নিউটাউন, 9 সেপ্টেম্বর : কলকাতার ভবানীপুর (Bhabanipur) আসনে উপনির্বাচন ঘোষিত হতেই নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission of India) নিয়ে হঠাৎই যেন অবস্থান বদলে গিয়েছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবিরের ! উপনির্বাচন ঘোষণার আগের পর্যন্ত কমিশনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে সরব ছিল তৃণমূল কংগ্রেস (All India Trinamool Congress) ৷ যা আগাগোড়া অস্বীকার করে এসেছে বিজেপি (Bharatiya Janata Party) ৷ আর উপনির্বাচন ঘোষণার পরই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে গেরুয়াশিবির ৷ অন্যদিকে, খুশির হাওয়া তৃণমূলের ঘরে ৷ বিজেপির তথা বিরোধীদের প্রশ্ন, কেবলমাত্র একটি আসনেই কেন উপনির্বাচন ঘোষণা করা হল ? তবে কি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে তারা ৷ বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও (Dilip Ghosh) ৷
আরও পড়ুন : Bhabanipur by-election : গণেশ চতুর্থীতে মনোনয়ন দাখিল, তৃণমূল কর্মীদের প্রতি দরজায় যাওয়ার নির্দেশ মমতার
রাজ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দু’টি আসনে ভোট হয়নি ৷ আসন দু’টি হল মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর ৷ এছাড়া, নানা কারণে উপনির্বাচন করতে হবে মোট পাঁচটি আসনে ৷ অথচ কেবলমাত্র ভবানীপুর আসনেই উপনির্বাচন ঘোষণা করেছে কমিশন ৷ ভোট হবে আগামী 30 সেপ্টেম্বর ৷ একই দিনে নির্বাচন সারা হবে সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরেও ৷ বিরোধীদের প্রশ্ন, বাকি চারটি আসন কী দোষ করল ? কেন একইসঙ্গে সেখানেও উপনির্বাচন করানো হচ্ছে না ? সূত্রের দাবি, মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতেই ভবানীপুরে উপনির্বাচন ঘোষণা করেছে কমিশন ৷ যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন বলে আগে থেকেই কার্যত স্থির ছিল, তাই ওই কেন্দ্রে ভোট না হলে রাজ্য়ে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী (Hari Krishna Dwivedi) ৷ তার ভিত্তিতেই নাকি কেবলমাত্র ভবানীপুরে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে কমিশন ৷
দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘বিশেষ কোনও প্রার্থী যাতে ভোটে জেতেন, তার ব্যবস্থা করে দেওয়াই কি নির্বাচন কমিশনের কাজ ? বলা হচ্ছে, ভবানীপুরে উপনির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যদি হেরে যান, তাহলে কি সেই সংকট তৈরি হবে না ?’’ দিলীপের ইঙ্গিত স্পষ্ট ৷ যেখানে গোটা দেশে মোট 31 টি আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে শুধুমাত্র ভবানীপুরকেই কেন অগ্রাধিকার দেওয়া হল ? দিলীপের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কি চাপের মুখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ?’’ ইতিমধ্যেই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে গোটা ঘটনা ৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতির মতে, ভবানীপুরে যা হচ্ছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক ৷ তাই আদালতে মামলা হওয়াটাও খুব একটা অনভিপ্রেত কিছু নয় ৷
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh : করোনা আবহে উপনির্বাচন বড় প্রশ্ন, পুজোয় অনুদান ভোট কেনার চেষ্টায়; আক্রমণ দিলীপের
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে পর্যন্ত তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রের সঙ্গে আঁতাত করে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে আটকাতে চাইছে নির্বাচন কমিশন ৷ করোনার দোহাই দিয়ে উপনির্বাচন না করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে ৷ যদিও ভবানীপুরে উপনির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই শাসকশিবিরে খুশির হাওয়া ৷ দলের তরফে প্রার্থী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নাম ঘোষণা করার পর দেওয়াল লিখনও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ চলছে প্রচারও ৷ কিন্তু বাকিরা চুপচাপ ৷ কমিশনকে তুলোধনা করতেই তারা ব্যস্ত ৷ ব্যতিক্রম নয় বিজেপি-ও ৷ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে উঠতে পারেনি তারা ৷ তবে কি হারের ভয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চাইছেন না বিজেপি-র কোনও প্রতিনিধি ৷ মানতে নারাজ দিলীপ ঘোষ ৷ উনিশের লোকসভা ভোট এবং একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রামের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে তাঁর বার্তা, বিজেপি এখনও লড়াইয়ের ময়দানেই আছে ৷