হাওড়া, 9 ফেব্রুয়ারি : ‘‘যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, সহস্য শৈবালদাম বাধে আসি তারে ৷’’ হাওড়ায় সরস্বতী নদীর অবস্থা ঠিক এইরকম ৷ হুগলির ত্রিবেণী হল গঙ্গা ও তার দুই শাখা নদী যমুনা ও সরস্বতীর মিলনস্থল ৷ কিন্তু, সেই সরস্বতী নদী এখন অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে (River Saraswati is on Extinction in Howrah) ৷ যেখানে তৈরি কোথাও তৈরি হয়েছে বেআইনি মাছের ভেড়ি, তো কোথাও ইটভাটা গজিয়ে উঠেছে নদীবক্ষে ৷
ষোড়শ শতকে ত্রিবেণী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সপ্তগ্রাম হয়ে বয়ে চলত সরস্বতী নদী ৷ কিন্তু, তার পর থেকেই সরস্বতী নদীর উৎপত্তিস্থলে পলি জমতে শুরু করে ৷ আর ধীরে ধীরে তা শুকিয়ে যায় ৷ সেই সরস্বতী নদী বর্তমানে নিতান্তই একটি খালে পরিণত হয়েছে ৷ তার চারিদিকে শুধুই দূষণ ৷ তার মজে যাওয়া শাখা আন্দুল কলেজের পাশ দিয়ে এখনও রয়েছে ৷ কিন্তু, সেটাই কিছু দূর গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে জনবসতির চাপে ৷ অভিযোগ কোথাও আবার মাছের ভেড়ি তৈরি হয়েছে (Illegal Business on River Saraswati) ৷ কোথাও আবার গজিয়ে উঠেছে ইটভাটা ৷
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন ঐতিহ্যের এই সরস্বতী নদীকে গ্রাস করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ৷ যার ফলে নদী ক্রমশ ছোট হতে হতে নালায় পরিণত হয়েছে ৷ হাওড়া শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অনেকটাই নির্ভর করত এই প্রাচীন নদীর উপর ৷ ধীরে ধীরে নদী দখল হয়ে যাওয়ায় শহরের জল নিকাশির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে । বিভিন্ন সরকারি দফতরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : River Erosion in Dinhata : ভাঙনের জেরে নদীগর্ভে প্রায় 40টি বাড়ি, আতঙ্কে দিনহাটা
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, অতীতে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন ৷ সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘লক্ষ্মীর হাতে সরস্বতীর পরাজয়’, মানে নগরোন্নয়ন ও বাণিজ্যের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখ থাকা এই নদী ৷ জানিয়েছেন সরস্বতী নদীকে বাঁচাতে তিনি ফের পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হবেন ৷
গোটা বিষয় নিয়ে শাসকদলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও ৷ বিরোধী বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, সরস্বতী নদীকে বিভিন্ন সময় শাসকদল নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে ৷ অন্যান্য রাজ্যে নজরদারি চালানোর বিভিন্ন সংস্থা যেভাবে কাজ করে, এ রাজ্যে তা চোখে পড়ে না । সব সংস্থা রাজনীতির প্রভাবে প্রভাবিত ৷ মানুষের স্বার্থে তারা এই বিষয়ে সঠিক জায়গায় আবেদন করবেন ৷