কলকাতা, 1 অক্টোবর: মহাত্মা গান্ধিকে (Mahatma Gandhi) নিয়ে লেখা একটি বই প্রকাশ (Book Inauguration) করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Bose) ৷ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অঞ্জন বেরার লেখা এই বইটির নাম, 'গান্ধিজির বেলেঘাটা পর্ব: ঘটন-অঘটনে ছাব্বিশ দিন' ৷ মুদ্রণের দায়িত্বে ছিল অজিতা প্রকাশন ৷ দাম 150 টাকা ৷
1947 সালের 13 অগস্ট থেকে 7 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা 26 দিন কলকাতার বেলেঘাটায় হায়দরি মঞ্জিলে (Hyderi Manzil) কাটান গান্ধিজি ৷ বর্তমানে এই বাড়িরই নাম গান্ধি ভবন (Gandhi Bhawan) ৷ স্বাধীনতার ঊষা লগ্নে দাঙ্গা বিধ্বস্ত কলকাতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে প্রবীণ গান্ধিজির সেই ঐতিহাসিক আন্দোলন নিয়েই লেখা হয়েছে গান্ধিজির বেলেঘাটা পর্ব: ঘটন-অঘটনে ছাব্বিশ দিন ৷
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তির আবহেও দেশে একের পর এক সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটার অভিযোগ উঠছে ৷ এই প্রেক্ষাপটে গান্ধিজি এবং তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে ৷ তাই গান্ধিজির বেলেঘাটা পর্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা হওয়া দরকার বলেই মনে করছেন অঞ্জন বেরা এবং বিমান বসুর মতো মানুষেরা ৷
আরও পড়ুন: রাজনীতির স্বার্থে ইতিহাস বদলে দেওয়া হচ্ছে ! তোপ মমতার
সংশ্লিষ্ট বইটি তিনটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত ৷ 159 পৃষ্ঠার এই 'পেপারব্যাক'-এর মধ্য়ে রয়েছে 1947 সালের 13 আগস্ট থেকে 7 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হায়দরি মঞ্জিলকে কেন্দ্র করে গান্ধিজির যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ ৷ সেইসঙ্গে রয়েছে বেলাঘাটা পর্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আজকের সময়ের প্রেক্ষিতে সেই পর্বের তাৎপর্য সন্ধানের প্রচেষ্টা ৷ বইয়ের পরিশিষ্টে রয়েছে কয়েকটি মূল্যবান দলিল ৷
এই বইয়েই উল্লেখিত হয়েছে বেলেঘাটা পর্বে গান্ধিজির ভূমিকা প্রসঙ্গে একটি সমকালীন পর্যবেক্ষণ ৷ তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির বিধায়ক, 33 বছরের তরুণ বামপন্থী রাজনীতিক জ্যোতি বসুর গান্ধিজি সম্পর্কে বলা কিছু কথা ৷ গান্ধিজির জীবনাবসানের পর 1948 সালের 10 ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ আইনসভায় পেশ করা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বসু বলেছিলেন, "গত কয়েক মাসে গান্ধিজি তাঁর অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন ৷ তাঁর গভীর দূরদৃষ্টিতে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, সাম্প্রদায়িক হানাহানি আবার একবার পরাধীনতার নয়া সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খল আমাদের পায়ে পরিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করবে ৷ যখন ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ আমাদের মন ছেয়ে ফেলেছিল, হাজার হাজার নারী- পুরুষ-শিশুর যন্ত্রণাবিদ্ধ চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল, এমনকী কংগ্রেসের নামীদামি নেতারাও যখন আদর্শচ্যুত, এই সর্বজনীন ঘৃণার প্লাবনের গতিরুদ্ধ করতে কংগ্রেস মন্ত্রীরা যখন সর্বাংশে ব্যর্থ, তখন নিজস্ব সহজ, সরল পথে গান্ধিজি নোয়াখালি, কলকাতা, দিল্লি, দেশের সর্বত্র সাধারণ মানুষের দরজায় দরজায় তাঁদের মৌলিক মনুষ্যত্বের আবেদন জানিয়ে ফিরেছেন ৷ কী হিন্দু, কী মুসলিম, ভারতে কী পাকিস্তান, সর্বত্র সাধারণ মানুষ তাঁর ডাকে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিলেন ৷ এটা নিশ্চিত যে এই মহান কর্তব্য সম্পূর্ণ করার মধ্যেই গান্ধিজি তাঁর জীবন উৎসর্গ করলেন ৷ খুন হয়ে গেলেন সাম্প্রদায়িক হিন্দু মহাসভার আততায়ীর নোংরা হাতে ৷"