ETV Bharat / city

জলে ভাসছে কাঠামো, বিষাক্ত রং; দূষণ থেকে পরিত্রাণ নেই গঙ্গার !

author img

By

Published : Oct 28, 2020, 9:32 PM IST

2017 সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে গঙ্গা দূষণ রোধে মামলা করেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত । সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গঙ্গায় ভাষণ দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে । যদিও আজ পর্যন্ত তা সঠিক অর্থে কার্যকর হয়নি ৷

ganges-is-not-free-from-pollution
ganges-is-not-free-from-pollution

কলকাতা, 28 অক্টোবর : মোট 24টি ঘাট । কলকাতায় সেই ঘাটগুলিতেই চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন । বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিরঞ্জন হওয়ার কথা । কথা মতো বিসর্জনের ঘাটগুলোতে তৎপর রয়েছে কলকাতা পৌরনিগম এবং পুলিশ প্রশাসন । প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেই জল থেকে কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা পৌরনিগমের । ক্রেনের মাধ্যমে তা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছেও । কিন্তু তারপরেও গঙ্গায় ভাসতে দেখা যাচ্ছে কাঠামো । ফলে দূষণ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ৷ প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে পরিবেশ কর্মীরা ।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশমী এবং একাদশী মিলিয়ে প্রায় 3 হাজার প্রতিমা ইতিমধ্যে বিসর্জন হয়েছে গঙ্গায় । কোরোনা আবহে এবার বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লালবাজার । বিসর্জনের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘাটে করা হয়েছে মার্কিং । প্রতিটি ঘাটে থাকছেন DC পদমর্যাদার অফিসার । মোট 3 হাজার পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে বিসর্জন প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্বে । গঙ্গার ঘাটগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং রিভার ট্রাফিক গার্ড । সব মিলিয়ে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থাপনা পাকা । এছাড়াও প্রতিটি বিসর্জনের ঘাটে কাজ করছেন কলকাতা পৌর নিগমের কর্মীরা । তারাই মূলত প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ক্রেনের ব্যবহারে কাঠামো তোলার কাজ করছেন । কিন্তু দ্বাদশীর দুপুরে দেখা গেল, 24টি ঘাটের প্রায় প্রতিটিতেই এখনও জলে ভাসছে বর্জ‍্য । বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঠামো এমনভাবে পাড়ে তোলা হয়েছে যে জোয়ারের জলে তা ফের চলে যেতে পারে নদীতে ।

তথ্য বলছে, 2017 সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে গঙ্গা দূষণ রোধে মামলা করেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত । সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গঙ্গায় ভাষণ দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে । কারণ, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের কারণে জল দূষিত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের । কী ধরনের ক্ষতি ?

পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, প্রতিমায় যে রং দেওয়া হয় তাতে ক্রোমিয়াম, সিসাসহ ক্ষতিকর পদার্থ থাকে । প্রতিমা জলে পড়লেই সেই রং দ্রুত জলে মিশে যায় । যা জল দূষণের কারণ । এই সিসা জাতীয় পদার্থের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয় নদীর বাস্তুতন্ত্রের । এরফলেই সম্প্রতি 'ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা' জারি করেছে নির্দেশিকা । সেই নির্দেশিকায় NMCG পশ্চিমবঙ্গ সহ 11টি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল । সেই নির্দেশিকা সূত্র ধরে উত্তরপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ করেছে । তবে সব রাজ্য এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশিকা মানেনি । কিন্তু যাতে সেই নির্দেশিকা মানা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে পুজোর সময় সোশাল মিডিয়ায় চালায় 'নো পলিউশন দুর্গাপূজা' শীর্ষক প্রচার । সেই প্রচারে বলা হয়েছিল, নিরঞ্জনের আগে প্রতিমার গা থেকে পুজোর ফুল, সাজসজ্জা এমনকী প্রতিমার বসন খুলে নিতে হবে । কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এই নিয়মও পালন করা হয় না ।

গঙ্গার পাড়ে বসে বরানগরের সুরেশ দাস বললেন, “ দেখাই যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত বিসর্জনের বর্জ্য জলে রয়েছে । প্রশাসনের কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো তোলা হয়নি । তার ফলে জলের ক্ষতি হচ্ছে । প্রশাসনের উচিত, এ বিষয়ে ব্যবস্থা করা ।"

রাধেশ্যাম দাস নামে এক লঞ্চ যাত্রীও জানালেন তেমনটাই । গঙ্গার জলে ভেসে বেড়ানো খড়ের দেখিয়ে তিনি বলেন, “এখনও যেভাবে কাঠামো-খড় ভেসে বেড়াচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের । প্রশাসনের দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । এবার প্রতিমার উচ্চতা কম হয়েছে ৷ অনেক ক্ষেত্রে পুজো হয়নি । যদি মহামারী না থাকত তবে নিশ্চিতভাবে আরও বেশি ক্ষতি হত গঙ্গার ।"

এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এবারেও গঙ্গায় হাজার হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে । যার 60 শতাংশে ধাতব রং যেমন ক্রোমিয়াম, সিসা, অ্যালুমিনিয়াম, গ্লসি ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছিল । সেগুলি জলে পড়ার ফলে জল দূষিত হয়েছে । এই ধাতব পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক পারদ । এই বিষাক্ত পদার্থগুলি গঙ্গার দূষণকে 1 হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে । দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উচিত ছিল বিসর্জনের আগে জলের দূষণমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা । বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর আরও একবার দূষণ মাত্রা পরীক্ষা করে তার তুলনামূলক বিচার করা উচিত ছিল । তাহলেই বোঝা যেত, এই সময়টায় জলদূষণ কতটা বেড়ে থাকে । প্রতিবারের মতো এবছরও দেখা যাচ্ছে জলে ভাসছে কাঠামো । প্রতিমার সাজসজ্জাও জলে ভেসে বেড়াচ্ছে । সব মিলিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কোনওভাবেই পালন করা হয়নি ।"

NMGC যে নির্দেশিকা দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গার পাশে সাময়িকভাবে জলাধার তৈরি করতে হবে । যে জলাধারে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে । কলকাতায় একমাত্র ত্রিধারা সম্মিলনী ব্যতিক্রমী সেই ব্যবস্থায় প্রতিমা নিরঞ্জন করেছে । তারা মণ্ডপের সামনে তৈরি করেছিল কৃত্রিম জলাশয় । সেই জলাশয়ে রাখা হয়েছিল গঙ্গার জল । পাশাপাশি হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমা গলানো হয় ৷

সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, “এটিই আদর্শ প্রক্রিয়া হওয়া উচিত । এতে দূষণের হাত থেকে গঙ্গাকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে ।"

গঙ্গাদূষণ ঠেকাতে বিসর্জন নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও । তিনি বলেন, “ বিগত বছরগুলির মতো চলতি বছরেও আটকানো যায়নি দূষণ । ইতিমধ্যেই আমরা গঙ্গার জল সংগ্রহ করেছি । তার নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য । পাশাপাশি আমরা নিরঞ্জনের ছবিও তুলে রেখেছি । গঙ্গায় কাঠামো ভেসে বেড়ানোর ছবিও তোলা হয়েছে । সেই ছবি দেখিয়ে আমরা পরিবেশ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করব । ইতিমধ্যে এলাহাবাদে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ওই রাজ্য যদি পারে, তবে অন্য রাজ্যগুলির পারবে না কেন ? অভিন্ন নীতি হওয়া উচিত ।"

কলকাতার পৌর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে । সেক্ষেত্রে গঙ্গার পাড়ে, নদীর জল তুলে ভাসানের কাজ সম্পন্ন হবে । এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান কলকাতা পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক ।

কলকাতা, 28 অক্টোবর : মোট 24টি ঘাট । কলকাতায় সেই ঘাটগুলিতেই চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন । বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিরঞ্জন হওয়ার কথা । কথা মতো বিসর্জনের ঘাটগুলোতে তৎপর রয়েছে কলকাতা পৌরনিগম এবং পুলিশ প্রশাসন । প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেই জল থেকে কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা পৌরনিগমের । ক্রেনের মাধ্যমে তা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছেও । কিন্তু তারপরেও গঙ্গায় ভাসতে দেখা যাচ্ছে কাঠামো । ফলে দূষণ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ৷ প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে পরিবেশ কর্মীরা ।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশমী এবং একাদশী মিলিয়ে প্রায় 3 হাজার প্রতিমা ইতিমধ্যে বিসর্জন হয়েছে গঙ্গায় । কোরোনা আবহে এবার বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লালবাজার । বিসর্জনের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘাটে করা হয়েছে মার্কিং । প্রতিটি ঘাটে থাকছেন DC পদমর্যাদার অফিসার । মোট 3 হাজার পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে বিসর্জন প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্বে । গঙ্গার ঘাটগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং রিভার ট্রাফিক গার্ড । সব মিলিয়ে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থাপনা পাকা । এছাড়াও প্রতিটি বিসর্জনের ঘাটে কাজ করছেন কলকাতা পৌর নিগমের কর্মীরা । তারাই মূলত প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ক্রেনের ব্যবহারে কাঠামো তোলার কাজ করছেন । কিন্তু দ্বাদশীর দুপুরে দেখা গেল, 24টি ঘাটের প্রায় প্রতিটিতেই এখনও জলে ভাসছে বর্জ‍্য । বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঠামো এমনভাবে পাড়ে তোলা হয়েছে যে জোয়ারের জলে তা ফের চলে যেতে পারে নদীতে ।

তথ্য বলছে, 2017 সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে গঙ্গা দূষণ রোধে মামলা করেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত । সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গঙ্গায় ভাষণ দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে । কারণ, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের কারণে জল দূষিত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের । কী ধরনের ক্ষতি ?

পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, প্রতিমায় যে রং দেওয়া হয় তাতে ক্রোমিয়াম, সিসাসহ ক্ষতিকর পদার্থ থাকে । প্রতিমা জলে পড়লেই সেই রং দ্রুত জলে মিশে যায় । যা জল দূষণের কারণ । এই সিসা জাতীয় পদার্থের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয় নদীর বাস্তুতন্ত্রের । এরফলেই সম্প্রতি 'ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা' জারি করেছে নির্দেশিকা । সেই নির্দেশিকায় NMCG পশ্চিমবঙ্গ সহ 11টি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল । সেই নির্দেশিকা সূত্র ধরে উত্তরপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ করেছে । তবে সব রাজ্য এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশিকা মানেনি । কিন্তু যাতে সেই নির্দেশিকা মানা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে পুজোর সময় সোশাল মিডিয়ায় চালায় 'নো পলিউশন দুর্গাপূজা' শীর্ষক প্রচার । সেই প্রচারে বলা হয়েছিল, নিরঞ্জনের আগে প্রতিমার গা থেকে পুজোর ফুল, সাজসজ্জা এমনকী প্রতিমার বসন খুলে নিতে হবে । কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এই নিয়মও পালন করা হয় না ।

গঙ্গার পাড়ে বসে বরানগরের সুরেশ দাস বললেন, “ দেখাই যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত বিসর্জনের বর্জ্য জলে রয়েছে । প্রশাসনের কাঠামো তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো তোলা হয়নি । তার ফলে জলের ক্ষতি হচ্ছে । প্রশাসনের উচিত, এ বিষয়ে ব্যবস্থা করা ।"

রাধেশ্যাম দাস নামে এক লঞ্চ যাত্রীও জানালেন তেমনটাই । গঙ্গার জলে ভেসে বেড়ানো খড়ের দেখিয়ে তিনি বলেন, “এখনও যেভাবে কাঠামো-খড় ভেসে বেড়াচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের । প্রশাসনের দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । এবার প্রতিমার উচ্চতা কম হয়েছে ৷ অনেক ক্ষেত্রে পুজো হয়নি । যদি মহামারী না থাকত তবে নিশ্চিতভাবে আরও বেশি ক্ষতি হত গঙ্গার ।"

এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এবারেও গঙ্গায় হাজার হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে । যার 60 শতাংশে ধাতব রং যেমন ক্রোমিয়াম, সিসা, অ্যালুমিনিয়াম, গ্লসি ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছিল । সেগুলি জলে পড়ার ফলে জল দূষিত হয়েছে । এই ধাতব পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক পারদ । এই বিষাক্ত পদার্থগুলি গঙ্গার দূষণকে 1 হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে । দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উচিত ছিল বিসর্জনের আগে জলের দূষণমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা । বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর আরও একবার দূষণ মাত্রা পরীক্ষা করে তার তুলনামূলক বিচার করা উচিত ছিল । তাহলেই বোঝা যেত, এই সময়টায় জলদূষণ কতটা বেড়ে থাকে । প্রতিবারের মতো এবছরও দেখা যাচ্ছে জলে ভাসছে কাঠামো । প্রতিমার সাজসজ্জাও জলে ভেসে বেড়াচ্ছে । সব মিলিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কোনওভাবেই পালন করা হয়নি ।"

NMGC যে নির্দেশিকা দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গার পাশে সাময়িকভাবে জলাধার তৈরি করতে হবে । যে জলাধারে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে । কলকাতায় একমাত্র ত্রিধারা সম্মিলনী ব্যতিক্রমী সেই ব্যবস্থায় প্রতিমা নিরঞ্জন করেছে । তারা মণ্ডপের সামনে তৈরি করেছিল কৃত্রিম জলাশয় । সেই জলাশয়ে রাখা হয়েছিল গঙ্গার জল । পাশাপাশি হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমা গলানো হয় ৷

সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, “এটিই আদর্শ প্রক্রিয়া হওয়া উচিত । এতে দূষণের হাত থেকে গঙ্গাকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে ।"

গঙ্গাদূষণ ঠেকাতে বিসর্জন নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও । তিনি বলেন, “ বিগত বছরগুলির মতো চলতি বছরেও আটকানো যায়নি দূষণ । ইতিমধ্যেই আমরা গঙ্গার জল সংগ্রহ করেছি । তার নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য । পাশাপাশি আমরা নিরঞ্জনের ছবিও তুলে রেখেছি । গঙ্গায় কাঠামো ভেসে বেড়ানোর ছবিও তোলা হয়েছে । সেই ছবি দেখিয়ে আমরা পরিবেশ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করব । ইতিমধ্যে এলাহাবাদে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ওই রাজ্য যদি পারে, তবে অন্য রাজ্যগুলির পারবে না কেন ? অভিন্ন নীতি হওয়া উচিত ।"

কলকাতার পৌর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে । সেক্ষেত্রে গঙ্গার পাড়ে, নদীর জল তুলে ভাসানের কাজ সম্পন্ন হবে । এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান কলকাতা পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.