কলকাতা, 19 জুলাই : তেরো বছর আগে হুগলির সিঙ্গুরে (Singur) কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন রতন টাটা ৷ মূলত, জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের জেরেই টাটা গোষ্ঠীর (Tata Group) তৎকালীন কর্ণধার রতন টাটাকে (Ratan Tata) এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ৷ সেই টাটা গোষ্ঠী কি আবার বিনিয়োগ নিয়ে ফিরতে চলেছে বাংলায় ? রাজ্যের শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন ৷ তাঁর দাবি, টাটা গোষ্ঠী বাংলায় বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে পারে ৷
তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের মূল উদ্দেশ্য আরও কর্মসংস্থান তৈরি করা ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান যে অন্তত দু’টি বড় উৎপাদনকারী সংস্থা রাজ্যে শিল্পস্থাপন করুন ৷ আর সেই তালিকায় টাটা থাকতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : নিশীথের নাগরিকত্ব ইস্যুতে রাজ্যসভায় সরব কংগ্রেস-তৃণমূল
কিন্তু সেটা কি সম্ভব ? টাটা কি আসবে বাংলায় ? কারণ, জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাটাদের সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই ৷ আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিনি ৷ তারা দেশে ও বিদেশে অন্যতম সম্মানীয় ব্যবসায়িক সংস্থা ৷ আপনি টাটাদের দোষ দিতে পারে না ৷’’
পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো শুধু রাজ্য সরকারের মন্ত্রী নন, তিনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) মহাসচিবও ৷ তিনি বলেন, ‘‘সমস্যাটা ছিল বামফ্রন্ট সরকার এবং তাদের জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ৷ বাংলায় বিনিয়োগের জন্য টাটা গোষ্ঠীকে সব সময় স্বাগত ৷’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় আরও একটা টাটা সেন্টার গড়তে আগ্রহী ওই সংস্থা ৷ কিন্তু এছাড়াও যদি তারা উৎপাদন শিল্পে বড় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে ৷ টাটা যে আগ্রহী বাংলায় বিনিয়োগে, তা তথ্যপ্রযুক্তি সচিব তাঁকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বলে দাবি বেহালা পশ্চিমের বিধায়কের ৷
আরও পড়ুন : Parliament Monsoon Session : নিশানায় নিশীথ, নাম না করে আক্রমণ ডেরেকের
প্রসঙ্গত, কৃষির জন্য বিখ্যাত সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো (Tata Nano) গাড়ি তৈরির কারখানা হওয়ার কথা ছিল ৷ 2006 সালে তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) সরকার সেই মতোবেক জমিও অধিগ্রহণ করে ৷ কিন্তু জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বেঁকে বসে কৃষকরা ৷ তাঁদের পাশে দাঁড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জমি ফেরানোর দাবিতে অনশনও করেন ৷ কার্যত সেই আন্দোলনই টাটাকে সিঙ্গুর ছাড়তে বাধ্য করে ৷ সেকথা সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা সরানোর সময় প্রকাশ্যে জানিয়েও গিয়েছিলেন রতন টাটা ৷ পরে অবশ্য দেখা যায় যে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ভুল ছিল ৷ তাই আদালতের নির্দেশে জমি ফেরত পেয়ে যান কৃষকরা ৷ 2016 সালের মধ্যে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয় ৷
নতুন করে বাংলায় টাটাকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে কি একটু বেশিই উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার ? পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি ওই গোষ্ঠীর আধিকারিকদের সঙ্গে বিনিয়োগ টানতে আলোচনা শুরু হয়েছে ৷ তবে টাটাদের সিঙ্গুরে ফেরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই বলে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷ তাঁর দাবি, সিঙ্গুরের অর্থনীতি যেহেতু কৃষি নির্ভর ৷ তাই সেখানে কৃষিভিত্তিক শিল্পের পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার ৷
আরও পড়ুন : অগস্টে সংগঠন সংক্রান্ত কর্মসূচি নিয়ে ত্রিপুরা যাচ্ছেন অভিষেক
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য বিনিয়োগ টানতে সরকার ওই প্রক্রিয়াকে আরও সরলীকরণ করছে ৷ পাশাপাশি বিনিয়োগাকারী সংস্থাকে কিছু ছাড় ও সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে ৷ কিন্তু কোনওভাবেই জমি নীতিতে পরিবর্তন করা হবে না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ৷ জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধেই অবস্থান বজায় রাখবে সরকার ৷ এমনটাই জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ৷ সরকারের ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকেই জমি নিতে হবে ৷