আসানসোল, 24 জানুয়ারি : বিষাক্ত হয়ে উঠছে দামোদর নদ । কলকারখানা নির্গত জলে মিশে যাচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ । এর ফলে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে দামোদরের জল । চিকিৎসকদের মতে, এই জল একেবারেই ব্যবহার যোগ্য নয়।
দামোদর নদের জলের উপর নির্ভরশীল পূর্ব, পশ্চিম বর্ধমান সহ রাজ্যের একাধিক জেলা । একদিকে কৃষি, অন্যদিকে পানীয় জল হিসেবে এই নদীর জল ব্যবহৃত হয় । কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই নদীর জল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ?
আসানসোলের বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে দামোদরের দূষণ প্রতিরোধ নিয়ে সরকারি মহলে দাবি তুলছেন । চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা দামোদরের জল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন । ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দামোদর নদে মিশছে। যার ফলে নদের জল দূষিত হয়ে উঠছে। ডাক্তার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, "পরিশুদ্ধ করে জল থেকে ব্যাকটেরিয়া সরানো যায় ৷ কিন্তু রাসায়নিক পদার্থ জলের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে এবং যার ফলে দামোদরের অববাহিকায় যে সমস্ত এলাকা রয়েছে সে সমস্ত এলাকার মানুষজন ব্রেন টিউমার থেকে শুরু করে স্কিন ক্যানসার এবং নানারকম রোগে ভোগার সম্ভাবনা ।"
আসানসোল পৌরনিগমের জল বিভাগের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়ের দাবি, দামোদরের জল পরিশুদ্ধ করতে তাঁদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে । এভাবে দূষণ ছড়ালে আগামী দিনে আসানসোলের মানুষকে পরিশুদ্ধ জল দিতে তাঁরা পারবেন না । বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন । আসানসোলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় পরিবেশ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন আসানসোল পৌরনিগমের মেয়র পারিষদ ।
কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, "বিভিন্ন কলকারখানাকে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে তারা যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয় । সরকার সহযোগিতা করবে। যদি ফ্যাক্টরিগুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করে তবে আগামী দিনে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ভারতের হোয়াং-হো নদ বলা হত দামোদরকে । মৎস্যপুরাণে এই নদকে মহাগৌরী বলে ডাকা হত । একসময় বুকভরা জল নিয়ে প্রবাহিত হত দামোদর । আজ সেই নদের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে । শ্বাস নিতে পারছে না দামোদর । সাধারণ মানুষ চাইছেন অবিলম্বে সরকার কড়া হাতে এই দূষণ রোধ করুন।