কলকাতা, 17 অগস্ট: স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন অর্থাৎ, 14 অগস্টকে দেশভাগের স্মৃতি জড়িয়ে 'পার্টিশন হরর রিমেম্ব্রেন্স ডে' হিসেবে পালন করার বার্তা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি । কিন্তু বুধবার কলকাতা মেট্রো রেলের (Metro Railway of Kolkata) অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উলটো সুর অধ্যাপক সুগত বসু (Sugata Basu) জানান, দেশভাগের স্মৃতির ভয়াবহতা ও বীভৎসতাকে তুলে ধরতে চান না তিনি । একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে 'হরর অফ পার্টিশন' না-বলে দেশভাগের সঙ্গে যে দুঃখ জড়িত রয়েছে সেই বিষয়টাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে 'ট্র্যাজেডি বা পিটি অফ পার্টিশন' আখ্যা দিতে চান বলে জানান সুগত।
তাই 14 অগস্টকে দেশভাগের সময় যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশ ছাড়া বাড়ি ছাড়া হয়ে পড়েছিলেন সেই স্মৃতি স্মরণ দিবস হিসাবে 'হরর অফ পার্টিশন' দিবস না-বলে 'ট্র্যাজেডি অফ পার্টিশন' বা 'পিটি অফ পার্টিশন' বললে ভালো হয়। এমনটাই মন্তব্য করলেন অধ্যাপক সুগত বসু । বুধবার কলকাতা মেট্রোয় রেলের একটি অনুষ্ঠানে এসে তিনি একথা বলেন তিনি ।
অধ্যাপক সুগত বসু বলেন, "একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমার মনে হয় যে দেশভাগ একটা ট্র্যাজেডি । সে জন্যই তো যেদিন 1947 সালে যেদিন দিল্লিতে স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে সেই দিন মহাত্মা গান্ধি কলকাতায় চলে এসেছিলেন। সেদিন তো তিনি নয়াদিল্লির উৎসবে যোগ দেননি। আমাদের ঠাকুরদাদা শরৎচন্দ্র বসু যিনি ব্রিটিশদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে আট বছর জেলে কাটিয়েছিলেন তিনিও কিন্তু সেদিন চুপ করে বাড়িতে বসে ছিলেন। উৎসবে সামিল হতে তাঁর মন চায়নি। কারণ তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ রুখতে পারেননি। তাই আমার মনে হয় দেশভাগকে 'হরর অফ পার্টিশন' না-বলে ট্র্যাজেডি' বা 'পিটি অফ পার্টিশন' বলাই ভালো।"
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব'-এর অঙ্গ হিসেবে বুধবার এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন চত্বরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সংগ্রামী জীবন এখন তাঁর সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত থাকা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন করে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। শিশির বসু ও কৃষ্ণা বসুর দুই পুত্র সুগত বসু ও সুমন্ত্র বসু এই অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নতুন তৃণমূল হোর্ডিং কি আদতে কালীঘাটের উপর ক্যামাক স্ট্রিটের চাপ তৈরির খেলা
200 বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় পাতায় যাঁর আত্মত্যাগ ও বীরগাথার কথা বারে বারে উঠে এসে তিনি হলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। অল্পবসয় থেকে শুরু করে ছদ্মবেশে দেশ ছাড়ার আগে পর্যন্ত সুভাষ চন্দ্র বসুর দাদা শিশির বসু এবং তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু ছিলেন পাশে। সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের সমস্ত জানা-অজানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষ্ণা বসু বাংলায় একাধিক বই লিখেছেন। লেখিকার সেই বাংলা লেখাগুলিকে একত্রিত করে তাঁর পুত্র সুমন্ত্র বসু ইংরেজিতে অনুবাদ করে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছেন। বইটির নাম 'নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস লাইফ পলিটিক্স অ্যান্ড স্ট্রাগল'। বইটিতে রয়েছে 18টি অধ্যায়।
সুভাষচন্দ্র বোস কেবল একটি নাম নয়, তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীর আবেগ। তাই দেশের 200 বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সংগ্রামীদের কথা মনে করিয়ে দিতে এবার এক অভিনব উদ্যোগ নিল কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ (Esplanade metro station to have Netaji Subhash Chanda Bose memorial)। সুভাষচন্দ্র বসু এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নানান ছবি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের এই অংশ।