কলকাতা, 24 নভেম্বর : সল্টলেকে সেন্ট্রাল পার্ক মেলা মাঠের সামনে 11 নভেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছেন রাজ্যের হাজারের বেশি পার্শ্বশিক্ষক । এরই মধ্যে সবাইকে অবাক করে 11 নভেম্বর থেকে পার্শ্বশিক্ষকদের অনুপস্থিতির হিসেব চেয়ে পাঠাল স্কুল শিক্ষা দপ্তর । পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্পেশাল প্রজেক্ট অফিসারের তরফ থেকে জেলাগুলির কাছে নোটিশ পাঠিয়ে তা জানতে চাওয়া হয়েছে ৷ পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোন কোন পার্শ্বশিক্ষক 11 নভেম্বর থেকে স্কুলে অনুপস্থিত । সেই তালিকা চাওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট একটি ফরম্যাটে । এটা তাঁদের অনশন-আন্দোলনকে ভেস্তে দেওয়ার একটা চক্রান্ত বলে মনে করছেন পার্শ্বশিক্ষকরা ।
পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, "সরকার এভাবে আমাদের আটকাতে পারবে না । আমরা প্রত্যেকটা SPD ও DEO-কে সাংগঠনিকভাবে মেলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, আমরা চাইল্ড রেজিস্টারের কাজ বন্ধ করেছি এবং স্কুল বয়কট করেছি । আমাদের মূল দাবি বেতন কাঠামো যতক্ষণ না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত স্কুল বয়কট ও একই সঙ্গে ধরনা ও আমরণ অনশন সবটাই চলবে । সরকারের সব চক্রান্ত এই বিরাট জমায়েতের কাছে পরাস্ত হতে বাধ্য হবে ।"
আজ পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি 14 দিনে ও অনশন দশম দিনে পড়ল । প্রতিদিনের মতো আজও বেশ কয়েকজন পার্শ্বশিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন । পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অনশনকারীরা প্রতিদিন 4-5 জন করে হাসপাতালে ভরতি হচ্ছেন । আজকেও এই মুহূর্তে চারজন আছেন বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে । আর একজন অবস্থানকারী ও একজন অনশনকারী ভরতি আছেন নীলরতন হাসপাতালে । ICU-তে আছেন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে । সুতরাং, আমাদের এই সরকারের নির্লজ্জতা, অমানবিকতার দিক দিন দিন যেভাবে ফুটে উঠছে, আমরা মনে করছি নির্লজ্জতার একদম শিখরে পৌঁছে গেছে এই সরকার । আজ পর্যন্ত এদের মনে হল না যে একটু কথা বলা উচিত ৷ একটা যোগসূত্র বার করা উচিত । আমরা দীর্ঘকাল এখানে বসে থাকতে আসিনি । সরকারের থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে আমাদের এই আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর জায়গায় নিয়ে যেতে হচ্ছে ।"
পার্শ্বশিক্ষকদের অনুপস্থিত থাকার হিসাব চাওয়ার বিষয়ে মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সংবিধান আমাদের অধিকার দিয়েছে ধর্মঘট ও আন্দোলন করার । সেই সাংবিধানিক অধিকার মেনেই কোর্টও আজকে এখানে 144 ধারা তুলে দিতে বাধ্য করেছে সরকারকে । সেটার বলেই আজকে আমরা এখানে বসেছি । সুতরাং, আমরা মনে করি সাংবিধানিক অধিকারের বলে গণতান্ত্রিক পথে আমাদের এই আন্দোলন চলছে । কোনও সরকারের ক্ষমতা নেই আমাদের কোনও ক্ষতি করার । ক্ষতি করতে পারলে হয়ত বেতন কাটবে । আমরা মনে করব, সেই বেতনটা আমরা এই সরকারকে দান করে দিলাম । যেভাবে সরকার মেলা-খেলায় খরচ করে, আমাদের বেতনটা কেটে নিয়ে সেখানে খরচ করুক । কোনও রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা আমাদের উপর নিতে পারবে না । আর নিলে আমরা আইনের উপর ভরসা রাখি যে, আইন আমাদের বাঁচাবে ।"
পাশাপাশি, কোনও চক্রান্ত বা কোনও অবস্থাতেই তাঁরা আন্দোলন তুলে নেবেন না বলে জানাচ্ছেন মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "আমাদের আন্দোলন চলবে । আমরা এই মাটি ছেড়ে উঠব না । আদালত যতক্ষণ আছে, আমরা মনে করি আমাদের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না । সরকার যতক্ষণ না আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বা সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না, আমরা এই আন্দোলনকে কোনওভাবেই তুলে দেব না ৷"