হায়দরাবাদ, 7 এপ্রিল: সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না । আমাদের জীবনের অনেক পর্যায়ের মতো, অবসর একটি সংখ্যা মাত্র । ওই সময়টা উপভোগ করার সুযোগ আমাদের হাতেই রয়েছে । যারা আগে থেকে প্রস্তুত থাকবেন, তাঁদের জন্য এটা বড় বিষয় হবে না । এমনকি এই প্রস্তুতি নিতে যদি এক বছরও দেরি করেন, তাহলে অবসর তহবিলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবসর পরিকল্পনা শুরু করা উচিত ।
অবমূল্যায়ন: অনেকে অবসর গ্রহণের পরিকল্পনা করার সময় ব্যয়ের অবমূল্যায়ন করেন । আপনি কীভাবে আপনার অবসর জীবন কাটাতে চান, তার উপর ভিত্তি করে খরচের হিসেব উচিত । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে । এই বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত ৷ তাছাড়া নিয়মিতভাবে অবসরকালীন সময়ে কী পাবেন, তা পর্যালোচনা করা উচিত ৷ সেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগে সামঞ্জস্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ । বেশিরভাগ লোকেরা অবসর গ্রহণকে তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করেন ৷ তবে জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন ও তাঁর জন্য ব্যয়কেও হিসেবের মধ্যে রাখলে তবে পরিকল্পনা সঠিক হবে ৷
পর্যালোচনা না করা: প্রতিটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা বছরে অন্তত একবার পর্যালোচনা করতে হবে । কোনও অবস্থাতেই একই ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পে বারবার বিনিয়োগ করবেন না । নিরাপদ বিনিয়োগ স্কিমগুলির সঙ্গে এমন কিছু প্রকল্প যুক্ত করতে হবে, যেখানে লাভ বেশি হয় ৷ অবসর গ্রহণের পরে নিয়মিত আয় পাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া স্কিমগুলিও আলাদা হওয়া উচিত । সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিম ও ঋণ তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমিক টাকা তুলে নেওয়ার মতো বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত ।
মুদ্রাস্ফীতি উপেক্ষা করা: মুদ্রাস্ফীতি আমাদের অর্থের মূল্য হ্রাস করে । যদি আজ আপনার পরিবারের খরচ 25 হাজার টাকা হয় ৷ তাহলে 20 বছর পর আট শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ধরে নিয়ে আপনার পারিবারিক খরচ পৌঁছাবে 1 লক্ষ 16 হাজার 524 টাকায় । সুতরাং অবসরের বিনিয়োগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত । অবসর গ্রহণের পরেও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বজায় থাকে । তাই সেই অনুযায়ী আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে । চিকিৎসা পরিষেবা যেহেতু আগের থেকে অনেক উন্নত হচ্ছে, তাই বিশেষজ্ঞরা 100 বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার হিসেবে খরচের হিসেব করার পরামর্শ দেন । মুদ্রাস্ফীতিকে কোনও পর্যায়ে অবহেলা করবেন না । বিনিয়োগ করার সময়, এমন স্কিমগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যেখান থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায় ।
আপনি যদি সুরক্ষিত প্ল্যান বেছে নেন: অনেকেই তাদের অবসরের প্রয়োজনের জন্য উদ্যোগ ভবিষ্যনিধি, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ন্যাশনাল পেনশন স্কিম-এর মতো স্কিম বেছে নেন । এনপিএস বাদে অন্য দু’টি স্কিম সম্পূর্ণ নিরাপদ । কিন্তু শুধু এসব দিয়ে অবসরকালীন সময়ে টাকার জোগাড় করা সম্ভব নয় ৷ আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ উপার্জন করতে চান, তাহলে আপনার এমন স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করা উচিত, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য তুলনামূলকভাবে উচ্চ রিটার্ন দেয় ৷ ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করা যেতে পারে । ইউনিট ভিত্তিক বিমা পলিসি ও প্রচলিত পলিসি তো রয়েছেই । তবে বিমার উদ্দেশ্যে এগুলি বেছে নিলে, তা খু খুব বেশি কাজে আসবে না । যতটা সম্ভব সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম-সহ সর্বাধিক সুরক্ষা প্রদান করে এমন পলিসিগুলি বেছে নিন ।
অবসর তহবিল থেকে টাকা তোলা এড়িয়ে চলুন: অবসর মানে কাজ থেকে অবসরে রূপান্তর । এটি আয়ের শেষ ও ব্যয়ের শুরু হিসেবে চিহ্নিত হয় । আপনার যদি সঠিক পরিকল্পনা না থাকে, তবে আপনি আর্থিক ক্ষতি হতে পারে । যতটা সম্ভব অবসর তহবিল থেকে টাকা তোলার বিষয়টি এড়িয়ে চলুন । শুধু তহবিল থেকে সুদ দিয়েই ব্যয় মেটাতে হবে । বাধ্যতামূলক প্রয়োজন থাকলেও দুই থেকে তিন শতাংশের বেশি টাকা তুলবেন না । টাকা তোলার সীমা থাকা উচিত ।
নতুন ঋণ: অবসরের দুই বছর আগে ঋণ থেকে মুক্তি পান । নতুন ঋণ নিতে যাবেন না । কেউ কেউ 50 বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর গৃহঋণ নেন । সুদের হার বৃদ্ধি পেলে সময়কাল বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ অবসর গ্রহণের পরেও ইএমআই দিতে হবে । পার্সোনাল লোনের মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে । ঋণ পরিশোধ করতে আপনার সঞ্চয় ব্যবহার করবেন না ৷
স্বাস্থ্যখাতে খরচ: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে । কিন্তু অনেকেই বিষয়টি উপেক্ষা করেন । অপ্রত্যাশিত অসুস্থতা আপনার স্বাস্থ্য তহবিলে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে । অফিস থেকে পাওয়া গ্রুপ বিমার সুবিধা চাকরি ছাড়ার পরে কাজে নাও আসতে পারে । সুতরাং, আপনার চাকরি থাকাকালীন একটি নীতি নেওয়ার চেষ্টা করুন । একজন প্রবীণ নাগরিকের দেরি না করে স্বাস্থ্য বিমা পলিসি নেওয়া উচিত ।
আরও পড়ুন: প্রথম বেতন থেকেই ভবিষ্যতের জন্য টাকা বাঁচান