MIS-C নির্ণয়ের প্রধান ক্রাইটেরিয়াই হচ্ছে, শিশুকে COVID-19-এ সংক্রমিত হতে হবে । হয়ত, COVID-19-এর সংক্রমণ আগে হয়েছে তার পরে নেগেটিভ হয়ে গিয়েছে, তার পরে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে । অনেক সময় COVID-19-এর সংক্রমণের সময়-ও হচ্ছে ।" এই চিকিৎসক বলেন, "শিশুর জ্বর থাকতে হবে এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অর্গ‍্যান সিস্টেমকে ইনভলভ করতে হবে । এই কথাটির মানে মাল্টিসিস্টেম । বিভিন্ন অর্গ‍্যান মানে লাঙস ইনভলভ করলে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ । অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা হয়, হার্ট ইনফেকশন করে অর্থাৎ, হার্টকে আক্রান্ত করে । এ ক্ষেত্রে হার্টের কাজ কমে যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে । এর সঙ্গে কোনও কোনও শিশুর নার্ভাস সিস্টেম ইনভলভ করতে পারে, ব্রেন ইনভলভ করে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে । কোনও কোনও শিশুর স্কিন ইনভলভ হয়, রর্যাশ হয় । এই অসুখটি যেহেতু যে কোনও সিস্টেমকে ইনভলভ করতে পারে, সেই জন্য MISC বলা হয় ।" চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "প্রধানত শিশুদের ক্ষেত্রে এই MIS-C দেখা যাচ্ছে । MIS-C-তে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কোনও দেশে 19 বছর বয়স পর্যন্ত, কোনও কোনও দেশে 21 বছর বয়স পর্যন্ত ধরা হয়েছে । অর্থাৎ, ছোটো শিশুদের থেকে শুরু করে 21 বছর বয়সি পর্যন্তদের ক্ষেত্রে এই MIS-C অসুখ হতে পারে । COVID-19 একটি রোগ, যেখানে একটি সিস্টেম বা অর্গ‍্যান ইনভলভ হয়েছে । সেই জন্যই এই অসুখের নাম MISC ।"

MIS-C-র বিষয়ে পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "শিশুদের মধ্যে COVID-19 এর সংক্রমণ সাধারণত উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত থাকে । শিশুদের মধ্যে COVID-19-এর সংক্রমণ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । কিন্তু, গত ছয় মাস ধরে আমরা নতুন একটি অসুখের সন্ধান পেয়েছি । এই অসুখটি COVID-19-এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত । এই অসুখটির নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল‍্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন অ্যাসোসিয়েটেড উইথ COVID-19 কিংবা, সংক্ষেপে MIS-C ।" এই অসুখে কী হচ্ছে ? এই চিকিৎসক বলেন, "যারা একবার বিশেষত ছোটোরা পাঁচ বছরের কম বা বেশি বয়সের শিশুরা যারা আগে কখনও COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছিল উপসর্গ যুক্ত কিংবা উপসর্গহীন ছিল, তাদের শরীরে এই অসুখের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বা তাদের ক্ষেত্রে এই অসুখ হচ্ছে । সাধারণত COVID-19 সংক্রমণের চার থেকে 12 সপ্তাহের মধ্যে এই অসুখ হতে দেখা যাচ্ছে ।" COVID-19-এর বিরুদ্ধে শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, সেই ইমিউনিটির বিরুদ্ধে হচ্ছে এই অসুখ । এটা একটি ইমিউনোলজিকাল ডিসঅর্ডার ।" প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে, চোখ-ঠোঁট লাল হয়ে যাচ্ছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে র‍্যাশ বের হচ্ছে । এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এই অসুখ হৃৎপিণ্ডকে আক্রান্ত করছে । ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । যার জেরে শেষ পর্যন্ত হার্ট ফেলিওর হচ্ছে । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "গত তিন-চার মাস ধরে শিশুদের মধ্যে এই MIS-C অসুখের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে । এই অসুখে আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুকেই ICU- তে রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে ।"

ঠিকঠাক সময় যদি এই MIS-C নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়, তা হলে এই অসুখে আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । কিন্তু, রোগনির্ণয়ে দেরি হয়ে গেলে হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিগুলি আরও দুর্বল হয়ে যায়, হার্ট ফেলিওর হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা খুব কম । এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "MIS-C, এই অসুখটি COVID-19-এর অ্যাসোসিয়েট অসুখ বলে মনে হচ্ছে । COVID-19-এর বিরুদ্ধে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, এই MIS-C সেই ইমিউনিটি রিলেটেড ইমিউনোলজিকাল ডিসঅর্ডার ।"

কলকাতা, 1 নভেম্বর : শিশুদের ক্ষেত্রে COVID-19 এর সংক্রমণ সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না, বিষয়টি আর এমন নয় । বরং, COVID-19 এর জেরে শিশুদের ক্ষেত্রে নতুন এক অসুখ এখন চিকিৎসকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । নতুন এই অসুখের নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন (MIS-C) । কয়েক মাস ধরে কলকাতায়-ও এই অসুখে আক্রান্ত শিশুদের দেখা মিলছে । ইতিমধ্যেই এই অসুখে আক্রান্ত বিশ্বের সব থেকে কম বয়সি শিশুর-ও খোঁজ মিলেছে কলকাতায় । দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু না হলে, এই অসুখে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুও এড়ানো যাচ্ছে না বলে মত চিকিৎসকদের ।

MIS-C-এ আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা বলেন, "এই MIS-C অসুখ সাধারণত 2 থেকে 12 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে । এই অসুখ তুলনায় বেশি হচ্ছে ছেলেদের । MIS-C-এ আক্রান্ত একটি শিশুকে সম্প্রতি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে । 25 দিন বয়সের এই শিশুকে COVID-19-এ আক্রান্ত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল । এই শিশুর হার্ট ফেলিওর ছিল । এই শিশুকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল । এই শিশুটিই হয়ত বিশ্বের সব থেকে কম বয়সি শিশু যার ক্ষেত্রে এই MIS-C অসুখ হয়েছিল ।" তিনি আরও বলেন, "25 দিন ধরে লড়াই করে 50 দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে এই শিশুটি বাড়িতে ফিরতে পেরেছিল । এই কেসটি আমরা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য চেষ্টা করছি । এত কম বয়সে MIS-C-তে আক্রান্ত হয়েছে, এই ধরনের কেস অন্য আর কোথাও পাওয়া গিয়েছে, তা রিপোর্টেড হয়নি ।"এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন যে, "আমার মনে হয়, শিশুদের যে কোনও বয়সেই MIS-C হতে পারে । কিন্তু, সাধারণত 2 থেকে 12 বছর বয়স, এই গ্রুপের ক্ষেত্রেই এই অসুখ হচ্ছে ।" প্রসঙ্গত দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে এই শিশুর জন্ম হয়েছিল । কোনও সমস্যা ছিল না, সুস্থই ছিল এই শিশুটি । কিন্তু, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার 4 থেকে 5 দিন পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয় এই শিশুটি । এরপরে দুর্গাপুরে কমপক্ষে তিনটি নার্সিংহোমে ভরতি করানো হয় এই শিশুকে । কিন্তু, তার জ্বর কমছিল না । 11 দিনের জ্বর নিয়ে এই শিশুর বয়স যখন 25 দিন, তখন তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালে । ওই হাসপাতালে এই শিশুর চিকিৎসা করেন সুমিতা সাহা । তিনি বলেন, "আমাদের এখানে এই শিশুকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তাঁর হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল । এই শিশুটি অ্যানিমিক ছিল এবং তাঁর শরীরে ছিল অদ্ভুত রকমের র্যাশ । প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম, সাধারণ কোনও সংক্রমণ । কিন্তু এই শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে । তাঁর কিছু ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট অদ্ভুত রকমের পাওয়া যায় । ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে দেখা যায়, এই শিশুর হার্ট কাজ করছে প্রায় 30 শতাংশ । হার্টের চারিদিকে জল জমেছে ।" চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "সব কিছু মিলিয়ে বোঝা যায় COVID-19 এর কারণে এই শিশুর শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম হচ্ছে । প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে COVID-19-এর কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম কমন বিষয়, কিন্তু ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে এটা আনকমন ।" এরপর ওই শিশুর শ্বাসকষ্ট আরও বাড়তে থাকে । তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হয় । ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেওয়া হয় ওষুধ । তা সত্ত্বেও, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় । চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "একটা সময় শিশুটির হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দেয় । আমরা সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম । এর পরে ধীরে ধীরে ওষুধগুলি কাজ করতে শুরু করে । পাঁচ দিনের মাথায় ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট থেকে বাইরে আনা হয় এই শিশুকে ।" এই চিকিৎসক বলেন, "আমরা মনে করেছিলাম এই শিশুটি প্রায় ভালো হয়ে গিয়েছে । কিন্তু আবার 2 - 3 দিন পর থেকে এই শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । আবার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে বোঝা যায়, এই শিশুর হার্ট ফেলিওরের দিকে এগোচ্ছে । এই শিশুকে আবার ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হয় । এই শিশুর কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় ।" তিনি বলেন, "শেষ পর্যন্ত এই শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় । আমাদের এই হাসপাতালে আসার 25 দিনের মাথায় এই শিশুর বয়স যখন 50 দিন, সেদিন এই শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় । এই শিশুটি MIS-C-তে আক্রান্ত হয়েছিল ।" এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "মা-বাবাদের জন্য বলব, ছোটোদের তেমন কিছু হয় না বলে তাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন না । যে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, সে সব মেনে চলুন । শিশুদের নিয়ে ভিড়ের স্থানে যাবেন না । শিশুদের মাস্ক পরাতে শেখান, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন । যদি দেখা যায়, জ্বর হয়েছে বা COVID-19-এ সংক্রমিত হয়েছে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন ।" তিনি বলেন, "এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে ছোটোরা সুস্থ হয়ে উঠছে ৷ এরপরে এক মাস পর্যন্ত এই MIS-C-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে । যার জন্য এমারজেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ।"

চিকিৎসকদের বক্তব্য শুনুন ভিডিয়োতে

কীভাবে বোঝা যেতে পারে কোনও শিশুর ক্ষেত্রে MIS-C দেখা দিচ্ছে কি না ? চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "যার ক্ষেত্রে জ্বর ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, সেই শিশু হয়ত ভালো আছে । কিন্তু জ্বর কমে গেল আবার দুই-তিন সপ্তাহ পরে জ্বর এলে, এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন । একসঙ্গে কাশি, পাতলা পায়খানা, শরীরে ব়্যাশ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, এসব উপসর্গ দেখা দিলে ভাইরাল ইনফেকশন বলে সময় নষ্ট করবেন না, নিজেরা ওষুধ খাওয়াবেন না । এ ক্ষেত্রে দ্রুত এমারজেন্সিতে নিয়ে যেতে হবে । এর পাশাপাশি অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে, খিঁচুনিও হতে পারে ।" তিনি বলেন, "গত এক মাসের মধ্যে যদি আপনার বাড়িতে কারও COVID-19 হয়ে থাকে এবং তখন হয়ত বাড়িতে থাকা শিশুর টেস্ট হয়নি কিংবা জ্বর আসেনি, তাহলে এই হিস্ট্রির কথা চিকিৎসককে অবশ্যই বলুন ।"

এই MIS-C অসুখ কলকাতায়-ও বেশ দেখা যাচ্ছে । কিন্তু, এই অসুখ কোথায়, কতটা হয়েছে, এটা এখনই বলা সম্ভব নয় । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "কারণ, MIS-C, এই অসুখটা নতুন । COVID-19 নতুন অসুখ, শিশুদের COVID-19 হওয়াও নতুন । আর, এই MIS-C আরও নতুন এক অসুখ । আমরা সকলেই এই MIS-C-এর বিষয়ে প্রতিদিন জানছি, শিখছি । WHO গাইডলাইন দিয়েছে। বিভিন্ন মেডিকেল অর্গানাইজ়েশনের তরফে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা হচ্ছে । কিন্তু, এই অসুখ কতটা কমন, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয় ।" তিনি বলেন, "আমরা নিয়মিত এই MIS-C এ আক্রান্ত শিশুদের দেখতে পাচ্ছি । আরও দুই-তিন মাস পরে হয়ত বলতে পারব এই অসুখ কতটা কমন, আমাদের দেশে বা কলকাতায় এই সংখ্যাটা বেশি না কম ।" এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "তবে, এই MIS-C অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে । এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে MIS-C-এ আক্রান্ত শিশুকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয় । MIS-C-এর জন্য বহু ক্ষেত্রে মৃত্যুও এড়ানো যাচ্ছে না । অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ।" তিনি বলেন, "এতদিন মনে করা হত ছোটোদের কিছু হয় না, ছোটোদের কিছু করে না COVID-19 । কিন্তু ছোটোদের সমস্যায় ফেলে COVID-19 এবং এই MIS-C খুব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে ।" COVID-19 নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার পরে শরীরে ইনফ্লামেটরি রিঅ্যাকশন হচ্ছে । সেই কারণে MIS-C-এর প্রধান চিকিৎসা হল ইনফ্লামেটরি রিঅ্যাকশন কমানোর জন্য ইমিউনোগ্লোবিনের ব্যবহার । অনেক ক্ষেত্রে স্টেরয়েডও ব্যবহার করা হয় । তবে, রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা দ্রুত শুরু করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রোগনির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে অবশ্যই শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "MIS-C অর্থাৎ,মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লয়ামেটরি সিনড্রোম অফ চিলড্রেন, এই অসুখটি নতুন । গত দুই-তিন মাস ধরে এই অসুখ আমরা দেখছি । এই অসুখের বিষয়ে শুনছি এবং শিখছি । COVID-19-এর সংক্রমণের পরে শিশুদের ক্ষেত্রে হয় এই অসুখ ।" তিনি বলেন, "এই MIS-C নির্ণয়ের প্রধান ক্রাইটেরিয়াই হচ্ছে, শিশুকে COVID-19-এ সংক্রমিত হতে হবে । হয়ত, COVID-19-এর সংক্রমণ আগে হয়েছে তার পরে নেগেটিভ হয়ে গিয়েছে, তার পরে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে । অনেক সময় COVID-19-এর সংক্রমণের সময়-ও হচ্ছে ।" এই চিকিৎসক বলেন, "শিশুর জ্বর থাকতে হবে এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অর্গ‍্যান সিস্টেমকে ইনভলভ করতে হবে । এই কথাটির মানে মাল্টিসিস্টেম । বিভিন্ন অর্গ‍্যান মানে লাঙস ইনভলভ করলে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ । অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা হয়, হার্ট ইনফেকশন করে অর্থাৎ, হার্টকে আক্রান্ত করে । এ ক্ষেত্রে হার্টের কাজ কমে যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে । এর সঙ্গে কোনও কোনও শিশুর নার্ভাস সিস্টেম ইনভলভ করতে পারে, ব্রেন ইনভলভ করে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে । কোনও কোনও শিশুর স্কিন ইনভলভ হয়, রর্যাশ হয় । এই অসুখটি যেহেতু যে কোনও সিস্টেমকে ইনভলভ করতে পারে, সেই জন্য MISC বলা হয় ।" চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "প্রধানত শিশুদের ক্ষেত্রে এই MIS-C দেখা যাচ্ছে । MIS-C-তে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কোনও দেশে 19 বছর বয়স পর্যন্ত, কোনও কোনও দেশে 21 বছর বয়স পর্যন্ত ধরা হয়েছে । অর্থাৎ, ছোটো শিশুদের থেকে শুরু করে 21 বছর বয়সি পর্যন্তদের ক্ষেত্রে এই MIS-C অসুখ হতে পারে । COVID-19 একটি রোগ, যেখানে একটি সিস্টেম বা অর্গ‍্যান ইনভলভ হয়েছে । সেই জন্যই এই অসুখের নাম MISC ।"

MIS-C-র বিষয়ে পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "শিশুদের মধ্যে COVID-19 এর সংক্রমণ সাধারণত উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত থাকে । শিশুদের মধ্যে COVID-19-এর সংক্রমণ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । কিন্তু, গত ছয় মাস ধরে আমরা নতুন একটি অসুখের সন্ধান পেয়েছি । এই অসুখটি COVID-19-এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত । এই অসুখটির নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল‍্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন অ্যাসোসিয়েটেড উইথ COVID-19 কিংবা, সংক্ষেপে MIS-C ।" এই অসুখে কী হচ্ছে ? এই চিকিৎসক বলেন, "যারা একবার বিশেষত ছোটোরা পাঁচ বছরের কম বা বেশি বয়সের শিশুরা যারা আগে কখনও COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছিল উপসর্গ যুক্ত কিংবা উপসর্গহীন ছিল, তাদের শরীরে এই অসুখের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বা তাদের ক্ষেত্রে এই অসুখ হচ্ছে । সাধারণত COVID-19 সংক্রমণের চার থেকে 12 সপ্তাহের মধ্যে এই অসুখ হতে দেখা যাচ্ছে ।" COVID-19-এর বিরুদ্ধে শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, সেই ইমিউনিটির বিরুদ্ধে হচ্ছে এই অসুখ । এটা একটি ইমিউনোলজিকাল ডিসঅর্ডার ।" প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে, চোখ-ঠোঁট লাল হয়ে যাচ্ছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে র‍্যাশ বের হচ্ছে । এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এই অসুখ হৃৎপিণ্ডকে আক্রান্ত করছে । ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । যার জেরে শেষ পর্যন্ত হার্ট ফেলিওর হচ্ছে । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "গত তিন-চার মাস ধরে শিশুদের মধ্যে এই MIS-C অসুখের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে । এই অসুখে আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুকেই ICU- তে রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে ।"

ঠিকঠাক সময় যদি এই MIS-C নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়, তা হলে এই অসুখে আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । কিন্তু, রোগনির্ণয়ে দেরি হয়ে গেলে হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিগুলি আরও দুর্বল হয়ে যায়, হার্ট ফেলিওর হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা খুব কম । এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "MIS-C, এই অসুখটি COVID-19-এর অ্যাসোসিয়েট অসুখ বলে মনে হচ্ছে । COVID-19-এর বিরুদ্ধে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, এই MIS-C সেই ইমিউনিটি রিলেটেড ইমিউনোলজিকাল ডিসঅর্ডার ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.