কলকাতা, 1 জুলাই : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) ঘোষণা মতোই আজ থেকে রাজ্যে পথে নামল বাস, অটো, টোটো ৷ কোভিড সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকায় (Covid Restrictions) 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বাস (Private Bus) চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৷ তবে বাস্তবে দেখা গিয়েছে, রাস্তায় বেসরকারি বাস হাতে গোনা ৷ আর অটোর উপর ভরসা করতে গেলে ট্যাঁকের কড়ি খসছে হুড়মুড়িয়ে ৷ কারণ ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে রেখেছেন অটোচালকরা ৷ ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে ৷ রাস্তায় নেমে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ৷
গত 28 জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, করোনা বিধিনিষেধ 15 জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার । তবে 1 জুলাই থেকে 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলবে সরকারি ও বেসরকারি বাস । এর পাশাপাশি চলবে অটো ও টোটোও । তবে ট্রেন বা মেট্রো চলাচলে এখনই ছাড় দেওয়া হয়নি । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই বাসমালিকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, জ্বালানির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিধিনিষেধ মেনে যাত্রী সাধারণকে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাস্তায় নামানোর আগে বাসের সমস্ত কন্ডাক্টর ও চালকের টিকাকরণ করাতে হবে ৷ বাসগুলিকেও নিয়মিত সংক্রমণমুক্ত করতে হবে ৷ যাত্রীদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ৷ বাসমালিকরা এ সব শুনে বলেছিলেন, এই নির্দেশ মানা হলে তাঁদের চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হবে ৷ এই অবস্থায় 1 জুলাই আদৌ রাস্তায় বাস নামবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বাসমালিকরা ৷
আরও পড়ুন: রাজ্যে 15 জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ , চালু হচ্ছে বাস পরিষেবা
বাস্তবে সেই আশঙ্কা সত্যি হল ৷ অন্তত প্রথম দিন ৷ রাস্তায় বাস, অটো পাওয়ার আশা নিয়েই আজ যে যার কাজে বেরিয়েছিলেন আমজনতা ৷ কিন্তু রাস্তায় নেমে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ৷ সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৷ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন শহরে বেসরকারি বাস চলে প্রায় 3000 ৷ এসি বাস চলে শ'তিনেক ৷ কিন্তু আজ রাস্তায় বেরিয়ে বাসের দেখা মেলেনি ৷ ব্যক্তিগত গাড়িই বেশি নজরে এসেছে ৷
আরও পড়ুন : করোনা বিধিনিষেধে কর্মহীন পরিবহণ কর্মীদের পাশে আইএনটিটিইউসি
অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে আগেই বলেছিলেন, "এর আগের আনলক পর্যায়েও আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বাসগুলি চালিয়ে দেখেছিলাম ৷ তাতে আমাদের কোনও লাভ তো হয়ইনি, উল্টে আমাদের নিজেদের পকেট থেকেই টাকা ঢালতে হয়েছিল ৷ গতবারও 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে বলা হয়েছিল ৷ কিন্তু ওই ব্য়বস্থায় কিছুদিনের মধ্যেই পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে ৷ রোজ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে ৷ 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হলে যে টুকু টিকিট বিক্রি হবে, তাতে আমরা মারা পড়ব ৷ তবে সংগঠনের তরফে আমরা কাউকে বাস চালাতে নিষেধ করব না ৷ যাঁরা চালাতে পারবেন, তাঁরা চালাবেন ৷"
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরও বাস চালানো নিয়ে চিন্তায় বাসমালিকরা
বেসরকারি বাসের মালিক সুরজিৎ সাহার কথায়, "গতবার যখন 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে আমরা প্রথম পরিষেবা দেওয়া শুরু করি, তখন আমরা আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত হয়ে পড়ি ৷ অন্যদিকে, গতবারের চেয়ে এ বার জ্বালানির দাম আরও বেড়েছে ৷ এখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম 100 টাকা ছুঁই ছুঁই ৷ সরকারি ও বেসরকারি বাস চালাতে বলা হচ্ছে ৷ অথচ ট্রেন বা মেট্রো রেল চলবে না ৷ সংক্রমণ এড়াতে এখন বহু মানুষ নিজেদের গাড়িতেই কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন ৷ না-হলে অফিসের তরফে গাড়ি দেওয়া হচ্ছে ৷ এই অবস্থায় বাসে যাত্রী হবে কী করে ?"
আরও পড়ুন : পথে নামছে বাস, খুলছে জিম-পার্লার ; আর কীসে কীসে ছাড় দেখে নিন
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাসমালিকদের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ ৷ সবমিলিয়ে রাস্তায় বাসের দেখা নেই ৷ আজ যাঁরা বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনও উপায় না-পেয়ে অবশেষে অটোয় উঠেছেন, তাঁদের আবার চক্ষু চড়কগাছ করে দিয়েছেন অটোচালকরা ৷ কারণ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রুটে যে যাঁর ইচ্ছে মতো ভাড়া চাইছেন ৷ কোথাও 10 টাকা ভাড়া এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে 15 বা 18 টাকা, আবার যেখানে ভাড়া ছিল 15 টাকা, সেই ভাড়া বাড়িয়ে 20 টাকা 25 টাকাও নেওয়া হচ্ছে ৷ অটোচালকদের দাবি, এতদিন তাঁদের কোনও আয় ছিল না ৷ এখন যাত্রীর সংখ্যাও কম ৷ তাই ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা ৷
সবমিলিয়ে রাজ্যে বাস-অটো চালু হওয়ার পর প্রথম দিনেই চরম হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ ৷