কলকাতা, 11 জুন : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) ৷ আগামী 14 জুন তিনি তিনদিনের সফরে রাজধানীতে পৌঁছবেন ৷ বিরোধীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতেই তাঁর এই সফর বলে জানা গিয়েছে (Mamata Banerjee to visit New Delhi before Presidential Election) ৷
দিন কয়েক আগেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) ৷ কোনও পক্ষই এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি ৷ শাসক ও বিরোধী, উভয়পক্ষই এই নিয়ে অঙ্ক কষছে ৷ রাজনৈতিক মহলের দাবি, বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে, তার উপর নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভাগ্য । এখনও পর্যন্ত সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব বলছে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে গেরুয়া শিবির এবার আর নিজেদের পছন্দমতো কাউকে জিতিয়ে রাইসিনা হিলসে পাঠাতে পারবে না ।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলেছে যে বিরোধীরা আদৌ ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে কি ? এই প্রশ্নের উত্তর মমতার এই তিনদিনের সফরেই পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ বিশেষ করে এক্ষেত্রে 15 জুন দিনটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ৷ ওই দিন তিনি দিল্লির কন্সটিটিউশন ক্লাবে এক বৈঠক ডেকেছেন ।
সেখানে ডাক পেয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আপের ভগবন্ত সিং মান, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের পিনরাই বিজয়ন, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজেডির নবীন পট্টনায়ক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী টিআরএসের কে চন্দ্রশেখর রাও, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে-র এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন মিলে মোট 8 জন অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ।
একই সঙ্গে বৈঠকে ডাকা হয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড সোনিয়া গান্ধি (Sonia Gandhi), আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব, সিপিআই-য়ের সর্বভারতীয় সভাপতি ডি রাজা, সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার, রাষ্ট্রীয় লোকদলের সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরীকেও ।
মমতার এই বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, ন্যাশানাল কনফারেন্স সুপ্রিমো ফারুক আবদুল্লা, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, শিরোমণি অকালি দল সুপ্রিমো সুখবীর সিং বাদল, সিকিম ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট নেতা পবন চামলিং এবং আইইউএমএল নেতা কে এম কাদের মোহিদ্দিনও ।
এক কথায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে (Presidential Election) সামনে রেখে বিরোধীদের একটা মেগা বৈঠক হতে কনস্টিটিউশন ক্লাবে । সেজন্যই এই নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । কী লিখেছেন সেই চিঠিতে । তিনি লিখেছেন, ‘‘মজবুত গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী এবং কার্যকরী বিরোধী প্রয়োজন ৷ দেশে যে বিভাজনকামী শক্তি কাজ করছে, তার মোকাবিলা করতে প্রগতিশীল সমস্ত শক্তির একজোট হওয়া প্রয়োজন ৷ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে দিয়ে বিরোধী নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে ৷ দেশের ভিতরে তিক্ততা তৈরি করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে ৷ এই সময়ে আমাদের প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন ৷’’
এমন অবস্থায় ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোন খাতে বইবে, তার দিকনির্দেশ ঠিক করার জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ফের একবার বিরোধীদের সামনে সুযোগ নিয়ে এসেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা ৷ তাই তৃণমূল (Trinamool Congress) সুপ্রিমো লিখেছেন, ‘‘আমাদের গণতন্ত্র যখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, বিরোধী স্বর একজোট হওয়াটা সময়ের দাবি ৷ যাঁরা সমাজের বঞ্চিত, তাঁদের দাবিও তুলে ধরা যায় ৷’’
চিঠির শেষে আগামী 15 জুন, বিকেল তিনটের সময় দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে উপস্থিত থাকার জন্য বিরোধী নেতাদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । এখন দেখার তাঁর এই উদ্যোগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং তাদের নেতারা কতটা সাড়া দেয় । যদি শেষপর্যন্ত সফল ভাবে এই বৈঠক থেকে বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ করা যায়, তাহলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মত রাজনৈতিক মহলের ।
আরও পড়ুন : Bill to make CM chancellor: সংঘাত নয়, দায়িত্ব কমাতেই রাজ্যপালের পরিবর্তে আচার্য মমতা !