কলকাতা, 7 অক্টোবর : এবারের পুজো আর পাঁচটা বছরের পুজোর তুলনায় অনেকটাই আলাদা ৷ কলকাতা হাইকোর্টের তরফে যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, সেই মত মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা ৷ কিন্তু, সাধারণ মানুষের ঘোরায় কোনও বিধিনিষেধ নেই ৷ ফলে এ বছর কলকাতার রাস্তায় প্রবল ভীড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ আর আর সেই ভীড়ই এবার সবচেয়ে বড় চিন্তা পুলিশের ৷ যানজটের জেরে পুজোর ক’টা দিন স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে কলকাতার রাস্তাঘাট ৷ আর তাই এবার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে লালবাজারে বসে থাকা ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের পুলিশকর্মী এবং জয়েন্ট কমিশনার (সদর) নির্দেশ দেবেন রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের ৷ কিন্তু, পুজোর আগেই দেখা যাচ্ছে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হয়ে গিয়েছে ৷ আবার কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা বহু পুরানো ৷
লালবাজার সূত্রে খবর, লেনিন সরণি, ক্যানিং স্ট্রিট-ব্র্যাবোর্ন রোড ক্রসিং, কলেজ স্কোয়ার বা মহম্মদ আলি পার্কের সামনে, দমদম মেট্রো, পার্ক স্ট্রিট, যাদবপুর, হরিদেবপুর, কসবা, রিজেন্ট পার্ক, নেতাজিনগর-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা এখনও বিকল বা ফুটেজ ঝাপসা আসছে কন্ট্রোল রুমে ৷ সিসিটিভি ক্যামেরা ঝাপসা ফুটেজ দেখে কোনও কিছুই বোঝা সম্ভব নয় ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, ফলে পুজোয় যাতে রাস্তায় ভীড় নিয়ন্ত্রণে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য এবার পুজোর আগে সব সিসিটিভি ক্যামেরা সারিয়ে বা বদলে ফেলতে চাইছে লালবাজার ৷
আরও পড়ুন : Special package for tourists : বাঙালি পর্যটকদের জন্য পুজোর বিশেষ প্যাকেজ হিমাচলপ্রদেশে
কলকাতার ট্র্যাফিক পোস্ট এবং থানা মিলিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার বেশিরভাগই ঝড় এবং লাগাতার বৃষ্টিতে বিকল হয়ে গিয়েছে ৷ কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে খবর, ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি ক্যামেরা সারানো হলেও এখনও অনেকগুলিই বিকল ৷ তার ফলও ভুগছে পুলিশ প্রশাসন ৷ বিশেষ করে ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিক সামলানোর সময় ৷ শুধু যে সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়ার জন্য শহরের যান নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হচ্ছে তেমনটা নয় ৷ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনার তদন্তে অভিযুক্তের খোঁজ চালাতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পাননি তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷
আরও পড়ুন : PAC Controversy : কলকাতা হাইকোর্টে পিএসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি পিছোল
নিউ মার্কেটের লিন্ডসে স্ট্রিটে ব্যাঙ্ক লুটের চেষ্টাই হোক বা দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে দুর্ঘটনা ৷ অনেক ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থল বা আশপাশের রাস্তার ক্যামেরার ফুটেজ পাননি তদন্তকারীরা ৷ সম্প্রতি বেহালায় জোড়া খুনের ঘটনায়, বাড়ির বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও, তদন্তের ক্ষেত্রে সেই ফুটেজ পরীক্ষায় জানা যায় সব ছবিই ঝাপসা ৷ শুধু বেহালা নয়, তালতলা থানা এলাকার লেনিন সরণির মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কয়েক বছর আগে পর পর তিনটি দোকানে ছাদ ফুটো করে চুরির ঘটনাতেও ভুগেছে পুলিশ ৷ শহরজুড়ে জামতাড়া গ্যাংয়ের অপারেশনে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের ৷ এসব ক্ষেত্রে অনেকটাই মানব-মস্তিষ্ক ও সোর্স নেটওয়ার্কের উপরেই পুলিশকে নির্ভর করতে হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নেওয়া থাকলেই সিঁদুর খেলা-অঞ্জলিতে অনুমতি হাইকোর্টের
সব থেকে বেশি যেখানে অসুবিধা, তা হল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ৷ এদিকে সামনেই পুজো ৷ আর সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ভয় ৷ এই সময়ে ভীড় নিয়ন্ত্রণে সিসিটিভি ক্যামেরার গুরুত্ব অনেক ৷ ইতিমধ্যেই, পুজোর নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল সৌমেন মিত্র ৷ সেই বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, পুজোর কয়েকদিন উত্তর থেকে মধ্য এবং দক্ষিণ থেকে মধ্য কলকাতায় থাকা সব স্থায়ী ও অস্থায়ী পার্কিং তুলে দেওয়া হবে ৷ কারণ, পার্কিংয়ের ফলে রাস্তায় অনেকটা জায়গা চলে যায় ৷ এমনকি গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি সরানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিকের সমস্যা হয় ৷ তাই পুজোর আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বিকল সিসিটিভি ক্যামেরা সারানোর উপর জোর দিচ্ছে লালবাজার ৷