ETV Bharat / city

সহজে আসেনি এই সম্মান, কারণ...

কেমন ছিল সে-দিনের আন্দোলনের ছবিটা । কতটা লড়াই করতে হয়েছিল মানুষগুলোকে । 21 ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়ে অতীতের ঘটনা তুলে ধরলেন ফারিদ হোসেন ৷

21-feb-special-story-by-farid-hossain
বাঙালির গর্ব ভাষা দিবস
author img

By

Published : Feb 21, 2021, 1:34 PM IST

মহাম্মদ আলি জিন্না, যিনি পাকিস্তানে কায়েদ-এ-আজম নামেই পরিচিত, প্রথম ঢাকা সফর করেন 1948-এর মার্চ মাসে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হিসাবে । তার ঠিক কয়েক মাস আগেই 1947 সালের 15 অগস্ট পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে ঘোষিত হয় ধর্মীয় ভিত্তিতে ৷

1958 সালের মার্চ মাসে জিন্না যখন ঢাকাতে পৌঁছান তখনই পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে । ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত জিন্নার পারিষদরা ইতিমধ্যেই উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্টীয় ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে, এই অজুহাতে যে পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু মানুষ উর্দুতেই কথা বলে । এই ঘটনা বাংলাভাষিদের আবেগের উপর একটা গুরুতর আঘাত হানে ।

ঢাকার ছাত্ররা একটা অ্যাকশন কমিটির গঠন করে এবং প্রাদেশিক আইনসভার মদতে তাঁদের এই ভাষা আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি পরবর্তীকালে মুক্তি আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন, সে সময়ে ছিলেন এক তরুণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি সেই সময় ছাত্রদের আন্দোলনে সামিল হন এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নেন । 1952 সালের 21-এ ফেব্রুয়ারি সকালে হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হন এবং 144 ধারা অমান্য করে তাঁরা প্রদেশের আইনসভার দিকে মিছিল রওনা হন । পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস ফাটায় ৷ শেষে গুলি পর্যন্ত চালায় । স্বাধীন পাকিস্তানের রাস্তায় সেদিন প্রথম রক্ত ঝরে । মৃত্যু হয় সালাম, রফিক, বরকত এবং জব্বারের মতো আরও অনেকের । পুলিশকে গুলি চালানোর হুকুম দেয় মুসলিম লিগ নেতা এবং মুখ্য়মন্ত্রী খোয়াই নাজিমুদ্দিন । বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ছাত্রদের রক্ত দিয়ে ।

আরও পড়ুন : একুশে ফেব্রুয়ারি কী ? উত্তর শুনলে লজ্জায় মাথানত হবে

আরও খবর : বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখাই একুশের অঙ্গীকার

1971 সালের 16 ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ৷ স্বাধীন হয় বাংলাদেশ । মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পর বাংলাদেশ যে বিজয় উল্লাসে মেতেছিল তার ভাগিদার ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীও । পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্য়াচারের হাত থেকে 1 কোটি বাংলাদেশীকে বাঁচিয়েছিল ভারত।

আরও পড়ুন : একুশের বইমেলা ও ঢাকা

বাংলাদেশ, সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার সৃষ্টি ভাষার উপর দাঁড়িয়ে । সেই থেকেই 21-এ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা শাহিদ দিবস হিসেবে বলে পালন করা হয় । ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করেই আজ সারা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে পালিত হয় একুশের বই মেলা । প্রতি বছর 21-এ ফেব্রুয়ারি সকালে হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশু প্রভাতফেরিতে অংশ নেন । শতকণ্ঠে ধনিত হয় অমরসংগীত— "আমরা ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি !" মিছিল পৌঁছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে । সেখানে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয় । এ একান্তই বাঙালির নিজস্ব গর্ব, যা পালিত হয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং সারা পৃথিবীতে ৷ যেখানেই বাঙালির বাস।

(লেখক : প্রেস মিনিস্টার (প্রাক্তন), বাংলাদেশ হাই কমিশন)

মহাম্মদ আলি জিন্না, যিনি পাকিস্তানে কায়েদ-এ-আজম নামেই পরিচিত, প্রথম ঢাকা সফর করেন 1948-এর মার্চ মাসে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হিসাবে । তার ঠিক কয়েক মাস আগেই 1947 সালের 15 অগস্ট পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে ঘোষিত হয় ধর্মীয় ভিত্তিতে ৷

1958 সালের মার্চ মাসে জিন্না যখন ঢাকাতে পৌঁছান তখনই পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে । ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত জিন্নার পারিষদরা ইতিমধ্যেই উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্টীয় ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে, এই অজুহাতে যে পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু মানুষ উর্দুতেই কথা বলে । এই ঘটনা বাংলাভাষিদের আবেগের উপর একটা গুরুতর আঘাত হানে ।

ঢাকার ছাত্ররা একটা অ্যাকশন কমিটির গঠন করে এবং প্রাদেশিক আইনসভার মদতে তাঁদের এই ভাষা আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি পরবর্তীকালে মুক্তি আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন, সে সময়ে ছিলেন এক তরুণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি সেই সময় ছাত্রদের আন্দোলনে সামিল হন এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নেন । 1952 সালের 21-এ ফেব্রুয়ারি সকালে হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হন এবং 144 ধারা অমান্য করে তাঁরা প্রদেশের আইনসভার দিকে মিছিল রওনা হন । পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস ফাটায় ৷ শেষে গুলি পর্যন্ত চালায় । স্বাধীন পাকিস্তানের রাস্তায় সেদিন প্রথম রক্ত ঝরে । মৃত্যু হয় সালাম, রফিক, বরকত এবং জব্বারের মতো আরও অনেকের । পুলিশকে গুলি চালানোর হুকুম দেয় মুসলিম লিগ নেতা এবং মুখ্য়মন্ত্রী খোয়াই নাজিমুদ্দিন । বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ছাত্রদের রক্ত দিয়ে ।

আরও পড়ুন : একুশে ফেব্রুয়ারি কী ? উত্তর শুনলে লজ্জায় মাথানত হবে

আরও খবর : বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখাই একুশের অঙ্গীকার

1971 সালের 16 ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ৷ স্বাধীন হয় বাংলাদেশ । মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পর বাংলাদেশ যে বিজয় উল্লাসে মেতেছিল তার ভাগিদার ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীও । পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্য়াচারের হাত থেকে 1 কোটি বাংলাদেশীকে বাঁচিয়েছিল ভারত।

আরও পড়ুন : একুশের বইমেলা ও ঢাকা

বাংলাদেশ, সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার সৃষ্টি ভাষার উপর দাঁড়িয়ে । সেই থেকেই 21-এ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা শাহিদ দিবস হিসেবে বলে পালন করা হয় । ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করেই আজ সারা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে পালিত হয় একুশের বই মেলা । প্রতি বছর 21-এ ফেব্রুয়ারি সকালে হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশু প্রভাতফেরিতে অংশ নেন । শতকণ্ঠে ধনিত হয় অমরসংগীত— "আমরা ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি !" মিছিল পৌঁছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে । সেখানে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয় । এ একান্তই বাঙালির নিজস্ব গর্ব, যা পালিত হয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং সারা পৃথিবীতে ৷ যেখানেই বাঙালির বাস।

(লেখক : প্রেস মিনিস্টার (প্রাক্তন), বাংলাদেশ হাই কমিশন)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.