কলকাতা, 13 মে : কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যেই কলকাতা পৌরনিগমে শুরু হয়ে গেছে পাক বর্ষার প্রস্তুতি । ক'দিন বাদেই বর্ষা আসতে চলেছে রাজ্যে । এখন থেকেই মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে রাজ্যজুড়ে । মাঝেমধ্যেই কালবৈশাখির দাপট দেখা যাচ্ছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে । কোরোনা মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে পৌরনিগম । একইসঙ্গেই প্রাক বর্ষা প্রস্তুতির কাজও শুরু হয়ে গেছে কলকাতা পৌরনিগমে । বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিতে বাড়ছে মশা বাহিত রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা । তাই বর্ষা আসার আগে থেকেই রাস্তাঘাট সাফাই থেকে শুরু করে নিয়মিত মশার লার্ভা ধ্বংসের স্প্রে, সবই করছে কলকাতা পৌরনিগম ।
পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদে বসেই ফিরহাদ হাকিম প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রাক বর্ষার প্রস্তুতি নিয়ে । বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতেও বলা হয়েছে প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যদের । বিশেষ করে নিকাশি পাম্পিং স্টেশনগুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । কলকাতা শহরের কোথাও যেন জল না জমে, সেই বিষয়েও তৎপর থাকতে বলা হয়েছে নিকাশি বিভাগকে । কোনও নিকাশি নালা যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সে বিষয়েও সজাগ পৌরনিগম । বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই যাতে জল নেমে যায় সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে পাম্পিং স্টেশনগুলিতে । প্রয়োজনে অতিরিক্ত মোটরের ব্যবস্থাও রাখতে বলা হয়েছে ।
পাশাপাশি কোরোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দু'বেলা নিয়ম করে রাস্তাঘাট সাফ সাফাইয়ের কাজও করছেন কলকাতা পৌরনিগমের সাফাই কর্মীরা । কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পাক বর্ষার প্রস্তুতি হিসাবে এই রাস্তাঘাট সাফাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে হবে । রাস্তার ধারে কোথাও যেন আবর্জনা পড়ে না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে । রাস্তার ধারে পড়ে থাকা প্লাস্টিক ইত্যাদি নিকাশি নালা চলে গেলে ড্রেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে রাস্তায় জল জমার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে । তাই এই আবর্জনা কোনওমতেই যাতে নিকাশি নালায় গিয়ে না মেশে, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে । তাই নিয়মিত ভাবে রাস্তা সাফ-সাফাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে হবে । কোরোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে জীবাণুনাশক স্প্রে করার কাজ আগেই শুরু করে দিয়েছিল কলকাতা পৌরনিগম । সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড ব্যবহার করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রের জন্য । ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "জীবাণুনাশক স্প্রে হিসেবে যে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে কোরোনার পাশাপাশি মশার লার্ভাও নাশ হবে । সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড একসঙ্গে দু'টি কাজ করছে । একদিকে যেমন শহরকে জীবাণুমুক্ত করছে, সেই সঙ্গেই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া থেকেও রক্ষা করছে । তাই প্রাক বর্ষার প্রস্তুতির মধ্য এটা অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ । নিয়মিতভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে ও মশার ওষুধ স্প্রে করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ।"
অতীন ঘোষ বর্তমানে পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য । এর আগে তিনি ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য পদে কাজ করতেন । অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, "কলকাতা পৌরনিগমের কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে মশার ওষুধ স্প্রে করছে । কোরোনা প্রতিরোধে যে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড ব্যবহার করা হচ্ছে তাতেও মশার বিনাশ হচ্ছে ।"
সেই সঙ্গে কঠিন বর্জ্য পদার্থ বিভাগ নিয়মিত দুবেলা রাস্তাঘাট সাফ সাফাই করছে । পৌরনিগমের নিকাশি ব্যবস্থার দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন তারক সিং । তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা পৌরনিগমের কর্মীরা সবসময় তৎপর রয়েছেন এবং এই কোরোনা পরিস্থিতিতে তারা নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছেন । তাই কলকাতায় ভারী বৃষ্টি হলেও জল জমার বর্তমানে কোনও সমস্যা হবে না । কয়েকদিন আগে যে কলকাতায় ভারী বৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময়েও কোথাও জল জমেনি । দ্রুত জল নেমে গিয়েছিল । কলকাতার সমস্ত পাম্পিং স্টেশনগুলি এই মুহূর্তে সচল রয়েছে । সবক'টি সঠিকভাবে কাজ করছে । "