কলকাতা, 24 অগস্ট: এবার এক অসহায় নাবালকের পাশে দাঁড়াল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) ৷ পিতৃহারা ওই কিশোরের আইনজীবী জানিয়েছেন, ছেলেটির বাবার মৃত্যুর পর তাঁর চাকরিটি পান নাবালকের সৎ মা ৷ এর কিছু দিন পর অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি ৷ তারপর থেকে প্রয়াত প্রাক্তন স্বামীর পরিবারকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন ওই মহিলা ৷ এদিকে, ওই কিশোর সবেমাত্র মাধ্যমিক পাশ করেছে ৷ তার পরিবারের দ্বিতীয় সদস্য বলতে রয়েছেন, সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ৷ তিনি কিশোরের ঠাকুরদা ৷ তাঁর পক্ষে এই বয়সে উপার্জন করা সম্ভব নয় ৷ সব শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় (Justice Abhijit Ganguly) ৷ ভরা এজলাসেই সরাসরি কিশোরকে আশ্বাসের বাণী শোনালেন তিনি ৷ একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের উদ্দেশে বিচারপতির নির্দেশ, পরবর্তীতে শুনানিতে অভিযুক্ত মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হতে হবে তাঁকে ৷ মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী 30 অগস্ট ৷
ওই নাবালকের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ৷ সে আদিবাসী পরিবারের সন্তান ৷ আগেই ছেলেটি তার মাকে হারায় ৷ এরপর তার বাবা টিঙ্কু রানি টিঙ্গুয়া নামে আর এক মহিলাকে বিয়ে করেন ৷ কিশোরের বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন ৷ তাঁর রোজগারেই চলত সংসার ৷ কিন্তু, হঠাৎই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ এরপর স্বামীর চাকরি পান টিঙ্কু ৷ প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকই ছিল ৷ কিন্তু, পরে অন্য একজন বিয়ে করেন টিঙ্কু ৷ পুরনো শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি ৷ কিন্তু, প্রয়াত প্রাক্তন স্বামীর চাকরি ছাড়েননি ৷
আরও পড়ুন: সিবিআই-এর আইনজীবীর আচরণে ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়
এদিকে, অর্থাভাবে ওই নাবালক ও তার বৃদ্ধ ঠাকুরদার কার্যত অনাহারে দিন কাটতে থাকে ৷ বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা ৷ এর আগের শুনানিতে আদালত জানিয়েছিল, টিঙ্কুকে তাঁর প্রয়াত প্রাক্তন স্বামীর পরিবারের দেখভালের সমস্ত দায়িত্ব নিতে হবে ৷ ইতিমধ্য়ে ওই নাবালক 80 শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে ৷ কিন্তু, টাকার অভাবে পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার ৷ সেই সমস্যাও মেটে আদালতের হস্তক্ষেপে ৷
আদালতের নির্দেশেই জেলা শিশুকল্যাণ আধিকারিক ওই কিশোরকে একটি স্কুলে ভর্তি করে দেন ৷ আগে ওই পরিবার থাকত ত্রিপলের ঘরে ৷ সরকারের তরফে তাদের পাকা বাড়ি করে দেওয়া হয় ৷ একইসঙ্গে টিঙ্কুকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তিনি যেন প্রতি মাসে তাঁর প্রয়াত প্রাক্তন স্বামীর পরিবারকে 7 হাজার টাকা করে মাসোহারা দেন ৷ টিঙ্কু তাতে রাজিও হয়ে যান ৷ কিন্তু, গত এপ্রিল মাস থেকে আবারও টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন তিনি ৷ তার জেরেই ফের আদালতে আসতে বাধ্য হয় নাবালকের পরিবার ৷
বুধবার আদালতে সমস্ত ঘটনা জানার পর ক্ষুব্ধ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় ওই কিশোরকে বলেন, "তোমার জন্য আদালত আছে ৷ চিন্তা নেই ৷ ভালো করে পড়াশোনা কর ৷" এরপরই বিচারপতি বলেন, আগামী শুনানির দিন অভিযুক্ত মহিলাকে আদালতে হাজির করাতে হবে ৷ সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে ৷ তিনি নিজেও ওই দিন আদালতে হাজির থাকবেন ৷ বিচারপতি সাফ জানিয়ে দেন, যদি টিঙ্কু তাঁর প্রয়াত প্রাক্তন স্বামীর পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালন না করেন, তাহলে আদলত তাঁর বর্তমান চাকরিটি কেড়ে নিতেও দ্বিধা করবে না ৷