কলকাতা : সকাল 9টা 45 মিনিটের বনগাঁ লোকাল বা 8টা 12 মিনিটের ক্যানিং । সাতসকালেই হাতে টিফিন বক্সের ব্যাগ ঝুলিয়ে হাজির হতেন ওঁরা । শিয়ালদা স্টেশনে নেমে পৌঁছে যেতেন বউবাজারের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে । ঠুকঠুক শব্দে যেন তৈরি হত ছন্দ । হাতের নিখুঁত দক্ষতায় ফুটে উঠত অলংকারের নিখুঁত সব নকশা । দিনগুলো একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে বউবাজার থেকে । স্বর্ণশিল্পেও মানুষের জায়গা নিচ্ছে মেশিন । আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কয়্যার সর্বজনীনের ভাবনা ।
মোট 50 কেজি সোনা ব্যবহার করা হয়েছে । সোনার পাত দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে দুর্গা প্রতিমা, সিংহ এবং অসুর । মোট কুড়ি কোটি টাকার সোনায় তেরো ফুটের প্রতিমা আগাগোড়া মোড়া রয়েছে । মণ্ডপের অন্দরসজ্জায় সোনালি ছাপ । মায়াপুরের একটি নির্মীয়মাণ মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এবারের মণ্ডপ । সোনার দুর্গার টানে তৃতীয়া থেকেই ভিড় দর্শনার্থীদের ৷
2017 সালে সন্তোষ মিত্র স্কয়্যারে মা পড়েছিলেন সোনার শাড়ি । অগ্নিমিত্রা পাল তৈরি করেছিলেন সেই শাড়ি । গতবছর সন্তোষ মিত্র স্কয়্যারে তৈরি হয়েছিল রূপোর রথ । সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখে এবার সোনার দুর্গা । কিন্তু কেন? কেন প্রতিবছর সোনা বা রূপোর ব্যবহার হচ্ছে পুজোয়? সন্তোষ মিত্র স্কয়্যার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, "আমরা সোনার পাড়ায় থাকি । একটা সময় 50 হাজার লোক সোনার কারিগর হিসেবে রোজ এখানে কাজ করতেন । কিন্তু এখন সে সবই ইতিহাস ৷ আমরা সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই । গোটা বিশ্বকে বলতে চাই হাতের কাজের কোনও বিকল্প নেই । হাতের কাজ মানুষের হাতেই সম্ভব, মেশিনে সম্ভব নয় ৷" মণ্ডপ প্রসঙ্গে মজা করে সজলবাবু বলেন, "নবদ্বীপের একটি নির্মীয়মাণ মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে ৷ তবে তারা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি ৷ আমরা কিন্তু করে ফেলেছি ৷ আমরা এরপর বলব যে আমাদের নকল করেছে ৷" বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, "আমাদের বাজেট দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ভিতরে ৷ সোনাটা কম্পানির ৷ যারা দিচ্ছে তারাই আবার নিয়ে চলে যাবে ৷"