কলকাতা, 12 জুলাই : শহর কলকাতার আশপাশেই ঘাঁটি গেড়েছে জেএমবি (JMB) জঙ্গিরা ! পুলিশের নজর এড়িয়ে আত্মগোপন করে রয়েছে তারা ৷ রবিবার কলকাতায় ধৃত তিন জেএমবি জঙ্গি নজিউর রহমান, সাবিরউদ্দিন এবং রবিউল ইসলামকে জেরা করে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ যা শুনে ঘুম ছুটে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (STF) সদস্যদের ৷ তাঁদের প্রশ্নের মুখে ধৃতরা জানিয়েছে, শহরতলির মধ্যেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে জেএমবি-র বাকি সদস্যরা ৷ আপাতত তাদের খুঁজে বের করতেই কোমর বেঁধেছে লালবাজার ৷ একইসঙ্গে, ধৃত তিন জঙ্গির অন্যান্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা ৷ 2014 সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে (Khagragarh blast) নাম জড়ায় বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র ৷ ধৃত তিন জঙ্গিরও তেমন কোনও নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা করছে এসটিএফ ৷
আরও পড়ুন : খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত কওসরকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল জেএমবি জঙ্গিদের ?
লালবাজার সূত্রে খবর, কলকাতা শহরকে ধীরে ধীরে হাতের তালুর মতো চেনাই ছিল ধৃত তিন জঙ্গির প্রাথমিক ‘মিশন’ ৷ গত 1 জুলাই বেহালার হরিদেবপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল তারা ৷ এই কাজে তাদের সাহায্য করেছিল অন্য এক জেএমবি জঙ্গি ৷ বর্তমানে সে বেপাত্তা ৷ ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, পলাতক সেই জঙ্গির নাম সেলিম মুন্সি ৷ সূত্রের খবর, নজিউর ও তার দুই সঙ্গী এসটিএফের জালে ধরা পড়তেই কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দেয় সেলিম মুন্সি ও তার দলবল ৷ তাদের পাকড়াও করতে হাওড়া, শিয়ালদা এবং কলকাতা স্টেশনের উপর বাড়তি নজরদারি শুরু করা হয়েছে ৷ গোয়েন্দাদের অনুমান, রেলপথ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে গিয়ে সেখান থেকে ফের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেলিমের ৷ তাকে আটকাতে রেলপথের পাশাপাশি সড়কেও নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ ৷
এদিকে, ধৃত তিন জঙ্গির কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং পেনড্রাইভ উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ সেইসব জিনিসপত্র ঘেঁটে তা থেকে বেশ কিছু নাম পাওয়া গিয়েছে ৷ সেই নামগুলি চিন্তা আরও বাড়িয়েছে কলকাতা পুলিশের ৷ কারণ, নামের সেই তালিকায় রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট আধিকারিক ৷
আরও পড়ুন : কলকাতা পুলিশের জালে 3 সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি
এখনও পর্যন্ত পুলিশের তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে, তাতে হাতে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ গোয়েন্দারা মনে করছেন, খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত অন্যতম অভিযুক্ত কওসর আলিকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের ৷ এর জন্য কলকাতা শহরকে ভাল করে চেনা দরকার ছিল তাদের ৷ আর প্রয়োজন ছিল একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই ৷ এই কারণে প্রথমেই বেহালায় একটা বাড়ি ভাড়া নেয় তারা ৷ পরবর্তী উদ্দেশ্যে ছিল, এলাকায় এবং ক্রমে গোটা শহরে নিজেদের নেটওয়ার্ক তৈরি করা ৷ তারপর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার এবং বারুইপুর সংশোধনাগার-সহ শহরের সংরক্ষিত বিভিন্ন এলাকাতেও নিজেদের যোগাযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের ৷ যাতে সময়, সুযোগ পেলেই কওসর আলিকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় ৷