ETV Bharat / business

উন্নতির প্রধান অন্তরায় বেড়ে চলা আর্থিক বৈষম্য

এক দিকে যেমন আমরা দেখতে পাই গগনচুম্বী অট্টালিকা, অন্য দিকে আমরা দেখতে পাই পর্ণ কুটির ৷

উন্নতির প্রধান অন্তরায় বেড়ে চলা আর্থিক বৈষম্য
উন্নতির প্রধান অন্তরায় বেড়ে চলা আর্থিক বৈষম্য
author img

By

Published : Jan 7, 2020, 1:57 PM IST

বিত্তবান ও নিম্নবিত্তের মধ্যে সর্বদা বেড়ে চলা আর্থিক ফারাক আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, যা পরবর্তী দশকের উন্নতির প্রধান অন্তরায় হতে চলেছে ৷ এক দিকে আছেন সেই শ্রেণির মানুষ, যাঁরা প্রতি দিনের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু মেটাতে জীবনযুদ্ধ করে চলেছেন, আর অন্য দিকে আছেন আর এক শ্রেণি, যাঁদের জন্মই হয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে।

এক দিকে যেমন আমরা দেখতে পাই গগনচুম্বী অট্টালিকা, অন্য দিকে আমরা দেখতে পাই পর্ণ কুটির। এক পক্ষকে আমরা দেখতে পাই ঝাঁ চকচকে জামাকাপড়, জুতো পরে থাকতে, আবার একই

জায়গায় অন্য এক পক্ষকে দেখতে পাই,যাঁদের পরনে থাকে জীর্ণ, মলিন জামা। এ এক বিচিত্র বিশ্বে আমরা বাস করি এবং দুর্ভাগ্যবশত মনে হয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই দৃশ্য দেখেই বড় হবে। প্রতি দিনই যেন উচ্চ আর নিম্নবিত্তের মধ্যে ফারাকটা বেড়েই চলেছে। আরও চমকে দেওয়া তথ্য হল, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ধনী রয়েছেন, যার ফলে এঁদের বিত্তের নাগাল পাওয়াই প্রায় অসম্ভব।

উচ্চ ও নিম্নবিত্তের এই বেড়ে চলা ফারাকে সমস্যায় পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি এবং সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছে ভারত। আগামী দশকে এই ফাঁক আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হল, এই ফাঁক কমাতে সরকার বা সাধারণ মানুষের কি আদৌ কিছু করার আছে?

কয়েকটি ঘটনা ও তথ্য এই আর্থিক ফারাক বোঝাতে সাহায্য করবে:

• একটি বস্ত্র কারখানার মালিকের বার্ষিক বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আয় করতে ওই কারখানার অক জন সাধারণ শ্রমিকের ৯৪১ বছর সময় লাগে।

• গ্রামীণ শিল্পে ৫০ বছর পরিশ্রম করে এক শ্রমিক যা আয় করেন, তা একই শিল্পে কাজ করা সর্বোচ্চ বেতনভুক ১৮ দিনে আয় করেন। ভারতবর্ষ অত্যন্ত দ্রুত উন্নতি করছে এবং দুর্ভাগ্যবশত

নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের মধ্যে আর্থিক ফারাকটা বেড়েই চলেছে । যখন বিশ্বের মোট সম্পদের বেশির ভাগটা মুষ্টিমেয় কিছু বিত্তবানের হাতে সীমাবদ্ধ, তখনই নিম্নবিত্তদের প্রতি দিনের
সাধারণ প্রয়োজনটুকু মেটাতেই নাভিশ্বাস উঠছে। সমাজের দুই শ্রেণির মধ্যে এই ফারাকটা শুধুমাত্র এ দেশে নয়, বিশ্ব জুড়েই বেড়ে চলেছে। অর্থনীতিবিদদের অনুমান, আগামী দশকে এই
ফারাকটা আরও বাড়বে আর তার মোকাবিলা করাই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ।

কেন এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ?

মনে করা হচ্ছে, ২০৩০-এর শেষে বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৫ শতাংশের মালিক হবেন মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষ। এই ভয়ঙ্কর তথ্য থেকে ভারতও মুক্ত নয়। জানুয়ারি ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে শত-কোটিপতির সংখ্যা ১৩৪। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাদের মোট আয় (প্রায় ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা) দেশের সবক’টি রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক খরচের মোট পরিমাণের প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিল।

অর্থনীতিবিদরা এই অবস্থা নিয়ে সাবধান করে বলছে, আগামী এক দশকে এই বিশাল ফারাক কমাতে না পারলে দেশের সামাজিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি বড় আকারের গোষ্ঠী সংঘর্ষও অসম্ভব নয়।

এই ধরনের অসাম্যের পরিণাম কী হতে পারে?• আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা ১৩৬ কোটি। এর মধ্যে ২১.৯ শতাংশ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন।• শহরকেন্দ্রিক বিনিয়োগ ও সভ্যতা উন্নয়নের দিক থেকে গ্রামকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। • ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে অর্থনৈতিক বাধা একটা বড় সমস্যা। এ দেশে কৃষকরা প্রতি বছর আরও বেশি করে ঋণে ডুবে যান।• অন্য দিকে, দেশে যখন লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন, তখনই দেশের শিল্পজগত প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাবে সমস্যায় পড়ছে।

আপনি কি জানেন?

  • এই অর্থনৈতিক ফাঁক ভরাট করতে সরকার ইতিমধ্যেই চাকরি নিশ্চিতকরণ প্রকল্প, জনধন যোজনা, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল্যা যোজনা, স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়ার মতো একাধিক প্রকল্পের
  • কাজ শুরু করেছে।
  • নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্থিক ফাঁক কমানোর তালিকায় খুবই ভাল কাজ করছে মেঘালয়, মিজোরাম, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যগুলো। তালিকার ১৫ নম্বরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ।
  • দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আয়ের বিপুল ফারাক
  • ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের সাধারণ শ্রমিকদের আয় বেড়েছে মাত্র দুই শতাংশ। অন্য দিকে, বিত্তবানদের আয় বেড়েছে ৬০০ শতাংশ।
  • বিশ্বে ১০ হাজার কোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা দুই হাজার ৪৩। গত বছর তাঁদের আয় বেড়েছে আরও ৭৬ হাজার কোটি ডলার। দেশে আয়করের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি দিন জন্ম নেওয়া ৭০ শিশু জন্ম থেকেই ১০ লক্ষ টাকার মালিক হবে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এমন জন্ম থেকেই ধনীর সংখ্যা তিন লক্ষ ৩০ হাজার!• মনে করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটা সব রেকর্ড ছাপিয়ে পৌঁছে যাবে এক কোটিতে। অর্থাৎ সেই সময়ের মধ্যে এক কোটি এমন মানুষ থাকবেন, যাঁরা জন্ম থেকেই বিপুল বিত্তবান।
  • এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারের কী করণীয়?
  • প্রান্তিক মানুষদের দিকে বেশি করে নজর দিতে হবে
  • সব শ্রেণির মধ্যে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে হবে। দেখতে হবে, যেন গরিবের আয় বৃদ্ধির হার ধনির আয় বৃদ্ধির হারের সমান হয়।
  • সেই সব ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করা উচিত, যে সব ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ অনেকটাই বেশি এবং যা দেশের যুব সমাজের ক্ষেত্রে বেশি কারযকর।
  • গরিবদের জন্য দারিদ্র দূরিকরণ প্রকল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগু‌লি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে
  • কার্যকর হতে পারে গরিবদের কাছে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
  • যে কোনও মূল্যে দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে। দুর্নীতির ফলে
  • সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব মানুষরাই। তাই দুর্নীতি বন্ধে আরও
  • কঠোর আইন, আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাড়াতে
  • হবে চাকরির পরিমাণ এবং কাজের নিরাপত্তাও।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গরিবদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করতে হবে।
  • কর সংগ্রহে খামতি পূরণ করতে হবে।
  • শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, কাজের দিক থেকেই বিত্তবানদের ধনী হতে হবে ৷
  • বিত্তবানদের তাঁদের বিপুল সম্পদের কিছুটা অংশ দান করতে হবে। সমাজসেবার জন্য দিতে হবে আয়ের কিছুটা অংশ। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারেন ওয়ারেন বাফে, বিল গেটস, আজিম প্রেমজি, শিব নাদর, নারায়ণস্বামী, টাটা এবং বিড়লারা। সেই সব দানের অর্থ দিয়ে গরিব মানুষদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, শৌচালয়, প্রভৃতির উন্নতিতে কাজে লাগাতে হবে।
  • নাগরিকদের দায়িত্ব দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তাঁদের ভবিষ্যতের আর্থিক প্রয়োজ‌নের বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। আয় যা-ই হোক না কেন, আগে টাকা জমানো, পরে বাকি অর্থ দিয়ে জীবনযাপন—
  • এই কথাটা প্রত্যেকের মজ্জাগত করে ফেলতে হবেই। বেহিসাবি খরচ ও বিলাসের জীবন যাপন করা থেকে বিরত থাকতেই হবে।
  • গরিব আরও গরিব হয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা খরচের জন্য।
  • লাইফস্টাইল ডিজিজ থেকে বাঁচতে বাড়ির পরিবেশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আচমকা হওয়া কোনও বিপদ থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা করাতেই হবে।
  • ছেলেমেয়েদের শিক্ষাখাতে খরচকে বিনিয়োগ হিসাবে ধরতে হবে প্রতি পরিবারকে। যদি গরিব পরিবারের সন্তান উচ্চশিক্ষিত হয়, তাঁরা ভবিষ্যতে পরিবারের রক্ষক হয়ে উঠতে পারবেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করতেও অনুঘটকের কাজ করতে পারবেন।
  • এই ধরনের সমাধান থেকেই আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভেদ থেকে দেশ ও বিশ্বকে মুক্ত করতে পারব।

বিত্তবান ও নিম্নবিত্তের মধ্যে সর্বদা বেড়ে চলা আর্থিক ফারাক আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, যা পরবর্তী দশকের উন্নতির প্রধান অন্তরায় হতে চলেছে ৷ এক দিকে আছেন সেই শ্রেণির মানুষ, যাঁরা প্রতি দিনের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু মেটাতে জীবনযুদ্ধ করে চলেছেন, আর অন্য দিকে আছেন আর এক শ্রেণি, যাঁদের জন্মই হয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে।

এক দিকে যেমন আমরা দেখতে পাই গগনচুম্বী অট্টালিকা, অন্য দিকে আমরা দেখতে পাই পর্ণ কুটির। এক পক্ষকে আমরা দেখতে পাই ঝাঁ চকচকে জামাকাপড়, জুতো পরে থাকতে, আবার একই

জায়গায় অন্য এক পক্ষকে দেখতে পাই,যাঁদের পরনে থাকে জীর্ণ, মলিন জামা। এ এক বিচিত্র বিশ্বে আমরা বাস করি এবং দুর্ভাগ্যবশত মনে হয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই দৃশ্য দেখেই বড় হবে। প্রতি দিনই যেন উচ্চ আর নিম্নবিত্তের মধ্যে ফারাকটা বেড়েই চলেছে। আরও চমকে দেওয়া তথ্য হল, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ধনী রয়েছেন, যার ফলে এঁদের বিত্তের নাগাল পাওয়াই প্রায় অসম্ভব।

উচ্চ ও নিম্নবিত্তের এই বেড়ে চলা ফারাকে সমস্যায় পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি এবং সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছে ভারত। আগামী দশকে এই ফাঁক আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হল, এই ফাঁক কমাতে সরকার বা সাধারণ মানুষের কি আদৌ কিছু করার আছে?

কয়েকটি ঘটনা ও তথ্য এই আর্থিক ফারাক বোঝাতে সাহায্য করবে:

• একটি বস্ত্র কারখানার মালিকের বার্ষিক বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আয় করতে ওই কারখানার অক জন সাধারণ শ্রমিকের ৯৪১ বছর সময় লাগে।

• গ্রামীণ শিল্পে ৫০ বছর পরিশ্রম করে এক শ্রমিক যা আয় করেন, তা একই শিল্পে কাজ করা সর্বোচ্চ বেতনভুক ১৮ দিনে আয় করেন। ভারতবর্ষ অত্যন্ত দ্রুত উন্নতি করছে এবং দুর্ভাগ্যবশত

নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের মধ্যে আর্থিক ফারাকটা বেড়েই চলেছে । যখন বিশ্বের মোট সম্পদের বেশির ভাগটা মুষ্টিমেয় কিছু বিত্তবানের হাতে সীমাবদ্ধ, তখনই নিম্নবিত্তদের প্রতি দিনের
সাধারণ প্রয়োজনটুকু মেটাতেই নাভিশ্বাস উঠছে। সমাজের দুই শ্রেণির মধ্যে এই ফারাকটা শুধুমাত্র এ দেশে নয়, বিশ্ব জুড়েই বেড়ে চলেছে। অর্থনীতিবিদদের অনুমান, আগামী দশকে এই
ফারাকটা আরও বাড়বে আর তার মোকাবিলা করাই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ।

কেন এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ?

মনে করা হচ্ছে, ২০৩০-এর শেষে বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৫ শতাংশের মালিক হবেন মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষ। এই ভয়ঙ্কর তথ্য থেকে ভারতও মুক্ত নয়। জানুয়ারি ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে শত-কোটিপতির সংখ্যা ১৩৪। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাদের মোট আয় (প্রায় ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা) দেশের সবক’টি রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক খরচের মোট পরিমাণের প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিল।

অর্থনীতিবিদরা এই অবস্থা নিয়ে সাবধান করে বলছে, আগামী এক দশকে এই বিশাল ফারাক কমাতে না পারলে দেশের সামাজিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি বড় আকারের গোষ্ঠী সংঘর্ষও অসম্ভব নয়।

এই ধরনের অসাম্যের পরিণাম কী হতে পারে?• আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা ১৩৬ কোটি। এর মধ্যে ২১.৯ শতাংশ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন।• শহরকেন্দ্রিক বিনিয়োগ ও সভ্যতা উন্নয়নের দিক থেকে গ্রামকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। • ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে অর্থনৈতিক বাধা একটা বড় সমস্যা। এ দেশে কৃষকরা প্রতি বছর আরও বেশি করে ঋণে ডুবে যান।• অন্য দিকে, দেশে যখন লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন, তখনই দেশের শিল্পজগত প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাবে সমস্যায় পড়ছে।

আপনি কি জানেন?

  • এই অর্থনৈতিক ফাঁক ভরাট করতে সরকার ইতিমধ্যেই চাকরি নিশ্চিতকরণ প্রকল্প, জনধন যোজনা, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল্যা যোজনা, স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়ার মতো একাধিক প্রকল্পের
  • কাজ শুরু করেছে।
  • নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্থিক ফাঁক কমানোর তালিকায় খুবই ভাল কাজ করছে মেঘালয়, মিজোরাম, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যগুলো। তালিকার ১৫ নম্বরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ।
  • দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আয়ের বিপুল ফারাক
  • ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের সাধারণ শ্রমিকদের আয় বেড়েছে মাত্র দুই শতাংশ। অন্য দিকে, বিত্তবানদের আয় বেড়েছে ৬০০ শতাংশ।
  • বিশ্বে ১০ হাজার কোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা দুই হাজার ৪৩। গত বছর তাঁদের আয় বেড়েছে আরও ৭৬ হাজার কোটি ডলার। দেশে আয়করের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি দিন জন্ম নেওয়া ৭০ শিশু জন্ম থেকেই ১০ লক্ষ টাকার মালিক হবে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এমন জন্ম থেকেই ধনীর সংখ্যা তিন লক্ষ ৩০ হাজার!• মনে করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটা সব রেকর্ড ছাপিয়ে পৌঁছে যাবে এক কোটিতে। অর্থাৎ সেই সময়ের মধ্যে এক কোটি এমন মানুষ থাকবেন, যাঁরা জন্ম থেকেই বিপুল বিত্তবান।
  • এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারের কী করণীয়?
  • প্রান্তিক মানুষদের দিকে বেশি করে নজর দিতে হবে
  • সব শ্রেণির মধ্যে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে হবে। দেখতে হবে, যেন গরিবের আয় বৃদ্ধির হার ধনির আয় বৃদ্ধির হারের সমান হয়।
  • সেই সব ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করা উচিত, যে সব ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ অনেকটাই বেশি এবং যা দেশের যুব সমাজের ক্ষেত্রে বেশি কারযকর।
  • গরিবদের জন্য দারিদ্র দূরিকরণ প্রকল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগু‌লি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে
  • কার্যকর হতে পারে গরিবদের কাছে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
  • যে কোনও মূল্যে দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে। দুর্নীতির ফলে
  • সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব মানুষরাই। তাই দুর্নীতি বন্ধে আরও
  • কঠোর আইন, আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাড়াতে
  • হবে চাকরির পরিমাণ এবং কাজের নিরাপত্তাও।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গরিবদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করতে হবে।
  • কর সংগ্রহে খামতি পূরণ করতে হবে।
  • শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, কাজের দিক থেকেই বিত্তবানদের ধনী হতে হবে ৷
  • বিত্তবানদের তাঁদের বিপুল সম্পদের কিছুটা অংশ দান করতে হবে। সমাজসেবার জন্য দিতে হবে আয়ের কিছুটা অংশ। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারেন ওয়ারেন বাফে, বিল গেটস, আজিম প্রেমজি, শিব নাদর, নারায়ণস্বামী, টাটা এবং বিড়লারা। সেই সব দানের অর্থ দিয়ে গরিব মানুষদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, শৌচালয়, প্রভৃতির উন্নতিতে কাজে লাগাতে হবে।
  • নাগরিকদের দায়িত্ব দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তাঁদের ভবিষ্যতের আর্থিক প্রয়োজ‌নের বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। আয় যা-ই হোক না কেন, আগে টাকা জমানো, পরে বাকি অর্থ দিয়ে জীবনযাপন—
  • এই কথাটা প্রত্যেকের মজ্জাগত করে ফেলতে হবেই। বেহিসাবি খরচ ও বিলাসের জীবন যাপন করা থেকে বিরত থাকতেই হবে।
  • গরিব আরও গরিব হয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা খরচের জন্য।
  • লাইফস্টাইল ডিজিজ থেকে বাঁচতে বাড়ির পরিবেশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আচমকা হওয়া কোনও বিপদ থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা করাতেই হবে।
  • ছেলেমেয়েদের শিক্ষাখাতে খরচকে বিনিয়োগ হিসাবে ধরতে হবে প্রতি পরিবারকে। যদি গরিব পরিবারের সন্তান উচ্চশিক্ষিত হয়, তাঁরা ভবিষ্যতে পরিবারের রক্ষক হয়ে উঠতে পারবেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করতেও অনুঘটকের কাজ করতে পারবেন।
  • এই ধরনের সমাধান থেকেই আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভেদ থেকে দেশ ও বিশ্বকে মুক্ত করতে পারব।
Kerman (Iran), Jan 07 (ANI): Massive procession was taken out for the last rites of Iranian military commander Qasem Soleimani in Iran's Kerman on January 07. Soleimani was killed in an US airstrike on President Donald Trump's orders on January 03. Iran has vowed 'severe revenge' for the death of Soleimani.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.