কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর: অসুরকূলকে নিধন করে দেবতাদের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন দেবী দুর্গা (Durga Puja 2022)৷ তাঁর বীরত্ব, শৌর্য, সাহসিকতা ও দৃপ্ত ব্যক্তিত্ব তাঁর পায়ের কাছে টেনে এনেছিল মহিষাসুরকে ৷ বাস্তবের প্রেক্ষাপটে দেবী দুর্গার মতোই নারীশক্তির জয়ধ্বজা তুলে ধরেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই বাংলার গর্ব আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেন (Damayanti Sen)৷ 'শাসকের চোখরাঙানি', দুর্বৃত্তদের ভ্রুকুটি - কোনও কিছুতেই মাথা নোয়াননি ৷ বরং তাঁর দৃপ্ত পদচারণা ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বে বারবার সাফল্য এসে তাঁর কাছে ধরা দিয়েছে ৷ সে জন্যই তো প্রথম মহিলা হিসিবে তিনি আজ কলকাতা পুলিশের স্পেশাল পুলিশ কমিশনার ৷
2012 সালে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল 'সাজানো ঘটনা' ৷ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় ৷ ঘটনাটিকে কি তিনি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন ? এমন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে । তবে রাজ্য প্রশাসন যাই বলুক না কেন নিজের দায়িত্বে অবিচল ছিলেন দময়ন্তী । সাংবাদিক সম্মলনে তিনি স্পষ্টই জানান, অপরাধ সংগঠিত হয়েছে । এরপর ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় 3 জনকে ৷ রাতারাতি সংবাদমাধ্যমে 'বাঘিনী'র তকমা পান ছিপছিপে চেহারার এই পুলিশ অফিসার ৷
যদিও এরপরেই তাঁর বদলি হয়ে যায় ৷ 'অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের' পদে সরানো হয় তাঁকে ৷ ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল হন দময়ন্তী ৷ এরপর দার্জিলিং-এর পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে ফের তাঁর উপর ভরসা রাখে তাঁর বিভাগ ৷ সাব-ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের হত্যাকাণ্ডের পর পাহাড়ে তখন বিক্ষোভের আগুন ৷ পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাতে চলে না যায়, সে জন্য তড়িঘড়ি জাভেদ শামিম ও দময়ন্তী সেনকে পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দার্জিলিঙের ডিআইজি রেঞ্জে বদলি করা হয় মহিলা আইপিএস অফিসারকে ৷ সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় সিআইডিতে ৷ ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদের দায়িত্ব পান তিনি ৷ রাজ্য পুলিশের আইজি (প্রশাসন) পদেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন ৷
আরও পড়ুন: ছিলেন ইংরেজির ছাত্রী 'বাস ধরতে গিয়ে' শুরু ব্যাঙ্কের চাকরি, অরুন্ধতীর বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায়
এ ভাবে প্রায় 7 বছর কেটে যাওয়ার পর চলতি বছর ফের লালবাজারে ফিরিয়ে আনা হয় দময়ন্তী সেনকে ৷ অ্যাডিশনাল সিপি টু পদমর্যাদায় ফেরানো হয় তাঁকে ৷ রাজ্যের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষণের মামলার তদন্তের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ৷ উত্তর 24 পরগনার দুটি, মালদার একটি ও কলকাতার মানিকতলায় একটি - এই চারটি ধর্ষণের ঘটনায় যথাযথ তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে ৷ সেই মামলাগুলির তদন্তে নজরদারির জন্য দময়ন্তীকে দায়িত্ব দেন বিচারপতি ৷ এ ছাড়াও এই আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে তদন্তের মোড় ঘুরে যায় রসিকা জৈন মৃত্যুর মামলাতেও ৷ শ্বশুরবাড়ির নিচ থেকে দেহ মিলেছিল রসিকার ৷ একে আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল ৷ নানা আইনি জটিলতার পর রসিকার বাপের বাড়ি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দময়ন্তীকে ৷ তিনি তথ্য-প্রমাণ জোগার করে আদালতের দ্বারস্থ হন ৷ জানান, এটি হত্যাকাণ্ড ৷ সেটাই উঠে এসেছে তাঁর তদন্তে ৷ এরপর গ্রেফতার করা হয় রসিকার শিল্পপতি স্বামীকে ৷ সম্প্রতি বিজেপির নবান্ন অভিযানে কলকাতার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নেতৃত্বেও ছিলেন তিনিই ৷ তাঁরই সুচারু পরিকল্পনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলকে বড় আকার নিতে দেয়নি পুলিশ ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী দময়ন্তী সেন ৷ 1996 ব্যাচের আইপিএস অফিসার ৷ পুলিশ মহলে শুরু থেকেই নিজের দক্ষতা ও বলিষ্ঠতার জন্য সবার নজর কেড়েছেন ৷ শোনা যায়, 'ম্যাডাম' সম্বোধন নাকি তাঁর অপছন্দের ৷ বরং স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন 'স্যার' শুনতেই ৷ সেই কারণে পুলিশের বহু অধস্তন কর্মী এমনকী সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও অনেকেই তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁকে 'স্যার' বলে সম্বোধন করেন ৷ পুরুষশাসিত সমাজে দময়ন্তী সেন আক্ষরিক অর্থেই শক্তিরূপেণ...