কলকাতা, 2 ডিসেম্বর : আপার প্রাইমারির নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি ধাপে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ । হাইকোর্টের নির্দেশে পুজোর সময় মেধাতালিকা প্রকাশ হলেও তা নিয়েও একাধিক অভিযোগ তোলেন চাকরিপ্রার্থীরা । বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে থমকে রয়েছে আপার প্রাইমারির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া । এই পরিস্থিতিতে আজ আবার শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের ডাকে পথে নামলেন আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থীরা ।
করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন পর্যন্ত আজকের প্রতিবাদ মিছিলটি ছিল নজরকাড়া । মিছিলে দেখা যায় রং-বেরঙের পোশাকে ছৌ-নাচ, ধামসা-মাদল, তিরন্দাজের মতো আদিবাসী সংস্কৃতির প্রদর্শনী ।
বর্ণাঢ্য এই মিছিল নিয়ে শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম বলেন, "আজকে আমাদের মিছিলে ছৌ-নাচ, তির-ধনুক ও আদিবাসী ধামসা-মাদল ছিল । যারা এই প্রদর্শনী করেন তাঁরা প্রত্যেকে জঙ্গলমহলের TET পাশ করা চাকরিপ্রার্থী । তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন । তাই তাঁদের আদিবাসী সংস্কৃতি নিয়ে এসে বিক্ষোভ করছেন ।"
আজকের কর্মসূচি থেকে তোলা দাবি নিয়ে মইদুল ইসলাম বলেন, "উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গোটা রাজ্য জানে ব্যাপক কেলেঙ্কারি হয়েছে । যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ না দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের পিছনের দরজা দিয়ে TET-র নম্বর বাড়িয়ে মেধাতালিকায় আনা হয়েছে । ফলে, হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী বঞ্চিত হয়েছে । হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়েছে । 12 হাজারের বেশি যোগ্য প্রার্থী অভিযোগ দায়ের করেছেন । এখনও পর্যন্ত সেই যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়নি । সাত বছর নিয়োগ হয়নি ৷ শূন্যপদের তালিকাও আপডেট করেনি । অর্থাৎ, শূন্যপদ বাড়েনি । তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধাতালিকা প্রকাশের দাবিতে, রেশিও মেইনটেইন করে, প্রকৃত TET ফিরিয়ে, শূন্যপদ বাড়িয়ে নিয়োগের দাবিতে আজকের এই বর্ণাঢ্য মিছিল ৷ "
এর আগে সল্টলেকে বিকাশ ভবনের কাছে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি পুলিশের কাছ থেকে না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা । হাইকোর্টের নির্দেশে আজ 18 দিন ধরে তাঁরা অনশন করছেন সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মেলা মাঠের সামনে । একইভাবে পুলিশের কাছে অনশন, ধরনা করার অনুমতি প্রথমে পায়নি শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চ । তাই তারাও দ্বারস্থ হয়েছে হাইকোর্টের । হাইকোর্টে গৃহীত হয়েছে সেই মামলা । কিন্তু, আজ শুনানির আগেই পূর্বসূচি অনুযায়ী মিছিল ও তারপর ধরনা, অনশন কর্মসূচি শুরু করে তারা । কর্মসূচির জন্য অনুমতি পাওয়া নিয়ে মইদুল ইসলাম বলেন, "আজকের এই কর্মসূচির জন্যেও হাইকোর্টের অনুমতি আমরা নিয়েছি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্দেশ চলে আসবে । হাইকোর্টে মামলা গৃহীত হয়েছে । পুলিশ প্রথমে আমাদের অনুমতি দিচ্ছিল না । হাইকোর্টে মামলাটা গৃহীত হওয়ার পর আজকে অনুমতি পেয়েছি । এবং হাইকোর্টে আজকে সেই মামলার শুনানি আছে । সেখানে কী হয় আমরা দেখব । কিন্তু, আমরা আমাদের অনশন, ধরনা কর্মসূচি চালিয়ে যাব ।" প্রসঙ্গত, হাইকোর্টে আজ শুনানি হয়নি ৷ কাল শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ ফলে সন্ধেয় পুলিশ আন্দোলনকারীদের জোর করে তুলে দেয় বলে অভিযোগ ৷
মইদুল ইসলাম আরও বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছেন । তাঁর সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলনের আগামী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে ।