কলকাতা, 28 ডিসেম্বর : দেরিতে ফলপ্রকাশ বা ভরতি প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে কোনও পড়ুয়ার স্কলারশিপ-ফেলোশিপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার নৈতিক দায় স্বীকার করে নেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই পড়ুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি মকুব করে দেওয়া হবে। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি বৈঠকের পর বৈঠক হয়ে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের তোলা দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করতেই হয়ে চলেছে বৈঠক। শনিবার অনলাইন-অফলাইন মিশ্র পদ্ধতিতে এমনই একটি বৈঠক হয় যাদবপুরে। দুপুর সাড়ে 12টা থেকে শুরু হওয়া সেই বৈঠক প্রায় রাত 2টো পর্যন্ত চলে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে 24 ডিসেম্বরের বৈঠক চলেছিল পরেরদিন ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত। গতকালের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক, শিক্ষক, জেইউএমএস, ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে ছাত্রদের তরফে তোলা একাধিক দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেমেস্টারের ফলপ্রকাশ ও ভরতি প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আগে থেকেই স্কলারশিপ-ফেলোশিপ থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা যদি স্কলারশিপ-ফেলোশিপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হন, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কলারশিপ-ফেলোশিপের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনগুলি যথোপযুক্ত যাচাইয়ের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের টিউশন ফি, হস্টেল ফি, পরীক্ষা সংক্রান্ত ফি-র মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি মকুব করবে।
আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ও উপাচার্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক : অমর্ত্য সেন
এরই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে সকল পড়ুয়া স্কলারশিপ-ফেলোশিপ হারানোর কারণে প্রভাবিত হয়েছেন, তাঁদের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সহ সহ-উপাচার্য প্রদীপ কুমার ঘোষের কাছে আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনগুলির সত্যতা যাচাই করার জন্য গড়া হবে একটি স্ক্রিনিং কমিটি। যেখানে ছাত্র প্রতিনিধিও থাকবে। এ ছাড়া, স্কলারশিপ-ফেলোশিপ হারানোর ক্ষতিপূরণের জন্য সাহায্য করতে গেলে যে খরচ হবে তা বহন করার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির সদস্য, প্রাক্তনী এবং অন্যান্য ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্ট ইউনিয়নের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, 2019 সালে প্রকাশিত অড সিমেস্টারের ফলাফল ভুলভ্রান্তিতে ভরা। সেগুলো অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। সেই দাবিও মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির 2019-20 শিক্ষাবর্ষে অড সিমেস্টার, যা 2019 সালের 22 ডিসেম্বর সম্পূর্ণ হয়েছিল, তার সংশোধিত ফলাফল 20 জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশ করা হবে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর। যদিও, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। অভিযোগ উঠছে, ভুলভ্রান্তি নয়, চাপ দিয়ে অসফল পড়ুয়াদের সফল করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এক্ষেত্রে। এ ছাড়া, সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং দুই ফ্যাকাল্টিরই একাধিক কোর্সের গ্রেড কার্ড, সার্টিফিকেটের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে হার্ডকপি দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে বৈঠকে।
আরও পড়ুন: ঘেরাও-আন্দোলনে জেরবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
অন্যদিকে, রবিবার অনলাইনে কর্মসমিতির বৈঠক হয়। সেখানেও ছাত্রদের বেশকিছু দাবিদাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের তরফে দাবি তোলা হয়েছিল, জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের স্নাতকোত্তর কোর্সের ফি আর্টসের অন্যান্য বিভাগের ফি-এর সমান করতে হবে। এই কোর্সের ফি দুই বছরে 40 হাজার টাকা। যাদবপুরের SFI নেতা দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "মাস কমিউনিকেশনের ফি 40 হাজার ছিল। সেটা কমে 26 হাজার 200 টাকা করা হয়েছে। আমরা আরও কমানোর কথা বলছি। পাশাপাশি, এখন যেটা কমেছে আমরা 30 ডিসেম্বরের মধ্যে তার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়কে।"