দুর্গাপুর, 16 এপ্রিল : বাকি বাংলা থেকে সচেতনভাবে নিজেদের আলাদা করেছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা ৷ যখন ভোটহিংসা নিয়ে সর্বভারতীয় পর্যায়ে দুর্নাম বাংলার, সেখানে শিল্পশহর দুর্গাপুরের অন্যতম প্রাচীন জনপদ করঙ্গপাড়ার গল্প একশো আশি ডিগ্রি আলাদা ।
দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন এই প্রাচীন গ্রামে রাজনীতি পাত্তা পায় না ৷ ভোট থাকলেও এই গ্রামে প্রচার, মিছিল, দেওয়াল লিখন, রাজনৈতিক আকচা-আকচিতে মানা ৷ সেই নিয়ম মেনে এবারও গ্রামের কোনও দেওয়ালে নেই রাজনীতির রঙ ৷ গ্রামের কোনও রাস্তায় নেই বিধানসভা ভোটের প্রার্থীর সমর্থনে ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন-ব্যানারও ৷ এবছরও প্রথা মেনে এলাকার পুরনো রেওয়াজকে মান্যতা দিয়েছে করঙ্গপাড়ার মানুষ । যদিও এই গ্রামেরই বাসিন্দা দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ৷ তিনি এবারও তৃণমূল প্রার্থী ৷ এমনকী করঙ্গপাড়ার বাসিন্দা দুর্গাপুর নগর নিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর দেবব্রত সাঁইও ৷ এছাড়াও বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দোপাধ্যায়, বিজেপির জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্তও এই গ্রামের মানুষ । তথাপি ভোটের মরসুমেও করঙ্গপাড়া এই বাংলার এক শান্ত, সবুজ গ্রাম মাত্র । তবে প্রচার কী একদমই নেই ৷ আছে, তবে তা চলছে নিরিবিলি ভঙ্গিতে ৷
আরও পড়ুন: কোভিড আবহে কি একদিনেই বাকি ভোট ? আজ সর্বদলীয় বৈঠকে কমিশন
গ্রামের ছেলে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়াল, বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মণ ঘোড়ুই ও সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী দেবেশ চক্রবর্তী আজ প্রচার করলেন করঙ্গপাড়ায় ৷ গ্রামের শিব মন্দিরে পুজো দিলেন তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী ৷ পথ চলতি মানুষের সঙ্গে আলাপ করলেন ৷
তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বললেন, "শতাব্দী প্রাচীন এই জনপদই আমার রাজনীতির পিতৃভূমি ৷ কিন্তু আমাদের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়ম, এখানে দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ৷ সেই নিয়ম সবার মতো আমিও পালন করছি ৷"
বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, "করঙ্গপাড়া দীর্ঘদিনের যে রীতি আছে, তাতে মান্যতা দিয়েই শিব মন্দিরে পুজো দিলাম ৷ মানুষের সঙ্গে কথা বললাম ৷"
গ্রামবাসী সুব্রত দত্ত-র কথায়, "প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করতেই পারেন ৷ কিন্তু দলের ঝাণ্ডা, স্লোগান, দেওয়াল লিখন, মিটিং-মিছিল করা যাবে না আমাদের গ্রামে ৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা এই নিয়ম করে গিয়েছিলেন ৷ আমরা সে নিয়মকে সম্মান দিয়ে এখনও মেনে চলছি ৷"
আসল কথা, বঙ্গ রাজনীতির চেনা ছবি রাজনৈতিক হিংসা ছাড়াই ভোট হবে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের করঙ্গপাড়ায় ৷ যা বাকি বাংলার জন্য নিঃশব্দ বার্তা ৷