দিল্লি, 1 মে : লকডাউনের দ্বিতীয় দফা শেষ হতে বাকি মাত্র 2 দিন । তবে, লকডাউন পুরোপুরি উঠবে কি না সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি । লকডাউন না উঠলেও গ্রিন বা অরেঞ্জ জ়োনের কিছু এলাকায় আংশিক ছাড় মিলবে বলে মনে করা হচ্ছে । এই একমাসেরও বেশি সময় লকডাউন, তাতে ছাড় বা এর সময়সীমা বাড়লে ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থা অর্থাৎ এর ক্ষতি ও পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে নিরন্তর আলোচনা চালাচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা । এক্ষেত্রে তাঁদের একাংশ মনে করছেন, যে বহুজাতিক সংস্থাগুলি নিজেদের চিন থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে, তাদের আকর্ষণ করতে পারলেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতি খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে । এক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা ।
এবিষয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর আর গান্ধি বলেন, "ভারতীয় বৃহৎ বাজারে প্রাথমিক একটা বৃদ্ধি রয়েছে । তাই ভারতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ক্ষেত্রটি অন্যরকম হতে চলেছে । এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলির থেকে এটি আলাদাই হবে । " মুম্বইয়ের একটি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস (ইপিএস) আয়োজিত ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলি ভারতের হয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে ।"
অর্থনীতির উপর COVID-19 এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য, উন্নত অর্থনীতির খাতিরে US ফেডারেল রিজ়ার্ভ এবং কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নগদ টাকা জোগান বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে । এবিষয়ে আর গান্ধি বলেন, "উন্নত অর্থনীতির তাগিদে সব ব্য়াঙ্কই ভালো মতো রিটার্ন পাওয়ার চেষ্টা করবে । তাই তারা সেখানেই বিনিয়োগ করবে যেখানে আর্থিক বৃদ্ধি থাকবে । এক্ষেত্রে ভারত শীর্ষে থাকবে ।"
চিনের ক্ষতি ভারতের ক্ষেত্রে লাভ হতে পারে ? আর গান্ধি বলেন, " চিনের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে ভারত উপকৃত হবে ।"
কোরোনা সংক্রমণের শুরু দিকে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ পশ্চিমের দেশগুলির বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান কোরোনার পিছনে চিনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন । যা পরে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্যানডেমিক আকারের রূপ নিয়েছে। অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইট্যালি এবং স্পেনের মতো বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে কোরোনা আর লকডাউন পরিস্থিতির জেরে । ফলে চিনে বিনিয়োগ বা চিনে সংস্থা রাখার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে । আর এতেই লাভ হবে ভারতের ।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলছে, চিন থেকে যেসকল বহুজাতিক সংস্থা বেরিয়ে যেতে চাইছে, তারা কিন্তু দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশেই বিনিয়োগ করতে চাইছে । আর গান্ধির কথায়, "এই সকল বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হলে ভারত এই সুযোগটি হাতছাড়া করতে পারে ।"
এক্ষেত্রে ভারতের বৃহৎ দেশি বাজারগুলি বিনিয়োগের বিষয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে -
ভারতের বৈচিত্র্যময় উৎপাদন ক্ষেত্র এবং দেশি জিনিস ব্যবহারের প্রবণতা ভারতকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্পে পরিণত করতে পারে । ভারতীয় শিল্পসংস্থাগুলি বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারে যার বাজার দেশের মধ্যেই বর্তমান । এবিষয়ে আর গান্ধি বলছেন, “দেশের রপ্তানি বাজারের উপর নির্ভর করতে হবে না । দেশের বাজারগুলিতে আগে থেকেই একটি বিপুল সংখ্যক গ্রাহক রয়েছে । অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে একটা গতি রয়েছে । যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ করবে ।"
তিনি আরও বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মূলত বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগের (FPI) রাস্তা দিয়ে আসবে । তবে এর মাধ্যমেই বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে । যদি তিন মাস, ছ'মাস বা তারও বেশি সময় ধরে বাজারের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখা যায় তাহলে দেখা যাবে ভারতীয় বাজার ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হচ্ছে ।"
- প্রতিবেদনটি লিখেছেন কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠী