কলকাতা, 7 জুন: বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের মানুষ কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন । বিশেষ করে যে জেলায় আজ দলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় সেই আলিপুরদুয়ার থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে । মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে তাই কার্যত আক্ষেপের সুর শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের গলায় (Mamata at Alipurduar)।
প্রসঙ্গত জেলার মানুষের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে এই সরকারের আমলেই আলাদা আলিপুরদুয়ার জেলা তৈরি হয়েছে । শুধু তাই নয়, তৃণমূল সরকারের আমলে এই জেলায় সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রচুর কাজ করা হয়েছে । অথচ এই জেলায় গত লোকসভা নির্বাচন এবং একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও কার্যত খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূল । এই অবস্থায় বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথম আলিপুরদুয়ারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গেল, "উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য এত কাজ করেছি তার পাল্টা কিছু আমি চাই না । কিন্তু বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তির চক্রান্তে পা দেবেন না । আমি শুধু চাই আপনাদের ভালোবাসা ।"
তিনি (Mamata Banerjee at Alipurduar) আরও বলেন, "আপনাদের জন্য এতকিছু করার পরও আপনারা আমাদের সমর্থন করেননি, এর জন্য কষ্ট পেয়েছি । তবে আপনাদের ভুল বুঝছি না । এটা আপনাদের অধিকার । তবে আমার দুঃখ হয়েছে যখন বিজেপির মিথ্যে কথায় আপনারা বিশ্বাস করেছেন । আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের সমস্ত সংসদ আসন বিজেপিকে দিয়েছেন । কিন্তু কেন ? কী করেছে বিজেপি ? চা বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আজ পর্যন্ত চা বাগান খুলেছে ! আপনাদের গৃহস্থের প্রয়োজনীয় গ্যাসের দাম 500 টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে, আপনি ওদের ছেড়ে দেবেন ! বিজেপি ভোটের সময় এসে প্রতিশ্রুতির গ্যাস বেলুন দিয়ে যায় । আর নির্বাচন চলে গেলেই পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেয় । আজকে রিজার্ভ ব্যাংক কী বলছে, মোদিজি নোটবন্দি করার সময় কী বলেছিলেন ! খুব ভালো হবে দেশের । আর এখন কিছু হলেই মোদিজি বলেন, ওই তো জলপাইগুড়িতে ধরা পড়েছে, ওই তো আলিপুরদুয়ারে ধরা পড়েছে ।" মমতার অভিযোগ, 100 শতাংশের ওপর 500 টাকার নোট জালিয়াতি হয়ে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, এরপরও তাদের সমর্থন করবেন !
আরও পড়ুন: KLO threat to Mamata: কামতাপুরে পা রাখবেন না, উত্তরবঙ্গ সফরের আগে মমতাকে হুঁশিয়ারি কেএলও'র
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময়ে পুরুলিয়া সফরে গিয়েও এ ভাবেই সেখানকার মানুষের সমর্থন চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বারবার এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আলিপুরদুয়ার হোক বা পুরুলিয়া, মানুষ বিজেপির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি উপর ভরসা করে তাদের ভোট দিয়েছে । অথচ মানুষের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বিজেপি । তার বদলে উন্নয়ন করছে তৃণমূল কংগ্রেস, তাই তাদের সমর্থন চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
রাজনৈতিক মহল বলছে, আসলে এখানে যথেষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । যে ভাবে বিধানসভা নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলাদা রাজ্যের দাবি উঠছে, সেখানে জনসমর্থন আদায় করতে না পারলে সেই বিভাজন রাখা সম্ভব নয় । এ ক্ষেত্রে 24-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে একদিকে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জনভিত্তি শক্তিশালী করার চেষ্টা করলেন, পাশাপাশি বিভাজনের যে প্রয়াস বিজেপি চালাচ্ছে তাকেও রক্ষার চেষ্টা করলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ।