কলকাতা, 27 মে : গলব্লাডারে স্টোন । বর্তমানে সকলেই অল্পবিস্তর শব্দটার সঙ্গে পরিচিত । দ্রুতগতির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটতে গিয়ে মানুষ নানারকম ছোটো বড় অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে । বাড়ছে নানা রোগ । তারইমধ্যে একটা গলব্লাডার স্টোন বা পিত্তথলিতে জমা পাথর । গলব্লাডারে স্টোন গর্ভাবস্থায় দেখা দিতে পারে । গর্ভনিরোধক ওষুধ অর্থাৎ, কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেলেও পিত্তথলিতে জমতে পারে পাথর । কোন কোন কারণে হতে পারে এই স্টোন? গলব্লাডারের স্টোন কেন হয়? অস্ত্রোপচার-ই এর একমাত্র সমাধান বা চিকিৎসা? গলব্লাডারের স্টোন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিলেন চিকিৎসক অমিতাভ ঘোষ।
গলব্লাডার স্টোনের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার-ই কি একমাত্র চিকিৎসা?
অমিতাভ ঘোষ- বিষয়টি নির্ভর করে রোগীর বয়সের উপর । রোগীর বয়স কম হলে অস্ত্রোপচার করা হয় । কারণ অস্ত্রোপচার করা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। বেশি বয়সি রোগীর ক্ষেত্রে, বয়সের পাশাপাশি তাঁর অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না দেখতে হয় । তাই সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার না করলেও চলে। তবে, ব্যথা হতে থাকলে অস্ত্রোপচার করতেই হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে USG করার সময় ধরা পড়ে গলব্লাডারের স্টোন । কিন্তু একবার স্টোন বা পাথর হয়ে গেলে ওষুধে সারে না ।
গলব্লাডার স্টোন, এই বিষয়টি আসলে কী?
অমিতাভ ঘোষ- লিভারে পিত্ত তৈরি হয়। যা খাবারের সঙ্গে মিশে হজমে সাহায্য করে। খাবারের সঙ্গে মিশে থাকা বালিকণা থেকে গলব্লাডারে স্টোন হয়। আয়তনে বড় আকারের পাথর হতে পারে। স্টোন হলে পেটে ব্যথা হতে পারে, গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে, হতে পারে জন্ডিসও ।
কোন কারণে গলব্লাডারে স্টোন হতে পারে ? বয়স কি সেখানে কোনও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে?
অমিতাভ ঘোষ- বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয়। তবে ডায়েট একটি ফ্যাক্টর। বেশি পরিমাণে ভাজা জাতীয় খাবার খেলে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আবার অঞ্চল হিসেবেও হতে পারে । যেমন, পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে গলব্লাডার স্টোন কম দেখা যায়। জিনগত কারণ ও খাদ্যাভ্যাস-দুটো এক্ষেত্রে কাজ করে । অনেকক্ষেত্রে, ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ার কারণেও স্টোন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগ থেকে বিশেষ করে বাচ্চাদের হেমোলাইটিক রোগের কারণে স্টোন হতে পারে । বড়দের ক্ষেত্রে গলব্লাডার স্টোনের জন্য সবসময় কারণ দেখা যায় না। জেনেটিক কারণে স্টোন হয় এটা সঠিক নয় । তবে এমনও দেখা যায়, বাবার হয়েছে তাঁর ছেলেরও হয়েছে গলব্লাডার স্টোন ।
কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেলে কেন গলব্লাডারে স্টোন হতে পারে?
অমিতাভ ঘোষ- দীর্ঘ সময় ধরে কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেলে গলব্লাডারে স্টোন হতে পারে। হরমোনাল চেঞ্জের কারণে এমনটা হয়। পিত্তর কোলেস্টেরল এবং সল্ট থাকে। এই দুটির ভারসাম্যের অদল বদল ঘটলে গলব্লাডারে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রেগনেন্সির সময়েও গলব্লাডারে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ গলব্লাডার তখন ঠিকমতো কন্ট্রাক্ট করে না। এর ফলে বাইলস অর্থাৎ, পিত্ত জমে যায়। পিত্ত জমতে জমতে স্টোন হয়ে যেতে পারে।
গলব্লাডারে স্টোন হয়েছে কী ভাবে বুঝতে পারা যাবে?
অমিতাভ ঘোষ- অনেকের ক্ষেত্রেই কোনও উপসর্গ থাকে না। হয়তো অন্য কোনও কারণে USG করার সময় ধরা পড়ল গলব্লাডারে স্টোন রয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়।
কোন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়?
অমিতাভ ঘোষ- একটু খাওয়ার পরে দেখা গেল, পেটটা ভার হয়ে যাচ্ছে । যতটা খেতে পারতেন, তার থেকে পরিমাণ অনেক কমে গেছে। খাবার পরে কষ্ট হয় । শরীরে অস্বস্তি হয় । অনেকের পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয়।
গলব্লাডার স্টোনের জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু রোগীর অন্য কোনও সমস্যা যেমন ডায়াবিটিস থাকলে কী করা হয়?
অমিতাভ ঘোষ- ডায়াবিটিস থাকলেও অস্ত্রোপচার করিয়ে নিতেই হবে। কারণ এক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অনেক পরে দেখা দেয়। যাঁদের ডায়াবিটিসের সমস্যা আছে, অনেক সময় তাঁদের ক্ষেত্রে গলব্লাডার স্টোনের বিষয়টি বোঝা যায় না। হঠাৎ দেখা গেল, অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। শরীরে অন্য কোনও সমস্যা থাকলেও অস্ত্রোপচার করতে সমস্যা নেই।
সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে, ওষুধের মাধ্যমে গলব্লাডারের পাথর গলিয়ে দেওয়া যায়। এটা কি আদৌ সম্ভব?
অমিতাভ ঘোষ- একবার যদি স্টোন তৈরি হয়ে যায়, তা গলানো যায় না। কিডনিতে যদি ছোট্ট কোনও স্টোন থাকে তবে তা ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু গলব্লাডারের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয় ।
গলব্লাডারে স্টোনের কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা?
অমিতাভ ঘোষ- খুব সাধারণ বিষয় নয়। তবে পাথরটি অগ্ন্যাশয়ে চলে গেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। গলব্লাডারে যদি ইনফেকশন হয়ে যায়, তখন মৃত্যু হতে পারে।