কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: 2021 বিধানসভা নির্বাচনে ভোট প্রচারে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে বিজেপি নেতা তথা বলিউড সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় দায়ের হয়েছিল এফআইআর। সেই এফআইআর খারিজের দাবিতে 8 জুন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন 'মহাগুরু'। শুক্রবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয় ৷ তবে এদিন রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৷
একুশের ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী ৷ ভোটে না-দাঁড়ালেও রাজ্যব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন ৷ তাঁকে দেখতে একাধিক জনসভায় জনতার ভিড় উপচে পড়েছিল ৷ অনেক জনসভাতেই মিঠুনকে তাঁর বিভিন্ন ছবির জনপ্রিয় সংলাপ বলতে শোনা গিয়েছিল ৷ যার মধ্যে "মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে", "আমি জাত গোখরো, এক ছোবলেই ছবি "৷ ভোট-প্রাচারে এই রকম উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য মিঠুনের বিরুদ্ধে মৃত্যুঞ্জয় পাল নামে এক ব্যক্তি মানিকতলা থানায় এফআইআর করেছিলেন ৷
মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে সরকারি কৌসুলি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এই মামলায় মিঠুন চক্রবর্তীকে কোনওরকম হেনস্তা ছাড়াই তদন্ত করতে চাই। আদালত তদন্তে অনুমতি দিক। তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেই, যে মন্তব্য করেছেন সেটা আইনের চোখে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাধারণ লোকজনদের ওপর এই ধরনের মন্তব্যের প্রভাব পড়ে।"
তখন বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানতে চান, তিনি ঠিক কী মন্তব্য করেছিলেন ? সরকারি কৌসুলি জানান, তিনি বলেছিলেন "আমি জলঢোঁড়া ও নই, বালি বোড়াও নই আমি হলাম জাত গোখরো এক ছোবলেই ছবি, এবার থেকে এটা হবে ৷ এর থেকে কেউ পালাতে পারবে না ৷" তখন বিচারপতি চন্দ বলেন, কিন্তু এটাতো একটা সিনেমার ডায়লগ দর্শকদের অনুরোধে তাদের মনোরঞ্জন করতে তিনি এটা বলেছিলেন। আর এটার মানেই বা কী? তখন সরকারি কৌসুলি বলেন, "এটার মানে হচ্ছে, এইবার ছোবল চলতে থাকবে...৷" আদালত কক্ষে তখন হাসির রোল ওঠে। বিচারপতি বলেন, ‘‘এটা কোনও কেস নয় যে, পরিকল্পনা করে, জনগণকে উস্কানি দিতে এটা বলা হয়েছিল ৷’’
আরও পড়ুন : এখনই গ্রেফতার নয় মিঠুনকে, উস্কানিমূলক সংলাপ মামলায় নির্দেশ হাইকোর্টের
সরকারি কৌসুলি তখন বলেন, "কিন্তু উনি একজন আইকনিক ফিগার। উনি যখন কোনও কথা বলেন সমাজে তার একটা গভীর প্রভাব পড়ে ৷ সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ রয়েছে, যদি কোন বক্তব্যের দীর্ঘকালীন প্রভাব থাকে তাহলে সেটা আদালতের বিচার্য ।" অন্যদিকে মিঠুন চক্রবর্তীর তরফে আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি বলেন, "এগুলো সম্পূর্ণ এক একটা সিনেমার ডায়লগ কোনওরকম উস্কানি দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার এটাকে ঘৃণামূলক বক্তব্য বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় ঘৃণার বক্তব্য ? এগুলোকে ঘৃণা ছড়ানোর মতো বক্তব্য বলা যায় ? শুধু শুধু সরকার অযথা সময় নষ্ট করছে ।" দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানান, এই মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছে । তবে রায়দান স্থগিত রাখা হচ্ছে । শীঘ্রই এই মামলার রায়দান করা হবে।