কলকাতা, 21 এপ্রিল: বাংলা সাহিত্য জগতে ইন্দ্রপতন ৷ শেষ একটা অধ্যায় ৷ একটা প্রতিষ্ঠান ৷ প্রয়াত কবি, গদ্যশিল্পী, সমালোচক, অধ্যাপক শঙ্খ ঘোষ ।
"একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
… তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে ।"
না, তাঁর মুখ বিজ্ঞাপনে কখনও ঢাকেনি ৷ বরং নানা সময়ে নানা ভাবে জেগে উঠেছে তাঁর লেখনী ৷ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিল এক সদা জাগ্রত বর্ণময় চরিত্রকে ৷
আর সেই বর্ণময় চরিত্র, যাঁকে আমরা শঙ্খ ঘোষ নামে চিনলেও, তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ । তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন । সেই তালিকায় রয়েছে যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থ, তাঁর এই লেখার জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমির সম্মান । যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ৷ 2016 সালে তাঁর মুকুটে যুক্ত হয় দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মানের পালক ৷ পান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার । 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে' ছাড়াও 'উর্বশীর হাসি', 'পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ', 'ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ'-সহ শঙ্খ ঘোষের নানা লেখা নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে বাঙালিকে ৷
1932 সালের 5 ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন শঙ্খ ঘোষ । তাঁর বাবা ছিলেন মণীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মা অমলা ঘোষ । তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ছিল বরিশাল জেলার বানারিপাড়া গ্রামে । শঙ্খ ঘোষের বাবা বেশ কয়েক বছর পাবনায় কর্মরত ছিলেন৷ সেই কারণে তিনি বড় হয়েছেন পাবনায় । সেখানকারই চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন । 1951 সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক হন ৷ এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন ।
আরও পড়ুন: প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ
তাঁর অধ্যাপনার পরিসর অনেক বড় ৷ বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি অধ্যপনা করেছেন । তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 1992 সালে অবসর নেন । 1960 সালে আমেরিকার আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপেও অংশগ্রহণ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ ।
কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাসের উত্তরসূরী শঙ্খ ঘোষের কবিতায় বারবার ফুটে উঠেছে সামাজিক প্রেক্ষাপট । বাঙালির মননকে শক্তি জুগিয়েছে তাঁর লেখনী ৷ বারবার তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকের মতো ৷ তাঁর প্রয়াণ বাঙালির কাছে অপূরণীয় ক্ষতি ৷ তবে বাঙালির মনে সবসময় অনুরণিত হবে তাঁর লেখা কবিতাগুলি...
"আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার
জীর্ণ করে ওকে কোথায় নেবে ?
ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক ।"