কলকাতা, 19 অগস্ট : পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) জয়ের হ্যাটট্রিক করার পর এবার সংগঠনে মন দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ৷ চালু হয়েছে এক নেতা, এক পদ নীতি ৷ একই সঙ্গে বিজেপির (BJP) ধাঁচে সংগঠনকে আরও ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৷ একটি জেলাকে একাধিক সাংগঠনিক জেলায় ভেঙে দিয়ে অনেক বেশি নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তাতে কি কোনও বদল হবে শাসক দলের অন্দরে ? কারণ, তৃণমূল কংগ্রেসে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) আসল ৷ তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয় দলের রাজনীতি ৷ সেখানে এই নতুন সাংগঠনিক পরিকাঠামো না থাকলেও কি কোনও ক্ষতি হত ?
আরও পড়ুন : NHRC Case : হাইকোর্টের রায়ে উচ্ছ্বসিত বিজেপি, সাবধানী তৃণমূল
প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পরিবর্তন যাই হোক, এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের শেষ কথা মমতাই । কথায় বলে না, তৃণমূলের একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট । সেক্ষেত্রে সংগঠনে যাই বদল আসুক, ধাঁচা কিন্তু সেই মান্ধাতা আমলের থাকছেই ৷’’
যে দলকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার ক্ষমতা দখল করে, সেই সিপিএমের (CPIM) সংগঠন একটা সময় পর্যন্ত যথেষ্ট মজবুত ছিল ৷ সরকার ও সংগঠনের মধ্যে তফাত বরাবর রাখতেন বাম নেতারা ৷ আবার এই মুহূর্তে যে দলের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল লড়াই, সেই বিজেপিও সরকার ও সংগঠনের মধ্য়ে একটা সূক্ষ বিভাজন রেখা টেনে রাখে ৷ ওই দলে বহু আগে থেকেই এক নেতা, এক পদ নীতি চালু রয়েছে ৷ তাই প্রতিপক্ষের সঙ্গে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দিতেই মমতার দলও সেই পথে হাঁটল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
আরও পড়ুন : Post Poll Violence : ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের
যদিও তৃণমূলে এই ব্যাপারটা কোনও সময়ই ছিল না ৷ রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী দলের দায়িত্বও সামলেছেন ৷ তাতে সমস্যা খুব বেশি হয়নি এখনও পর্যন্ত ৷ বরং বিভিন্ন নির্বাচনের বৈতরণী সাফল্যের সঙ্গেই পার করেছে শাসক দল ৷ সেই কারণেই সম্ভবত, 10 বছর রাজ্য শাসনের পর মালদার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পার্টি অফিস এখনও পর্যন্ত নেই ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সংগঠনে রদবদল নির্দিষ্ট সময় অন্তর করতে হয় ৷ না হলে পরিস্থিতি খারাপ হয় ৷ সিপিএমই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ৷ যে দল বছর 15-20 আগেই সংগঠনে অন্যদের টেক্কা দিত ৷ তাদের এখন হাঁড়ির হাল ৷ ভোটবাক্সও ভর্তি হয় না ৷ নির্বাচনী ময়দান থেকে শূন্য পেয়ে ফিরতে হয় ৷ এটা থেকে তৃণমূল শিক্ষা নিয়ে তড়িঘড়ি সংগঠনে রদবদল করেছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ৷
আরও পড়ুন : TMC Clash: তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত দিনহাটা; গুলি ও তিরবিদ্ধ 3
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের হ্যাটট্রিক করার পরই তৃণমূলে এক নেতা, এক পদ নীতি ঘোষণা করা হয় ৷ সেই সময় সংগঠনে সবচেয়ে বড় রদবদল করা হয় ৷ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) এতদিন ছিলেন তৃণমূলের যুব সভাপতি ৷ সেখান থেকে তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করে দেওয়া হয় ৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, তার পরই সংগঠনে আরও নতুন মুখকে নেতৃত্বে তুলে আনার পরিকল্পনা করা হয় ৷ আর এই গোটা প্রক্রিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) ৷ সেই কারণেই বিজেপির মতো সাংগঠনিক জেলায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের সংগঠনকে ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : গ্রামাঞ্চলে 50 শতাংশ টিকাকরণ হলেই লোকাল ট্রেন চালুর অনুমতি, জানালেন মমতা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এই মুহূর্তে দল পরিচালিত হচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে । যেহেতু তিনি নিজে নবীন মুখ । খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই এখানে জেলাস্তরে অপেক্ষাকৃত নবীন মুখের নেতাদেরই একটু বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । তবে প্রবীণরা যে তৃণমূলে ব্রাত্য এমন নয় । এক্ষেত্রে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীরা তাঁদের পদাধিকার বলে কোর কমিটির সদস্য । কাজেই তাঁদের গুরুত্ব তো থাকছেই । এভাবেই তো নতুনদের সংগঠনে তুলে আনতে হয় । সত্যি কথা বলতে, গত 10 বছরে প্রথম মনে হচ্ছে দলের মধ্যে সাংগঠনিক রদবদল বা বিন্যাস কিছু চলছে ৷’’
রাজনৈতিক মহলের অন্য একটি অংশের মতে, এর মাধ্যমে আসলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কারণ, এতদিন ধরে দল-সংগঠন-মন্ত্রিত্ব সবটাই কেন্দ্রীভূত থাকত হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে । অতীতের তুলনায় দল শুধু আকারে বড় হয়েছে ৷ কর্মী-সংগঠকের সংখ্যাও বেড়েছে ৷ এই অবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে দলের তরফে বার্তা দেওয়া হল যে শুধু হাতেগোনা কয়েকজন নয়, দলের জন্য নিবেদিত সকলেই দায়িত্ব পাবেন ৷ আর অবশ্যই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আটকানো এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকেদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা । এক্ষেত্রে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রিয় মুখকে সামনে এনে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন অভিষেক ।
আরও পড়ুন : Sushmita Deb-TMC : সুস্মিতাকে সামনে রেখে অসম বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে প্রস্তুত তৃণমূল