কলকাতা, 3 জুলাই: ঐতিহ্যশালী তকমা জুটলেও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ কলকাতার বিখ্যাত নট্ট কোম্পানির বাড়ি ৷ রোমান স্থাপত্যশৈলি খোদাই করা রয়েছে এখানে ৷ সেই কারণে এটিকে ঐতিহ্যশালী বাড়ির তকমা দিয়েছে কলকাতা পৌরনিগমের হেরিটেজ বিভাগ ৷ তবে 150 বছরের পুরনো বাড়ি রক্ষায় এগিয়ে আসেনি হেরিটেজ কমিশন বা কলকাতা পৌরনিগমের হেরিটেজ বিভাগ । ফলে বর্তমানে যা অবস্থা তাতে বাড়ির গায়ে বিপজ্জনক বোর্ড লাগানো কেবল সময়ের অপেক্ষা (Kolkata Notto company house in bad condition due to lack of renovation)।
উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকার গঙ্গাপাড় লাগোয়া নট্ট কোম্পানির এই বাড়িকে অনেকেই চেনেন 'পুতুল বাড়ি' নামে । একদিকে হেরিটেজ অন্যদিকে ভূতের বাড়ি, এই দুই তকমার জেরে এই বাড়ি বিক্রি করতে পারছেন না শরিকরা । বছরের পর বছর বকেয়া সম্পত্তির সুদে বেড়ে বিপুল টাকায় পৌঁছেছে । বাড়ির শরিকরা চাইছেন কলকাতা পৌরনিগম তাঁদের প্রত্যেক শরিকদের জন্য মাথার উপর ছাদের বিকল্প ব্যবস্থা করে ঐতিহ্যাশালী ভবনটিকে অধিগ্রহণ করুক
শোভাবাজারের 17 নম্বর হরচন্দ্র মল্লিক লেন । সামনে রেল লাইন, ঢিল ছোড়া দূরত্বে গঙ্গা । সরু গলিতে মাথা তুলে বিরাট প্রাসদোপম নট্ট কোম্পানির বাড়ি । বড় কাঠের দরজা । ভিতরে ব্রিটিশ আমলের কাঠের সিঁড়ি । দোতলার উপরে উঠোন । বাড়ির ছাদে, কার্নিশে ও সামনে লাগানো দাঁড়ানো পুতুলের মূর্তি । তার বেশ কিছু ভেঙে গিয়েছে । বয়সের ভারে এখন এই বাড়ি জরাজীর্ণ । বাড়ির ভিতরে-বাইরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাথা তুলেছে আগাছা । শোনা যায়, সাহাদের এই বাড়িতে ভাড়া নিয়ে উঠেছিলেন নট্ট কোম্পানির কর্ণধাররা । সুবিশাল এই অট্টালিকা-সহ বাড়িটি বাংলার যাত্রা জগতের নটী বিনোদিনী, মা-মাটি-মানুষের মত কালজয়ী যাত্রাপালার জন্ম দিয়েছে । পরবর্তীকালে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, মনোজ মিত্র, শেখর গঙ্গোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, রবি ঘোষ-সহ নানা স্বনামধন্য শিল্পীর পদধূলি পড়েছে এখানে ।
নট্ট কোম্পানির চতুর্থ প্রজন্ম মাখনলাল নট্টকে 2014 সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে । 2015 সালে তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় নট্ট কোম্পানি । বিপুল প্রাসাদের মালিক হলেও কোনও শরিকের সেই আর্থিক অবস্থা নেই যে বাড়িটিকে মেরামত করবেন । আর এর মধ্যে ভাঙা পুতুল, অন্ধকার ব্রিটিশ যুগের এই বাড়ি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে ভূতের নানা গুজব । এই দুইয়ের জেরে কোনও ক্রেতা পাচ্ছেন না তাঁরা ।
অন্যদিকে বিপুল কর বাকি থাকায় কলকাতা পৌরনিগমও নোটিশ ঝুলিয়ে গিয়েছে । 13 লক্ষ টাকার বেশি বকেয়া কর । এই অবস্থায় বাড়িটি বিক্রি করতে না-পেরে পৌরনিগম ও ভূতের গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাড়ির শরিক নরোত্তম নট্ট । পৌরনিগমের প্রতি এই বাড়ি অধিগ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি ।
আরও পড়ুন: ইতিহাসে এসএসকেএম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে স্তন পুনর্গঠন কলকাতায়
নরোত্তম নট্ট বলেন," ক্ষমতা নেই এই প্রাসাদের মতো বাড়ি সংস্কার করব । এত টাকা ট্যাক্স দেব কোথা থেকে? বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা করলেও সংস্কার করেনি কেউ । এসবের মধ্যে ভূতের বাড়ি বলে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে । তাই সব মিলিয়ে বাড়িটি বিক্রিও করতে পারছি না । আমরা স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালী সাহাকে অনুরোধ করছি বিষয়টি মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে জানাতে । আমরা চাই বাড়িটি পৌরনিগম অধিগ্রহণ করে সংস্কার করুক । আমাদের শরিকদের আর্থিকভাবে সাহায্য করুক । বিকল্প থাকার ব্যবস্থা করে দিক । না হলে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ি অচিরেই শেষ হয়ে যাবে ।"