কলকাতা, 26 অক্টোবর : কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি কলকাতা হাই কোর্টে প্রত্যাঘাত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের । অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত কারা মামলাকে কলকাতা থেকে দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ । সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই এ বার হাই কোর্টে গেলেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা । তাঁর যুক্তি,আমলা হিসেবে কলকাতাই ছিল তাঁর কর্মস্থল । তিনি নিজেও কলকাতায় থাকেন । তাই মামলার শুনানি কলকাতাতেই হওয়া উচিত ।
রাজ্যের মুখ্য উপদেষ্টা থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর্যালোচনা বৈঠকে শামিল না হওয়ায় আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, যা কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ পর্যন্ত গড়ায় । অক্টোবরের মাঝামাঝি আলাপনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ আসে সেখান থেকে । শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা থেকেও আলাপনকে বঞ্চিত করার হুঁশিয়ারি আসে । তার বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের কলকাতা বিভাগে মামলা করেছিলেন আলাপন ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: জিটিএ নির্বাচনের ইঙ্গিত, পাহাড়ে শীঘ্রই লাগু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
কিন্তু অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অধীনস্থ কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগ ওই মামলা দিল্লির় প্রিন্সিপাল বেঞ্চে নিয়ে আসার আবেদন জানায় । সেই মামলা কলকাতাতে রাখতেই এ বার হাই কোর্টে গেলেন আলাপন । বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর আবেদনের শুনানি হতে পারে ।
বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আলাপনকে নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয় । ঘূর্ণিঝড় যশ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে কলাইকুণ্ডায় মোদির বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল আলাপনের । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করতে বেরনো আলাপন, সাকুল্যে 15-20 মিনিটই সেখানে ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে । জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিমান পৌঁছতে দেরি করে । তাই তিনি আসার পর সাক্ষাৎ করে রিপোর্ট জমা দেন আলাপন । তার পর অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে যান । তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র ।
আরও পড়ুন: School Opening: দীর্ঘদিন পর খুলছে স্কুল, জলপাইগুড়িতে খুশির আমেজে ছাত্র-শিক্ষকরা
মোদির বৈঠকে না থেকে, মমতার সঙ্গে চলে গিয়ে আলাপন ‘প্রোটোকল’ ভেঙেছেন বলে অভিযোগ করে কেন্দ্র । বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে শোকজ ধরানোর পাশাপাশি, তড়িঘড়ি দিল্লিতে বদলি করা হয় তাঁকে । অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে বলা হয় । কিন্তু জবাবে আমলা পদ থেকেই ইস্তফা দেন আলাপন । তার পর তাঁকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা নিয়োগ করেন মমতা । তাতেই বিষয়টি রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যেকার সংঘাতে পরিণত হয় । যদিও আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ খাটে না বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ওয়াকিবহাল মহল । তাদের যুক্তি, কলাইকুণ্ডায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নেমেছিলেন মোদি, যা কোনও সাধারণ বিমানবন্দর নয় । তাই সেখানে কোনও প্রশাসনিক প্রোটোকল খাটে না ।
তা ছাড়া, রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে বিপর্যয়ের সময় মুখ্যসচিবের কাঁধে গুরু দায়িত্ব থাকে । তাই বৈঠকে বেশি ক্ষণ না থেকে আলাপন কোনও অন্যায় করেননি বলেও যুক্তি সামনে এসেছে । এ প্রসঙ্গে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার যুক্তি দেন যে, আইন অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী যদি বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হন, সে ক্ষেত্রে মুখ্যসচিব ওই বিভাগের এগজিকিউটিভ চেয়ারপার্সন । তাই চেয়ারপার্সনের নির্দেশ অমান্য করতে পারেন না আলাপন । নিয়ম মেনেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন তিনি । আলাপনকে বদলি করার আগে রাজ্যের অনুমতির প্রয়োজন ছিল । কিন্তু কেন্দ্র সরকার সে সবের ধার ধারেনি বলেও অভিযোগ ।