কলকাতা, 26 মে : রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের সংঘাত নতুন মোড় নিল বৃহস্পতিবার । এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে আর রাজ্যপাল থাকবেন না ৷ এবার আচার্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Cabinet Approves CM as Chancellor of all Universities in Bengal) । এদিন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bengal Education Minister Bratya Basu)। এদিন অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন আইনের সংশোধন । শীঘ্রই রাজ্য বিধানসভায় এ প্রসঙ্গে বিল আনা হবে ।
কয়েকদিন আগেই এই বিষয় নিয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী । এ প্রসঙ্গে সে সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল টুইটার, ফেসবুক নিয়েই মেতে আছেন । এরকম একজন আচার্য থাকলে সে রাজ্যের শিক্ষার অবস্থা ভয়াবহ হওয়ারই কথা । আমাদের ভাগ্য ভালো তা সত্ত্বেও শিক্ষার কাজ আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি । রাজ্যপাল শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেন না । সারাক্ষণ বেআইনি কাজ করেন । শিক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখার অভিযোগও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ।’’
প্রসঙ্গত, 2010 সালে এই সুপারিশ করেছিল পুঞ্ছি কমিশন । রাজনাথ সিং ছিলেন সেই কমিশনে । ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ু ও কেরল এই বিধি গ্রহণ করেছে । 2007 সালে মদনমোহন পুঞ্ছির নেতৃত্বে কমিটি গঠিত হয় । 2010 সালে কমিটি রিপোর্ট দেয় । কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা-সহ একাধিক বিষয়ে সুপারিশ করে কমিটি । একগুচ্ছ সুপারিশের মধ্যে ছিল এই সুপারিশটিও ।
ফলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গ হবে তৃতীয় রাজ্য, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আচার্য হিসাবে ভূমিকা পালন করবেন । এতদূর এসে এখানে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি আলোচনার, তা হল মন্ত্রিসভায় তো এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হল । এবার রাজ্য বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল আনা হবে । তবে এখানেও একটা সমস্যা রয়েছে বিলটি রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়ার পর, তা পাঠানো হবে রাজ্যপালের কাছেই । এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল যদি এই বিলে অনুমোদন না দেন সেক্ষেত্রে অর্ডিনান্স নিয়ে আসা হবে । সেক্ষেত্রে ছ'মাসের মধ্যে বিধানসভা মঞ্জুরি দিলে, তা আইনে রূপ পেতে কোনও বাধা থাকবে না ।
এদিন মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বেশি শিক্ষিত আর কে আছে, নিরলস সাহিত্য-সাধনার জন্য পুরস্কৃত করা হয় ।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সময় বেশি, তবে কাজ কম পড়ে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমি দফতরের মন্ত্রী, উদ্বাস্তু দফতরের মন্ত্রী, সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী । শিক্ষা দফতরের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই মানুষ বুঝে গিয়েছেন সেখানে 1500 কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে । এই অবস্থায় এত কিছুর পাশাপাশি তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হয়ে বসেন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা । এই সিদ্ধান্ত বাংলা সামাজিক জীবন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে কলুষিত করা ছাড়া অন্যকিছু হবে বলে আমি মনে করি না ।’’
অন্যদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের একমাত্র মালিকানা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে । তিনি শুরু, তিনি শেষ । তাই যে পদটা এতদিন রাজ্যপালের জন্য ছাড়া ছিল তার অধিকার যে মুখ্যমন্ত্রী নিতে চাইবেন, এটাই তো স্বাভাবিক । নজিরবিহীনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাতে বলতেই হয় মুখ্যমন্ত্রীর শাসক দলের বাইরে কোনও কিছু আগামিদিনে থাকবে না ।’’
আরও পড়ুন : Malda Girl meets Mamata : কালীঘাটে মমতার সাক্ষাৎ পেয়ে স্বপ্নপূরণ সায়ন্তিকার