কলকাতা, 4 এপ্রিল : গত সাত দিনে এ রাজ্যে 300 শতাংশ বেড়েছে করোনা সংক্রমণ । দেশেও এই সংক্রমণের হার অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে চলেছে । গত বছরের ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া এই সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ । তার উপর, সাধারণ মানুষকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য যাঁরা বলবেন, তাঁরাই এই স্বাস্থ্যবিধি আরও বেশি করে লঙ্ঘন করে চলেছেন । করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করে এমনই জানিয়েছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ৷
সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলছে । দেশের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি এ রাজ্যেও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা । এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে মানুষকে পরিত্রাণ দিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সরকার ৷ যাতে আবার লকডাউনের পথে হাঁটতে না হয় । দেশে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা এখনই 90 হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে । গত বছরের 10 সেপ্টেম্বর দেশে সর্বাধিক সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল । সর্বাধিক ওই দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল 96 হাজার 551 জন । এ বছর এখনই 90 হাজার ছুঁতে চলেছে । গত সাত দিনে দৈনিক সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক । এ বছর এই সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না ।
এ বছর করোনা সংক্রমণে ব্রিটেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইন-ও রয়েছে । যার ফলে সংক্রমণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে জ্বর, সর্দি-কাশি থাকছে না। সরাসরি নিউমোনিয়া নিয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। ফলে, রোগ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে। গত বছরের থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার এ বছর এখনও পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এই কথার পাশাপাশি সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সভাপতি চিকিৎসক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস যৌথভাবে বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে যথেচ্ছ জমায়েত হচ্ছে, যেখানে করোনা বিধি ভীষণভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষকে করোনা বিধি মানতে শেখানো যাঁদের উচিত, তাঁরাই আরও বেশি লঙ্ঘন করছেন। ফলে, এ রাজ্যে গত সাত দিনে 300 শতাংশ কেস বেড়ে গিয়েছে । গত 27 মার্চ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল 377 । 3 এপ্রিল তা বেড়ে হয়েছে 1 হাজার 773 । এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মানুষকে আবার সম্পূর্ণ লকডাউনের জাঁতাকলে পড়তে হবে । এটা মোটেও কাম্য নয় ।"
আরও পড়ুন : পশ্চিম বর্ধমানে ফের 100-র গণ্ডি পার দৈনিক সংক্রমনে
যাতে আর সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে যেতে না হয়, যাতে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম । তাঁদের দাবিগুলি হল :
- বিভিন্ন মহামারী দমন, বিপর্যয় মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং মানব কল্যাণে কর্মরত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, এপিডেমিওলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট, মেডিসিন, বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং জেলাস্তরে কার্যকর কমিটি তৈরি করতে হবে ।
- কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র বিপর্যয় মোকাবিলা আইন , 2005 জারি করে দায় সারলেই হবে না । ওই আইন মেনে অ্যাক্টিভ অ্যান্ড প্যাসিভ সার্ভিলেন্স, কন্টাক্ট ট্রেসিং, আর্লি ডায়াগনসিস, প্রপার আইসোলেশন এবং, ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে । যে কাজ কার্যত এখনও শুরু করা হয়নি ।
- গত বছরের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বা অন্য কোনও তথ্য গোপন করা চলবে না । প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে ।
- করোনা ভাইরাসের যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে । বর্তমানে দেশের 92 শতাংশ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, 89 শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং 87 শতাংশ ব্লক হাসপাতাল ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড-এর নিচে অবস্থান করছে । এর ফলে করোনার মতো অতিমারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয় । অবিলম্বে পরিকাঠামোগত এই খামতি পূরণ করা হোক ।
- করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়োগ করতে হবে ।
- ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে ন্যাশনাল কন্ট্রোল প্রোগ্রাম চালু করতে হবে ।
- মানুষ যাতে মাস্ক পরেন, পারস্পরিক দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখেন, নিয়মিত হাত স্যানিটাইজ় করতে পারেন, তার জন্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
- করোনা ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে, এই সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সরকারকে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে । ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও মানুষ যাতে সঠিকভাবে করোনা বিধি মেনে চলেন, তা সরকারকে দেখতে হবে ।
- স্বাস্থ্য বাজেট জিডিপির ন্যূনতম 10 শতাংশ করতে হবে।