কলকাতা, 22 মার্চ : নিজের অজান্তেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি । গত 21 এবং 25 ফেব্রুয়ারি বাংলার সমস্ত প্রথমসারির সংবাদ মাধ্যমের বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা উপভোক্তা হিসাবে দেখানো হয় তাঁকে । শুধু তাই নয়, ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমি পেয়েছি নিজের ঘর । মাথার উপর ছাদ পেয়ে বাংলার প্রায় 24 লক্ষ পরিবার আজ আত্মনির্ভর । সঙ্গে আসুন এবং একসঙ্গে মিলে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকে সত্যি করে তুলুন ।’’
বুঝতে পারছেন না, কার কথা বলছি ! ইনি কলকাতা পুরসভার 71 নম্বর, মঙ্গলানা লেনের বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী । এই যে ঠিকানা তাও তাঁর নিজের নয় । ভাড়াবাড়ির বাসিন্দা তিনি । স্বামী গত হয়েছেন দীর্ঘদিন । দুই ছেলে, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি নিয়ে তাঁর বাস । কিন্তু তাঁর সঙ্গেই এমনই এক উপহাস করেছে কেন্দ্র সরকার, যাতে গোটা এলাকার মানুষের কাছে তিনি মিথ্যাবাদী হয়ে গিয়েছেন ।
বিজ্ঞাপনের তথ্য বলছে, তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা । তাঁর পরিবার পেয়েছে সরকার নির্মিত বাড়ি । কিন্তু বাস্তব হল, আবাসস্থল তাঁর নিজের নয় ৷ ভাঙাচোরা হলেও তার জন্য নিয়ম করে ভাড়া দিতে হয় তাঁকে । বিজ্ঞাপনের এই খবর লক্ষ্মীদেবীর পরিবারকে রাতারাতি রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত করেছে ঠিকই । কিন্তু তাঁর বাস্তব অবস্থার বদল হয়নি ।
এদিন তিনি জানান, ওই বিজ্ঞাপনের কোনও সত্যতা নেই । প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি বেরোলেও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি নিজের চোখে কখনও দেখেনি । এত বড় ব্যক্তির সঙ্গে নিজের ছবি দেখে বরং অসুস্থ বোধ করছেন তিনি ।
তাঁর ছেলের মুখেও একই কথা । তিনি বলেন, ‘‘এতদিন 500 টাকার ভাড়া বাড়িতে আছি । কেউ খবর নিতে পর্যন্ত আসেনি । আমি এবং আমার ভাই ভ্যান চালিয়ে দিন গুজরান করি । অথচ আমাদের ছবি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে । বুঝতে পারছি না কী করব ।’’
আরও পড়ুন : এক গুজরাতির হাতে হিন্দি ভাষায় ইস্তাহার প্রকাশ ; কটাক্ষ ডেরেকের
এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি আমি জানি । বিজেপি যা করছে নিন্দার ভাষা নেই । একটা গরিব মানুষকে নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করা হচ্ছে সেটা অন্যায় ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, তাই এই বিষয়টা নিয়ে আমরা কোনও কিছু বলতে পারছি না । তবে দলকে বলেছি ৷ দল এই নিয়ে কমিশনে যাবে ।’’