কলকাতা, 10 ফেব্রুয়ারি : নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে মুখ্যসচিবকে সরানোর আবেদন জানানো হল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে (Application to Calcutta HC on Chief Secretary Removal from Election Procedure) । ভবানীপুর উপনির্বাচনের (Bhawanipore By Election) জন্য মুখ্যসচিব দলদাসের মতো আচরণ করছেন বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল । সেই পর্যবেক্ষণকে উল্লেখ করেই এই আবেদন জানানো হয়েছে ।
আজ, বৃহস্পতিবার বিধাননগর পৌরনিগমে (Bidhannagar Municipal Corporation Election 2022) কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর আবেদন সংক্রান্ত মামলার নির্দেশ দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও রাজ্যের প্রতিনিধিদের বৈঠক করে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নির্দেশ দেন । রাজ্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী । রায়দানের পরপরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মুখ্যসচিবকে রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ।
তখনই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানান, কোনও বিষয়ে কোনও আপত্তি থাকলে আলাদা করে আবেদন জানাতে হবে । সেই মতোই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় । আগামিকাল বিষয়টি শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে ।
গতবছর বিধানসভা নির্বাচনের নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Bengal LoP Suvendu Adhikari) কাছে অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) । যদিও ওই কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান এখনও হয়নি । হাইকোর্ট হয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে । এখনও সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে ।
ভবানীপুর বিধানসভা আসন ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র । কিন্তু তিনি ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে না লড়াই করে শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । যদিও ভবানীপুরে রাজ্যের শাসকদল জয়লাভ করেছিল । পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পদত্যাগ করেন ভবানীপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ তাই ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে ৷
ওই উপনির্বাচনের জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন ৷ বিতর্ক সৃষ্টি হয় তারপর । কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে মামলা করেন মুখ্যসচিবের এই আচরণের বিরুদ্ধে । পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, জনগণের টাকা খরচ করে একটি কেন্দ্র থেকে পরাজিত একজন প্রতিনিধিকে বিজয়ী করে আনার জন্য কেন ভোট করা হবে ? শুধু তাই নয়, রাজ্যের মুখ্যসচিবের মতো একজন আমলা সেই ভোটের আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাচ্ছেন, এটা সংবিধান বিরোধী বলেও তাঁদের বক্তব্য ছিল ।
এই ধরনের নির্বাচনে যেভাবে জনগণের অর্থের অপচয় করা হয়, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে বর্তমানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে । তারই পাশাপাশি এবার মুখ্যসচিবকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আবেদন জানালেন তাঁরা ।