কলকাতা, 15 এপ্রিল: নাম ভেনাস ফরেন লিকার অফ শপ । ছবিতে সাজানো বিদেশি সব ব্রান্ডের হুইস্কি, রাম, ভদকা । ছবি আছে সিঙ্গল মল্ট স্কচ হুইস্কিরও । সঙ্গে দেওয়া রয়েছে যোগাযোগের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর । নম্বরটি হল 7662068047, এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অর্ডার করলেই নাকি বাড়ির দরজায় হাজির হয়ে যাবে মদ!
মদের ডেলিভারির বিজ্ঞাপন দেখে রীতিমতো উৎসাহিত হয়ে ওঠেন কলকাতা, হাওড়ার অনেক সুরাপ্রেমী । লকডাউনের জেরে এমনিতেই ক্লাব, পাব, বার অন শপ, অফ শপ সবই বন্ধ । এই আকালের বাজারে যদি হোম ডেলিভারি পাওয়া যায় সুরার, এণনটাই ভেবেছিল অনেকে ।
লকডাউনে মিষ্টির দোকান ছাড় পাওয়ার পর থেকেই রাজ্যবাসীর একাংশ দাবি তুলেছিল মদের হোম ডেলিভারি শুরু করার ৷ সুরাপ্রেমীদের এই চাহিদাকেই হাতিয়ার করেছে একদল প্রতারক ৷ হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ঘুরছে মদের বোতলের ছবি সহ বেশ কয়েকটি নম্বর ৷ বলা হচ্ছে, এই নম্বরে যোগাযোগ করলেই বাড়িতে বসে মিলবে পছন্দের ব্র্যান্ড ৷ তবে এই বিজ্ঞাপনের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে বড় প্রতারণা চক্র ।
বিজ্ঞাপনে কলকাতার মহাত্মা গান্ধী রোড এলাকার এক লিকার শপের নাম লেখা । 7662068047 এই নম্বরে যোগাযোগ করলেই বাড়িতে মদের ডেলিভারি করা হবে বলে দাবি করা হচ্ছে ৷ তালিকায় রয়েছে আরও একটি নম্বর, 892079 5676 এই নম্বরে ফোন করে টাকা দিলেই লিন্ডসে স্ট্রিট, নিউ মার্কেট, ধর্মতলা এলাকায় হোম ডেলিভারি করা হবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও হরেক ধরনের মদ, বলা হচ্ছে এমনই ৷ হাওড়াবাসীদের জন্য কলকাতার মহাত্মা গান্ধি রোডের এক অফ শপ কাউন্টারের নম্বর দেওয়া ৷ এক ফোনেই বাড়িতে নাকি পৌঁছে যাবে রাম,ভদকা,ওয়াইন বা চিল্ড বিয়ার ৷
বিকাশ মিশ্র নামে এক ব্যক্তি এই ফাঁদে পা দিয়ে যোগাযোগ করেন ওই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে । সেখানে বলা হয়, অনলাইনে পাঠাতে হবে 900 টাকা, তাহলেই পাওয়া যাবে পছন্দের ব্র্যান্ড । বিকাশ রামন জেকে নামক একটি ইউপিআই নম্বরে পাঠিয়েও দেন সেই টাকা । তবে পছন্দের ব্র্যান্ড বাড়ি অবধি আর আসেনি । ফের যোগাযোগ করা হলে তাঁকে বলা হয়, লাগবে ডেলিভারি চার্জ । বিকাশ ডেলিভারি চার্জ বাবদ পাঠান 200 টাকা । তাতেও তাঁর পছন্দের জিনিস হোম ডেলিভারি হয়নি ।
কিন্তু মহাত্মা গান্ধি রোডের লিকার শপটি সত্যিই কি হোম ডেলিভারি করছে? ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তুষার টেবরিওয়াল ETV ভারতকে সাফ জানান, “এমন কোনও অনুমতি এখনও পর্যন্ত রাজ্য আবগারি দপ্তর দেয়নি । তাই হোম ডেলিভারির প্রশ্নই আসেনা ৷ এটি করছেন কিছু প্রতারক ।’’
বিষয়টি জানার পরই তুষার লালবাজারের শরণাপন্ন হচ্ছেন বলে জানান । অন্যদিকে লালবাজার সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে দায়ের হয়েছে মামলা । সাইবার ক্রাইম সেল তদন্তেও নেমে পড়েছে । এই প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি । এখনও পর্যন্ত জানা গেছে যে রাজস্থান, ওড়িশা এবং অসম থেকে বেশকিছু প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে । তারাই সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ৷ পুলিশ ওই প্রতারকদের খুঁজছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ করা হবে ৷’’