কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: আবারও নজির গড়ল এসএসকেএম হাসপাতাল ৷ ফুসফুস ধুয়ে (Wash Lungs to Heal in SSKM) এক ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ৷ বিরল এই চিকিৎসা বাস্তুবায়িত করে আবারও শিরোনামে এসএসকেএম ৷
প্রসঙ্গত, জানা গিয়েছে, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ও বুকে ব্যথা নিয়ে প্রায় তিন মাস আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন বীরভূমের বাসিন্দা রবিন শেখ ৷ তাঁর ভাই রহিম শেখ জানান, ঝাড়খণ্ডে পাথর কাটার কাজ করতেন রবিনবাবু ৷ আচমকাই তাঁর জ্বর আসে ৷ প্রথমে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করলেও কোনও লাভ হয় না তাঁর ৷
তখন রামপুরহাটে সরকারি হাসপাতালে রবিন শেখের চিকিৎসা শুরু হয় ৷ সেখানে ইনহেলার দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি ৷ সেখান থেকেই তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রেফার করা হয় রবিন শেখকে ৷ সেখানে তাঁর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করেন পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অমিতাভ সেনগুপ্ত ৷ তিনি প্রথম শনাক্ত করেন যে, রবিন শেখের ‘পালমোনারি অ্যালভিওলার প্রোটিনোসিস’ (Pulmonary Alveolar Proteinosis) নামক একটি রোগ হয়েছে ৷ যেখানে ফুসফুসে ফ্যাট বা প্রোটিন জমে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় (Accumulation of Protein Causes Difficulty in Breathing) ৷
চিকিৎসক অমিতাভ সেনগুপ্ত রবিন শেখকে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিও থ্যারাপি বিভাগে রেফার করেন ৷ সেই বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক শুভেন্দু শেখর মহাপাত্র এবং অন্যান্যরা চিকিৎসকরা তাঁর সব রিপোর্ট দেখে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে রবিন শেখের ফুসফুস পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন ৷
অধ্যাপক চিকিৎসক শুভেন্দু শেখর মহাপাত্র জানান, সাধারণ স্যালাইন ওয়াটার ব্যবহার করে তাঁর ফুসফুস পরিষ্কারের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে ৷ রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয়েছিল ৷ অজ্ঞানের সময় যে টিউব ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা দিয়েই ফুসফুস পরিষ্কার করা হয় ৷ টিউবটির একদিকে দু’টি মুখ রয়েছে ৷ ভ্যান্টিলেশনের মাধ্যমে টিউবের একটি মুখ দিয়ে ফুসফুসের বাঁ দিকের অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় ৷ আর অন্য মুখ দিয়ে ডানদিকের অংশ স্যালাইন অর্ডার দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন: ইতিহাসে এসএসকেএম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে স্তন পুনর্গঠন কলকাতায়
এর পর ফুসফুসের ডানদিকের অংশে ঝাঁকুনি দেওয়া হয় ৷ ফলে জমে থাকা প্রোটিন আলগা হয়ে বেরিয়ে আসে ৷ 11 অগস্ট তাঁর ডানদিকের ফুসফুস আগে পরিষ্কার করা হয়েছে ৷ সেই সময় এই প্রক্রিয়াটি খুবই শক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ৷ কারণ, তাঁর বাঁদিকের ফুসফুস তখন ও অপরিষ্কার অবস্থায় ছিল ৷ ফলে তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ছিল না ৷ তবে, বাঁ দিকের ফুসফুস পরিষ্কার করার সময় চিকিৎসকদের কোনও সমস্যা হয়নি ৷ বাঁ দিকের ফুসফুস 8 সেপ্টেম্বর পরিষ্কার করা হয়েছিল ৷ বর্তমানে রবিন শেখ সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক শুভেন্দু শেখর মহাপাত্র ৷
আরও পড়ুন: এসএসকেএমের উপর আদালতের আস্থা হারানো লজ্জার, মত ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসকের
প্রশ্ন হচ্ছে, পরবর্তীকালে আবারও এই রোগ তাঁর দেহে বাসা বাঁধবে কিনা সেই বিষয়েও রয়েছে সংশয় ৷ এ নিয়ে অধ্যাপক চিকিৎসক শুভেন্দুশেখর মহাপাত্র জানান," ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন পালমোনারি অ্যালভিওলার প্রোটিনোসিস নামক একটি রোগে ৷ এই রোগে ফুসফুসে প্রোটিন, ফ্যাট বা অন্যান্য সুক্ষ জিনিস জমতে জমতে শ্বাস-প্রশ্বাসের যে থলিগুলো থাকে, তা বন্ধ করে দেয় ৷ ফলে বাইরে থেকে অক্সিজেন প্রবেশ করতেও পারে না এবং শরীরে তৈরি হওয়ার কার্বন ডাই অক্সাইড শরীর থেকে বেরতে পারে না ৷ মূলত শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও শুকনো কাশি এই রোগের প্রথম ও প্রধান উপসর্গ ৷ এক্ষেত্রে তখনই ফুসফুস ধোয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয় ৷’’ যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয়, ‘হোল লাঙ ল্যাভেজ’ (Whole Lung Lavage) ৷ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সুস্থ হয়েছেন ওই ব্যক্তি ৷ তবে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিন শেখ নিজের পেশা না বদলালে, আগামী দশ বছর পর আবারও এই রোগ ফিরে আসতে পারে ৷