কলকাতা, 9 মে : রবীন্দ্রজয়ন্তীর মঞ্চ থেকেও নোবেল চুরি নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সোমবার রবীন্দ্রসদনে রাজ্য সরকার আয়োজিত রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata talks about Tagore's Nobel Prize Theft on Rabindra Jayanti)। সেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন তিনি । এরপর কবি প্রণাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, "এখনও আমার দুঃখ হয় । তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) নোবেল পুরস্কারটা আজও উদ্ধার হয়নি । দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে । এটা বামফ্রন্ট আমলের ঘটনা । তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে । সিবিআই সম্ভবত তদন্তটা ক্লোজ করে দিয়েছে । সমস্ত প্রমাণ আমি জানি না আদৌ আছে কি না । কিন্তু এটা আমাদের বড় অসম্মানের । বড় গায়ে লাগে । এত বড় একটা জিনিস সর্বপ্রথম আমরা পেলাম আর আমাদের কাছ থেকে সেটা কেউ নিয়ে নিল, কেউ তুলে নিল, কেউ হারিয়ে দিল । এটা অসম্মানের ৷ তবে একটা নোবেল পুরস্কার চলে গেলে রবীন্দ্রনাথকে ভোলা যায় না । নোবেল পুরস্কারটা উনি আমাদের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছেন ।"
আসলে 161তম রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী দিনভর আলোচনায় থেকেছে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি প্রসঙ্গ (Mamata Banerjee at Rabindra Jayanti Programme) । এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রেও নোবেল চুরির প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং অন্য একাধিক তৃণমূল নেতাও মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে নোবেল চুরি রহস্যের উন্মোচন করতে না পারার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে কাঠগড়ায় তুলেছেন । তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য সেভাবে না করলেও, তাঁর গলায় রবীন্দ্রনাথের নোবেল না উদ্ধার করতে পারার আক্ষেপ ধরা পড়েছে (Mamata on Tagore's Nobel Prize Theft)।
প্রসঙ্গত, 2004 সালের 25 মার্চ সকালে জানা যায়, রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে নোবেল পদক-সহ মোট 50টি মূল্যবান জিনিস চুরি গিয়েছে । ঘটনার ছ’দিনের মাথাতেই চুরির তদন্তের দায়িত্ব চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে । প্রথম দফায় 2007 সালের অগস্টে তদন্ত গুটিয়ে নেয় সিবিআই । তার পরে আবার নতুন সূত্র মিলেছে বলে জানিয়ে 2008-এর সেপ্টেম্বরে আদালতে পূর্ণ তদন্তের আবেদন জানায় তাঁরা । লাভ হয়নি ৷ কারণ তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি, এই যুক্তিতে 2009-এর অগস্টে ফের সিবিআই তদন্ত বন্ধ রাখার আবেদন করে । 2010-এর 5 অগস্ট আদালত সিবিআইকে সেই অনুমতি দেয় । সিবিআই জানিয়েছিল, এ ব্যাপারে আবার নতুন করে কোনও সূত্র মিললে তাঁরা ফের তদন্ত শুরু করতে পারে ।
আরও পড়ুন : Tagore's Nobel Prize theft: রবীন্দ্রজয়ন্তীতে নোবেল চুরি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের একটা বড় অংশ জুড়ে নোবেল চুরির বিষয় থাকলেও রবীন্দ্র সৃষ্টির গভীরে ডুবে যেতে দেখা যায় তাঁকে । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "রবি ঠাকুর সাগরের মত । তাঁর গভীরতা-পরিধি মাপা যায় না । তিনি বিশ্বকে আলোকিত করেছেন । শুষ্ক মরুভূমিতে উৎসারিত আলোর ঝর্ণা এনে দিয়েছেন । তিনি না থাকলে বাংলায় নবজাগরণ সম্পূর্ণ হত না ।" মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "বিশ্বকবি আপামর বাঙালির হৃদয়ে মুক্তোর মালার মত রয়েছেন সর্বদা । সকাল থেকে রাত সবসময় বাঙালির জীবনে জড়িয়ে রয়েছেন রবি ঠাকুর ।" নতুন প্রজন্মের প্রতি মমতার বার্তা, রবি ঠাকুরকে পাথেয় করে চলার ।