কলকাতা, 31 জুলাই : ‘আমার লাগে না মনে’... ৷ সত্যিই কি রাজনীতিকে ‘আলবিদা’ জানাতে গিয়ে তাঁর মনে এতটুকুও লাগল না ?
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র ফেসবুক পোস্ট ঘিরে এমনই সব গুঞ্জন ৷ কেউ বলছেন, গোঁসা করেই দল-সাংসদ পদ ছাড়লেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ কারণ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে নাকি জেপি নাড্ডা, অমিত শাহরা একটিবারও বলতে চাননি, কহো না পেয়ার হ্যায়...
দূরত্বটা তৈরি হয়েছিল মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় থেকে ৷ যেদিন দু'দফার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে সরিয়ে মন্ত্রিত্বে আনা হয়েছিল নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার, জন বার্লাদের ৷ সেদিনই ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন, মমতার সঙ্গে গাড়িতে বসে ঝালমুড়ি খেয়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসা বাবুল সুপ্রিয় ৷ রীতিমতো রাগ করে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন ৷ যেন বলতে চেয়েছিলেন...চললাম ৷
একমাস কাটার আগেই আলবিদা জানিয়ে দিলেন ৷ একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন ৷ তবে রাজনীতি, সাংসদ পদ বা বাংলো সব ছাড়লেও অন্য কোনও দলে যাচ্ছেন না বলেই ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন আসানসোলের এই সাংসদ ৷ তবে এও লিখেছেন, কোনও রাজনৈতিক দল থেকে আমন্ত্রণ পাননি তিনি ৷ বাবুলের এই পোস্টের পরই ফের ভ্রু কুঁচকেছেন নেটিজনরা ৷ তবে কি আমন্ত্রণ পেলে অন্য দলে যোগ দেবেন তিনি ? এখনও সেই উত্তর অজানা ৷
শনিবার বিকেলের ফেসবুক পোস্ট সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিল ৷ ফেসবুক পোস্টে লিখলেন আলবিদা, চললাম ৷ লিখলেন, রাজনীতিতে না থাকলেও সমাজের জন্য কাজ করা যায় ৷ তাহলে সত্যিই কী রাজনীতি ছাড়লেন বাবুল সুপ্রিয় ? দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে ৷
বাবুল লিখেছেন, বেশ কিছু সময় তো থাকলাম ৷ কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম ৷ কোথও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম ৷ কোথাও নিরাশ, হতাশ করলাম ৷ মূল্যায়ন আপনারাই করুন ৷ তাই আমার মতো করে বলছি, চললাম ৷ সোশ্যাল ওয়ার্ক করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও তো করা যায় ৷ নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই তারপর...
মন্ত্রিত্ব হারানোর সঙ্গে রাজনীতি ত্য়াগের কি কোনও সম্পর্ক আছে ? পোস্টে এই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন বাবুল ৷ লিখেছেন, "রাজনীতি ছাড়ার সঙ্গে মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক আছে কি না সেই প্রশ্ন উঠবেই ৷ হ্যাঁ আছে, কিছুটা তো নিশ্চয় আছে ৷ তঞ্চকতা করতে চাই না ৷ তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাওয়াটাই সঠিক হবে ৷ আমাকেও এটা শান্তি দেবে ৷"
আরও পড়ুন : Babul Supriyo Quits politics : মন্ত্রিত্ব চলে গিয়েছে তাই দমবন্ধ লাগছে, বাবুলকে কটাক্ষ কুণালের
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনীতি ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি ৷ মনের ইচ্ছে নিয়ে বারবার অমিত শাহ ও সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে গিয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁরা বারবার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷ বাবুল লিখেছেন, "আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়েছেন ৷ এদের ভালবাসা কোনওদিন ভুলব না ৷ প্রার্থনা করি ওঁরা আমার ভুল না বুঝে ক্ষমা করবেন ৷"
তবে অন্য কোনও দলে যাচ্ছেন না সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷ লিখেছেন, "তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম কোথাও যাচ্ছি না ৷ নিশ্চিত করছি ৷ কেউ আমাকে ডাকেওনি ৷ কারণ আমি ওয়ান টিম প্লেয়ার ৷ সবসময় মোহনবাগানকে সমর্থন করেছি ৷ রাজনীতিতেও একটাই দল, বিজেপি ৷ এখানেই শেষ ৷ চললাম ৷"
বাবুল সুপ্রিয় মানেই যেন একটা চমক ৷ শহরতলির সুপ্রিয় বড়াল মুম্বইয়ের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোট্টবেলায় ৷ একদিন হঠাৎ সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে ট্রেনে চেপে পড়েন ৷ তারপর ফিল্মি দুনিয়ায় শুরু হয় সুপ্রিয় বড়ালের স্বপ্ন সফর ৷ জনপ্রিয়তায় ভর করে সেই সুপ্রিয় বড়াল হয়ে ওঠেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ হৃত্বিক রোশন, আমিশা প্যাটেলকে সামনে রেখে তাঁর ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ গান আজও তরুণ তরণীর হৃদয়ে ঢেউ তোলে ৷ এহেন বাবুল সুপ্রিয় রাজনীতিতে আসার জন্য নাম লিখিয়ে ফেলেন ৷ সরাসরি বিজেপির পতাকায় সাংসদ হন, মন্ত্রীও হন ৷ যোগগুরু রামদেবকে পাশে বসিয়ে বিমান থেকে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে রাজনীতিতে তাঁর ভালবাসা জাহির করেছিলেন তিনি ৷ এবার সেই প্রেমপর্বের সমাপ্তির পালা হতে চলেছে ৷ অন্তত বাবুলের ফেসবুক পোস্ট তাই বলছে ৷ বেশ কিছু সময় থাকলেও অনেকটা হতাশা নিয়েই যেন বিদায় নিচ্ছেন তিনি ৷ ফেসবুকে বাবুল এমন কথাই লিখছেন ৷
তবে তিনি নাকি মানুষের পাশ থেকে সরবেন না ৷ রাতের বেলা হাফ প্যান্ট পরে বাইক চালিয়ে কালভার্ট উদ্বোধন থেকে শুরু করে হাজারো বিতর্কের মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়া সবক্ষেত্রেই বাবুল সুপ্রিয় যেন চমক তৈরিতেই সক্রিয় থেকেছেন বারবার ৷ আজ ফেসবুক পোস্টেও সেই চমক দেখানোর চেষ্টা করলেন ৷ একবার বললেন, সকলের কথা তিনি শুনবেন ৷ কখনও আবার বললেন, অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে মনের ডাককে সাড়া দেওয়ার কথাও ৷
বাবুলের এই অবস্থান যে রাজ্য বিজেপির কঙ্কালসার চেহারাটাকে ফের একবার সামনে আনল তাতে সন্দেহ নেই ৷ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক দিন দিন হিমশীতল হয়েছে ৷ বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বাড়ায় বাবুল নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ৷ ক্রমেই শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন ৷ এইসবই তাঁর এই সিদ্ধান্তকে ত্বরান্নিত করতে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
এখন দেখার বাকি কথা কি তিনি বলবেন ?
বাবুল আজ বিদায়বেলায় লিখেছেন চলে যাওয়ার কথা ৷ তিনি চললেন ৷ বেশি কিছু সময় তিনি থাকলেন ৷ প্রশ্ন, গল্পের শেষটা কি তিনি লিখে দিয়ে গেলেন...