ETV Bharat / city

ছিনিয়ে আনা দরকার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর, দাবি স্বাধীনতা সংগ্রামীর - subhash chandra bose

বরানগর সংলগ্ন ন'পাড়ার মান্না পাড়ায় থাকেন 99 বছরের বৃদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য । এ বছরই তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন । নেতাজির সঙ্গে এক ঘরে বসে, ঘরোয়া মেজাজে মিটিং করা স্বাধীনতা সংগ্রামীর মত, পাকিস্তানের থেকে ছিনিয়ে আনা দরকার কাশ্মীরের অংশ ।

9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি
author img

By

Published : Aug 15, 2019, 3:14 PM IST

Updated : Aug 15, 2019, 3:34 PM IST

কলকাতা, 15 অগাস্ট : দেখেছেন অনেক । সেই তুলনায় ভুলেছেন খুব কমই । দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এলেও এখনও চশমা ছাড়াই বই পড়েন । চলাফেরায় সতর্কতা এলেও এখনও যথেষ্ট সচল । এখনও নির্দ্বিধায় বলে চলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের কথা । তবে ক্ষোভ রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আচরণ নিয়ে । স্বাধীনতা সংগ্রাম কোনও পেশা নয় । স্বেচ্ছায় দেশের জন্য ত্যাগ করা । কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাঁর । তাঁর মতে এখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনেকের প্রধান আকর্ষণ পেনশন । অভিযোগ, এই পেনশনের জন্য অনেকে না কি নকল স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েছেন ।

বরানগর সংলগ্ন ন'পাড়ার মান্না পাড়ায় থাকেন 99 বছরের বৃদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য । এ বছরই তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন ।

শুনুন স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্যের বক্তব্য


প্রশ্ন: কেমন আছেন?

উত্তর: ভালো আছি । দিল্লি থেকে সবে ফিরলাম । রাজধানী এক্সপ্রেস অনেকটাই দেরিতে এসে পৌঁছলো স্টেশনে ।

প্রশ্ন: দিল্লিতে গিয়েছিলেন কেন?

উত্তর: 9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস । সেই উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি । প্রতিবছর দেন । এ বছরও দিলেন ।


প্রশ্ন: আপনার বয়স কত?

উত্তর: আমার বয়স 99 । দু'মাস বাদে শততম জন্মবর্ষ হবে । 10 অক্টোবর 1920 সালে আমার জন্ম ।

প্রশ্ন: আর্থিক দিক থেকে কেমন আছেন?

উত্তর: আর্থিক দিক থেকে মোটামুটি চলে যাচ্ছে । ভারত সরকার পেনশন দিচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভাতা দিচ্ছে । এই দুটো নিয়ে চলছি । বিলাসিতা কিছু নেই আমার । কখনও বিলাসিতা করিনি । তাই বিলাসিতার জন্য কোনও খরচ হয় না । এই টাকাতেই হয়ে যায় ভালো ভাবে ।


প্রশ্ন: সুস্থ আছেন তো?

উত্তর: আমার তো কোনও অসুখ-বিসুখ নেই । তবে দুর্বল হচ্ছি । লাঠি ছাড়া চলতে পারি না । অসুবিধা হয় হাঁটতে । চোখ দুটো ঝাপসা হচ্ছে । কান দুটি ভোঁতা হচ্ছে । এছাড়া অসুখ-বিসুখ কিছু নেই ।


প্রশ্ন: কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার কত টাকা আপনাকে দেয়?

উত্তর: পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মতো দেয় দুই সরকার মিলে । এর মধ্যে চিকিৎসার খরচ আছে । হেলথ কার্ড রয়েছে আমাদের । হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় আমার ও আমার স্ত্রীর । ওষুধের ব্যবস্থা করেছে সরকার । আর কি খরচ ? আর অভিযোগ থাকলেই বা কার কাছে বলব? স্বাধীনতা সংগ্রামটা কি পেশা? পেশা নয় । পেনশন দিচ্ছে । নিচ্ছি । এটা ইজ্জতের ব্যাপার । এটা কোনও ট্রেড ইউনিয়ন নয় ।


প্রশ্ন: এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলেন?

উত্তর: হ্যাঁ, আশা জেগেছে । ভারতবর্ষ আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে । তিন তালাক উঠে গেল । 370 ধারা উঠে গেল । রাম জন্মভূমি নিয়ে উপযুক্ত নির্দেশ দিয়েছে আদালত । পরিবারতন্ত্র চলে যাচ্ছে । ভালোর দিকে এগোচ্ছে দেশ । পরিবারতন্ত্রের অভিশাপ চলে গেছে । নতুন করে যারা পরিবারতন্ত্র করতে চাইছে, তাদের কোনও আশা নেই ।

প্রশ্ন: কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে?

উত্তর: নিশ্চই সমাধান হবে । তবে আরও নির্ভীক হওয়া উচিত । পাকিস্তানের থেকে ছিনিয়ে আনা দরকার কাশ্মীরের অংশ । 42 বছর যাবত আমি একটি পত্রিকা সম্পাদনা করি । ত্রৈমাসিক পত্রিকা । যদি পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরকে ছিনিয়ে আনার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী আমায় বলেন, দেশ আজ বিপন্ন । তোমরা প্রতি মাসে 1000 টাকা করে দাও । আমি বারো মাসে বারো হাজার টাকা দেব পাকিস্তানের থেকে কাশ্মীরের অংশকে ছিনিয়ে আনার জন্য । এর জন্য যে কোনও কাজ আমরা করতে প্রস্তুত । এর জন্য কোনও শর্ত নেই ।


প্রশ্ন: সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখেছেন?

উত্তর: নেতাজির সঙ্গে এক ঘরে বসে, ঘরোয়া মেজাজে মিটিং করেছি । ওনার সঙ্গে বিভিন্ন মিটিংয়ে থাকতাম । আমি নিরামিষ স্বদেশি করতাম না । অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর আচার ব্যবহার দেখলে আমার ঘেন্না হয় । এরা ভাবে যেন স্বাধীনতা সংগ্রাম চাকরি ছিল । পেশা । পেনশন বাড়ানো উচিত । দ্বিগুণ করা উচিত । এসব অন্যায় আবদার তারা করে । আবার এমনও আবদার করে, ছেলে ও নাতি পেনশন পাবে । অর্থাৎ তিন পুরুষ ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পেনশন পাবে । বিধবা স্ত্রী পায় পেনশন । মেয়ে থাকলে, অবিবাহিত মেয়েও পেনশন পায় । আমরা কি শিডিউল কাস্ট? যে বংশানুক্রমে পেনশন পেতে হবে? স্বাধীনতা সংগ্রামী সংরক্ষিত নাকি? বংশানুক্রমে টাকা পাবে? ঘেন্না হয় । পরিচয় দিতে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ঘেন্না হয় ।

9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি
9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি

প্রশ্ন: স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনও ঘটনা মনে আছে?

উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ঘটনা মনে আছে । 1930 সালে যখন আমার দশ বছর বয়স, বিপ্লবী দলে নাম লেখাই । বোমার খোল, বোমার মালমশলা, বই, পিস্তল, সব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করতাম আমি । সেই কাজেই আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিল । জান দিতে হবে জানতাম স্বাধীনতার জন্য । এটাকে তাই পেশা মনে করি না । কোনও প্রমাণ নেই এমন লোকও এখন স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে নিজেকে পরিচয় দেয় । আমরা দাগি আসামি ছিলাম ইংরেজদের খাতায় । আমি তাম্রপত্র প্রাপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী । এখন তো সার্টিফাইড স্বাধীনতা সংগ্রামী আছেন । যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁরাও পেনশনের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা নেন । বিজ়নেস করছেন মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম করে । কেউ কেউ পেট্রল পাম্প নিয়েছেন । একটা, দুটো, তিনটে পেট্রল পাম্প । স্বাধীনতা সংগ্রামী অল্প বয়সেই হয়ে গেছেন কেউ কেউ । বয়স বাড়িয়ে বলছে 92 বছর-94 বছর । দুর্নীতি আছে আমাদের মধ্যেও । তাই খুব খারাপ লাগে ।

কলকাতা, 15 অগাস্ট : দেখেছেন অনেক । সেই তুলনায় ভুলেছেন খুব কমই । দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এলেও এখনও চশমা ছাড়াই বই পড়েন । চলাফেরায় সতর্কতা এলেও এখনও যথেষ্ট সচল । এখনও নির্দ্বিধায় বলে চলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের কথা । তবে ক্ষোভ রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আচরণ নিয়ে । স্বাধীনতা সংগ্রাম কোনও পেশা নয় । স্বেচ্ছায় দেশের জন্য ত্যাগ করা । কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাঁর । তাঁর মতে এখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনেকের প্রধান আকর্ষণ পেনশন । অভিযোগ, এই পেনশনের জন্য অনেকে না কি নকল স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েছেন ।

বরানগর সংলগ্ন ন'পাড়ার মান্না পাড়ায় থাকেন 99 বছরের বৃদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য । এ বছরই তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন ।

শুনুন স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্যের বক্তব্য


প্রশ্ন: কেমন আছেন?

উত্তর: ভালো আছি । দিল্লি থেকে সবে ফিরলাম । রাজধানী এক্সপ্রেস অনেকটাই দেরিতে এসে পৌঁছলো স্টেশনে ।

প্রশ্ন: দিল্লিতে গিয়েছিলেন কেন?

উত্তর: 9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস । সেই উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি । প্রতিবছর দেন । এ বছরও দিলেন ।


প্রশ্ন: আপনার বয়স কত?

উত্তর: আমার বয়স 99 । দু'মাস বাদে শততম জন্মবর্ষ হবে । 10 অক্টোবর 1920 সালে আমার জন্ম ।

প্রশ্ন: আর্থিক দিক থেকে কেমন আছেন?

উত্তর: আর্থিক দিক থেকে মোটামুটি চলে যাচ্ছে । ভারত সরকার পেনশন দিচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভাতা দিচ্ছে । এই দুটো নিয়ে চলছি । বিলাসিতা কিছু নেই আমার । কখনও বিলাসিতা করিনি । তাই বিলাসিতার জন্য কোনও খরচ হয় না । এই টাকাতেই হয়ে যায় ভালো ভাবে ।


প্রশ্ন: সুস্থ আছেন তো?

উত্তর: আমার তো কোনও অসুখ-বিসুখ নেই । তবে দুর্বল হচ্ছি । লাঠি ছাড়া চলতে পারি না । অসুবিধা হয় হাঁটতে । চোখ দুটো ঝাপসা হচ্ছে । কান দুটি ভোঁতা হচ্ছে । এছাড়া অসুখ-বিসুখ কিছু নেই ।


প্রশ্ন: কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার কত টাকা আপনাকে দেয়?

উত্তর: পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মতো দেয় দুই সরকার মিলে । এর মধ্যে চিকিৎসার খরচ আছে । হেলথ কার্ড রয়েছে আমাদের । হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় আমার ও আমার স্ত্রীর । ওষুধের ব্যবস্থা করেছে সরকার । আর কি খরচ ? আর অভিযোগ থাকলেই বা কার কাছে বলব? স্বাধীনতা সংগ্রামটা কি পেশা? পেশা নয় । পেনশন দিচ্ছে । নিচ্ছি । এটা ইজ্জতের ব্যাপার । এটা কোনও ট্রেড ইউনিয়ন নয় ।


প্রশ্ন: এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলেন?

উত্তর: হ্যাঁ, আশা জেগেছে । ভারতবর্ষ আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে । তিন তালাক উঠে গেল । 370 ধারা উঠে গেল । রাম জন্মভূমি নিয়ে উপযুক্ত নির্দেশ দিয়েছে আদালত । পরিবারতন্ত্র চলে যাচ্ছে । ভালোর দিকে এগোচ্ছে দেশ । পরিবারতন্ত্রের অভিশাপ চলে গেছে । নতুন করে যারা পরিবারতন্ত্র করতে চাইছে, তাদের কোনও আশা নেই ।

প্রশ্ন: কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে?

উত্তর: নিশ্চই সমাধান হবে । তবে আরও নির্ভীক হওয়া উচিত । পাকিস্তানের থেকে ছিনিয়ে আনা দরকার কাশ্মীরের অংশ । 42 বছর যাবত আমি একটি পত্রিকা সম্পাদনা করি । ত্রৈমাসিক পত্রিকা । যদি পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরকে ছিনিয়ে আনার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী আমায় বলেন, দেশ আজ বিপন্ন । তোমরা প্রতি মাসে 1000 টাকা করে দাও । আমি বারো মাসে বারো হাজার টাকা দেব পাকিস্তানের থেকে কাশ্মীরের অংশকে ছিনিয়ে আনার জন্য । এর জন্য যে কোনও কাজ আমরা করতে প্রস্তুত । এর জন্য কোনও শর্ত নেই ।


প্রশ্ন: সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখেছেন?

উত্তর: নেতাজির সঙ্গে এক ঘরে বসে, ঘরোয়া মেজাজে মিটিং করেছি । ওনার সঙ্গে বিভিন্ন মিটিংয়ে থাকতাম । আমি নিরামিষ স্বদেশি করতাম না । অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর আচার ব্যবহার দেখলে আমার ঘেন্না হয় । এরা ভাবে যেন স্বাধীনতা সংগ্রাম চাকরি ছিল । পেশা । পেনশন বাড়ানো উচিত । দ্বিগুণ করা উচিত । এসব অন্যায় আবদার তারা করে । আবার এমনও আবদার করে, ছেলে ও নাতি পেনশন পাবে । অর্থাৎ তিন পুরুষ ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পেনশন পাবে । বিধবা স্ত্রী পায় পেনশন । মেয়ে থাকলে, অবিবাহিত মেয়েও পেনশন পায় । আমরা কি শিডিউল কাস্ট? যে বংশানুক্রমে পেনশন পেতে হবে? স্বাধীনতা সংগ্রামী সংরক্ষিত নাকি? বংশানুক্রমে টাকা পাবে? ঘেন্না হয় । পরিচয় দিতে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ঘেন্না হয় ।

9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি
9 আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি

প্রশ্ন: স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনও ঘটনা মনে আছে?

উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ঘটনা মনে আছে । 1930 সালে যখন আমার দশ বছর বয়স, বিপ্লবী দলে নাম লেখাই । বোমার খোল, বোমার মালমশলা, বই, পিস্তল, সব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করতাম আমি । সেই কাজেই আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিল । জান দিতে হবে জানতাম স্বাধীনতার জন্য । এটাকে তাই পেশা মনে করি না । কোনও প্রমাণ নেই এমন লোকও এখন স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে নিজেকে পরিচয় দেয় । আমরা দাগি আসামি ছিলাম ইংরেজদের খাতায় । আমি তাম্রপত্র প্রাপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী । এখন তো সার্টিফাইড স্বাধীনতা সংগ্রামী আছেন । যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁরাও পেনশনের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা নেন । বিজ়নেস করছেন মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম করে । কেউ কেউ পেট্রল পাম্প নিয়েছেন । একটা, দুটো, তিনটে পেট্রল পাম্প । স্বাধীনতা সংগ্রামী অল্প বয়সেই হয়ে গেছেন কেউ কেউ । বয়স বাড়িয়ে বলছে 92 বছর-94 বছর । দুর্নীতি আছে আমাদের মধ্যেও । তাই খুব খারাপ লাগে ।

Intro:দেখেছেন অনেক। সেই তুলনায় ভুলেছেন খুব কমই। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসলেও, এখনো চশমা ছাড়াই বই পড়েন। চলাফেরায় সতর্কতা এলেও থেমে নেই হাঁটাচলা। এখনো নির্দ্বিধায় বলে চলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের কথা। তবে ক্ষোভ রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আচরণ নিয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রাম কোনো পেশা নয়। স্বেচ্ছায় দেশের জন্য ত্যাগ করা। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এখন স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রধান আকর্ষণ পেনশন। এই পেনশনের জন্যেই অনেকে নকল স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়েছেন।


Body:বরানগর সংলগ্ন ন পাড়ার মান্না পাড়ায় থাকেন ৯৯ বছরের বৃদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য। এ বছরই তিনি শত বর্ষে পদার্পন করবেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অনেকটাই অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
উত্তর: ভালো আছি। দিল্লি থেকে সবে ফিরলাম। রাজধানী এক্সপ্রেস অনেকটাই দেরিতে এসে পৌঁছলো স্টেশনে। প্রশ্ন: দিল্লিতে গিয়েছিলেন কেন?
উত্তর: ৯ আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবস। তাতেই সংবর্ধনা দিলেন রাষ্ট্রপতি। প্রতিবছর দেন। এ বছরেও দিলেন।
প্রশ্ন: আপনার বয়স কত?
উত্তর: আমার বয়স ৯৯। দুমাস বাদে শত তম জন্মবর্ষ হবে। এখন ৯৯। ১০ অক্টোবর ১৯২০ সালে আমার জন্ম।
প্রশ্ন: আর্থিক দিক থেকে কেমন আছেন?
উত্তর: আর্থিক দিক থেকে মোটামুটি চলে যাচ্ছে। ভারত সরকার পেনশন দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভাতা দিচ্ছে। এই দুটো নিয়ে চলছি। বিলাসিতা কিছু নেই আমার। কখনো বিলাসিতা করিনি। তাই বিলাসিতার জন্য কোন খরচ হয় না। এই টাকাতেই হয়ে যায় ভালো ভাবে।
প্রশ্ন: সুস্থ আছেন তো?
উত্তর: না, আমার তো কোন অসুখ-বিসুখ নেই। দুর্বল হচ্ছি। লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। অসুবিধা হয় হাঁটতে। চোখ দুটো ঝাপসা হচ্ছে। কান দুটি ভোতা হচ্ছে। এছাড়া অসুখ-বিসুখ কিছু নেই।
প্রশ্ন: কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার কত টাকা আপনাকে দেয়?
উত্তর: পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মতো দেয় দুই সরকার মিলে। এর মধ্যে চিকিৎসার খরচ আছে। হেলথ কার্ড রয়েছে আমাদের। হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় আমার এবং আমার স্ত্রীর। ওষুধের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আর কি খরচ! আর অভিযোগ থাকলেই বা কার কাছে বলব? স্বাধীনতা সংগ্রাম টা কি পেশা? পেশা নয়। পেনশন দিচ্ছে। নিচ্ছি। এটা ইজ্জতের ব্যাপার। এটা কোন ট্রেড ইউনিয়ন নয়।
প্রশ্ন: এমন স্বাধীনতা চেয়ে ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ আশা জেগেছে। ভারত বর্ষ আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। তিন তালাক উঠে গেল। ৩৭০ ধারা উঠে গেল। রাম জন্মভূমি নিয়ে উপযুক্ত নির্দেশ আদালত দিয়েছে। পরিবার তন্ত্র চলে যাচ্ছে। ভালোর দিকে দেশ এগোচ্ছে। পরিবার তন্ত্রের অভিশাপ চলে গেছে। নতুন করে যারা পরিবার তন্ত্র করতে চাইছে, তাদের কোন আশা নেই। প্রশ্ন:কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে?
উত্তর:নিশ্চয়ই সমাধান হবে। তবে আরো নির্ভীক হওয়া উচিত। পাকিস্তানের থেকে ছিনিয়ে আনা দরকার কাশ্মীরের অংশ। ৪২ বছর যাবত আমি একটি পত্রিকা সম্পাদনা করি। ত্রৈমাসিক পত্রিকা। যদি পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরকে ছিনিয়ে আনার জন্য, দেশের প্রধানমন্ত্রী আমায় বলেন, দেশ আজ বিপন্ন। তোমরা প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে দাও। আমি বারো মাসে, বারো হাজার টাকা দান করব। পাকিস্তানের থেকে কাশ্মীরের অংশকে ছিনিয়ে আনার জন্য। এর জন্য যে কোন কাজ আমরা করতে প্রস্তুত। এর জন্য কোন শর্ত নেই।
প্রশ্ন: সুভাষচন্দ্র বসু কে দেখেছেন?
উত্তর: নেতাজির সঙ্গে এক ঘরে বসে, ঘরোয়া মেজাজে, মিটিং করেছি। ওনার সঙ্গে বিভিন্ন মিটিংয়ে থাকতাম। আমি নিরামিষ স্বদেশী করতাম না। ওটা গান্ধী বাবার চ‍্যালারা করত। কারন স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল ওদের কাছে পেশা। অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর আচার ব্যবহার দেখলে আমার ঘেন্না হয়। এরা ভাবে যেন স্বাধীনতা সংগ্রাম চাকরি ছিল। পেশা। পেনশন বাড়ানো উচিত। দ্বিগুণ করা উচিত। এসব অন্যায় আবদার তারা করে। আবার এমনও আবদার করে, ছেলে, নাতি পেনশন পাবে। অর্থাৎ তিন পুরুষ ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পেনশন পাবে। বিধবা স্ত্রী পায় পেনশন। মেয়ে থাকলে, অবিবাহিত মেয়েও পেনশন পায়। আমরা কি সিডিউল কাস্ট? যে বংশানুক্রমে পেনশন পেতে হবে? স্বাধীনতা সংগ্রামী সংরক্ষিত নাকি? বংশানুক্রমে টাকা পাবে? ঘেন্না হয়। পরিচয় দিতে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ঘেন্না হয়।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন ঘটনা মনে আছে?
উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ঘটনা মনে আছে। ১৯৩০ সালে যখন আমার দশ বছর বয়স, বিপ্লবী দলে নাম লেখাই। বোমার খোল, বোমার মালমশলা, বই, পিস্তল, সব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করতাম আমি। সেই কাজেই আমাকে লিপ্ত করা হয়েছিল। জান দিতে হবে জানতাম স্বাধীনতার জন্য। এটাকে তাই পেশা মনে করি না। কোন প্রমান নেই এমন লোকেও এখন স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। আমরা দাগি আসামি ছিলাম ইংরেজদের খাতায়। তাম্র পত্র পেয়েছি। তাই আমি তাম্রপত্র প্রাপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী। এখনতো সার্টিফাইড স্বাধীনতা সংগ্রামী আছেন। যারা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারাও পেনশনের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা নেন। বিজনেস করছেন মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম করে। কেউ কেউ পেট্রোল পাম্প নিয়েছেন। একটা, দুটো, তিনটে পেট্রোল পাম্প। স্বাধীনতা সংগ্রামী অল্প বয়সেই হয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ। বয়স বাড়িয়ে বলছে ৯২ বছর ৯৪ বছর। দুর্নীতি আছে আমাদের মধ্যেও। তাই খুব খারাপ লাগছে।


Conclusion:
Last Updated : Aug 15, 2019, 3:34 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.