দুর্গাপুর, 7 অক্টোবর : শঙ্কর সরকার । ছেলেবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন । কিন্তু প্রবল আর্থিক সঙ্কটে চিকিৎসা করানাে সম্ভব হয়নি ৷ তাই সেই ছেলেবেলা থেকেই শেকলবন্দি শঙ্কর ৷ নাহলে এদিক-সেদিক চলে যায় ছেলে ৷ খুঁজে পেতে ভারী বেশ পেতে হয় একা মাকে ৷ তাই এই ব্যবস্থা ৷ দুর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লির বাসিন্দা ফুলমালা সরকারের হতদরিদ্র সংসারের এই ছবি দেখে মনখারাপ প্রতিবেশীদেরও ৷
বেশ কয়েকবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করানো চেষ্টা হয়েছে শঙ্করের ৷ কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি ৷ বরং উল্টে ছেলেটির বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে । আর এমনিতেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ৷ তাই বড় কোনও চিকিৎসকের কাছেও আর যাওয়া সম্ভব হয়নি ৷ দুর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লির বাসিন্দা শঙ্করের বাবা অন্যের জমিতে চাষ করে কোনওরকমে দিন গুজরান করেন ৷ আর্থিক অনটনের সংসারে এখন শঙ্করের ভরসা বলতে এই লোহার শেকল ৷
ছাড়া পেলে শঙ্কর ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায় ৷ তখনই মায়ের খোঁজ পড়ে যায় ৷ শঙ্করের মা ফুলমালা সরকার জানান, একবার ছেলে এভাবে বাড়ি থেকে কোথাও চলে যায় ৷ 10-12 দিন খোঁজ পাওয়া যায়নি তার ৷ অনেক খোঁজাখুজির পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন ৷ এমনিতে ধরে রাখা দায় ৷ মাঝে মধ্যে মারধরও করে সে ৷ সেসবের বেশিরভাগটাই মাকেই পোহাতে হয় ৷ তাই ছেলের কাছে থাকেন তিনি-ই ৷ পাড়া-প্রতিবেশীদের কোনও অনিষ্ট না হয়ে যায় বা ফের ছেলে হারিয়ে না যায়, তার জন্যই এই শিকলের ব্যবস্থা ৷
ফুলমালার অভিযোগ, সরকারি তেমন কোনও সাহায্য তাঁরা পাননি এর জন্য ৷ তবে যদি পান তাহলে এখনও ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন তা থেকেই ৷ নাহলে তাঁদের মতো দুঃস্থ পরিবারে তা সম্ভবই নয় ৷
এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন মতো সরকারি সাহায্য না পাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই ৷ তিনি এর দায় রাজ্য সরকারের উপরই চাপিয়েছেন ৷ তবে কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না ৷ অভাবি এই পরিবার যাতে তাদের ছেলের চিকিৎসার সুযোগ পায় তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি ।
আরও পড়ুন : Chandrakona : মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসার আর্জিতে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা মায়ের