ETV Bharat / briefs

পাশেই কারও হিটস্ট্রোক, কী করবেন তৎক্ষণাৎ ? - Dehydration

তাপমাত্রা বাড়ছে । তার জেরে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ছে । তা থেকে বাঁচতে কী করবেন ?

ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Apr 28, 2019, 8:19 PM IST

Updated : Apr 30, 2019, 1:06 PM IST

কলকাতা, 28 এপ্রিল : তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ চড়ছে । আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আপাতত কয়েকদিন এই গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । তার জেরে বাড়ছে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা । অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো যায় না মৃত্যু । কিন্তু, কী এই হিটস্ট্রোক ? কীভাবে এড়ানো যাবে? বিষয়টি নিয়ে ETV ভারতের সঙ্গে কথা বললেন ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মহুয়া ভট্টাচার্য ।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোকে আসলে কী হয়?

মহুয়া ভট্টাচার্য : গরমে শরীরের তাপমাত্রা খুব বাড়তে থাকে । ডিহাইড্রেশন হয় । শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য যে পরিমাণ জল প্রয়োজন , তা না থাকলে শরীরের অন্য অর্গ্যানগুলিতে রক্ত সঞ্চালন হয় না । তার জেরে ধীরে ধীরে অর্গ্যান ফেলিয়োর হয় । প্রথমে ব্রেনে প্রভাব পড়ে । তার জেরে মানুষ ঝিমিয়ে পড়ে । অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোক কতটা ক্ষতিকর?

মহুয়া ভট্টাচার্য : হিটস্ট্রোক অনেকটাই ক্ষতি করতে পারে। কথাটির মাধ্যমে মূলত বোঝা যায়, কোনও তাপ থেকে স্ট্রোকের মতো উপসর্গ দেখা দেবে । অর্থাৎ রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন । অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে । যাঁদের খুব কম বয়স ও বেশি বয়স, সব থেকে বেশি সমস্যা তাঁদের দেখা দেয় । যাঁরা অসুস্থ, কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়তে পারেন । যেমন, যাঁরা সাইকিয়াট্রিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা যে ওষুধগুলি খান, তাঁদের ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয় ।

শরীরের মেকানিজ়মে কুলিং মেথড রয়েছে । যাতে খুব গরমের মধ্যে মানুষ গেলেও, শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা যেটাকে কো-টেম্পারেচার বলা হয়, সেটা অতটা বাড়ার কথা নয় । কিন্তু, যাঁরা অসুস্থ অথবা কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ খান, অনেক সময় তাঁরা হয়ত এক্সারসাইজ করছেন না । শুধুমাত্র বেশি তাপমাত্রার মধ্যে এলেন, তাতেও হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে । প্রাপ্তবয়স্ক যাঁরা সুস্থ-স্বাভাবিক, তাঁরা যদি এই গরমের মধ্যে খুব বেশি মাত্রায় এক্সারসাইজ় করেন, কোনও কাজ করেন, যেমন, যাঁরা মাঠে চাষ করছেন, তাঁদের যে পরিশ্রম হয়, তাঁদের শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় ।

আমাদের এখানকার আবহাওয়ায় তাপমাত্রার সঙ্গে আর্দ্রতা থাকে । শরীর তার তাপ ছাড়তে পারে না । সেজন্য শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে । তারপর ধীরে ধীরে ক্র্যাম্প হয় । সেটাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না । ক্র্যাম্প বাড়তে বাড়তে মাথাব্যথা, বমি, একটা আচ্ছন্ন বোধ শুরু হয় । এর পরে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

রোদের মধ্যে একটানা কেউ কাজ করছেন । ক্র্যাম্প হওয়া থেকে কখন অজ্ঞান হয়ে যাবেন, তা নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল । কিন্তু, যাঁদের ক্র্যাম্প হচ্ছে, তাঁদের বিশ্রাম নেওয়া উচিত । তাঁদের আরও কিছুক্ষণ রোদের মধ্যে ঘোরাফেরা করা, কাজ করা উচিত হবে না । এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে মে-জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে । আরও একটি বিষয় হচ্ছে ডিরেক্ট হিট। যাঁরা রোদের মধ্যে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের হিটস্ট্রোক বেশি হয় । যেমন কাউকে রোদের মধ্যে বাইকে ঘুরে বেড়াতে হয়, তাঁদেরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁদের অন্য সমস্যা রয়েছে। যেমন হার্টের সমস্যা রয়েছে। অন্য কোনও ওষুধ খান। তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হঠাৎ করে আসতে পারে। এমন নয় যে কোনও ফেজ-এর মধ্য দিয়ে যাবে, তার পরে মৃত্যু হবে। এমন নাও হতে পারে। এটা হয় হৃদযন্ত্রের ছন্দ তখন খুব অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সেই ছন্দটা হার্ট বা মানুষের সহ্য করার মতো পরিস্থিতি অনেক সময় থাকে না।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

ETV ভারত : কম ও বেশি বয়সিরা সব থেকে বেশি সমস্যায় পারেন কেন?

মহুয়া ভট্টাচার্য : আমাদের শরীরে যে কুলিং মেকানিজ়ম বা হিটের জন্য মস্তিষ্ক যেভাবে সাড়া দেয়, এই বিষয়টি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয় না । ছোটদের শরীরের সারফেস এরিয়া এত বেশি যে ছোটরা খুব সহজে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। বয়স্করা একটু ঝিমিয়ে পড়লে জল খাইয়ে ঠান্ডা করতে হবে । না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোক হলে কী করতে হবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : হিটস্ট্রোকে আক্রান্তকে কুলিং করতে হবে । হাসপাতালে ভরতির আগে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে । শরীরে জল স্প্রিঙ্কল করে ফ্যান চালিয়ে দিলে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। যদি জ্ঞান থাকে, তা হলে ঠান্ডা জল খাওয়াতে হবে । ঠান্ডা জল মানে এমন নয় যে ফ্রিজ থেকে বের করে খাওয়াতে হবে, নর্মাল তাপমাত্রার জল খাওয়াতে হবে ।

প্রাথমিক পর্যায়ে সাদা জল ও পরে ORS খাওয়ানো যেতে পারে । হাসপাতালে ভর্তির পর সাধারণত স্যালাইন দেওয়া হয়। কারণ স্যালাইনের তাপমাত্রা রুমের তাপমাত্রা এক হয় । ঠান্ডা করানোর জন্য অনেক উপায় আছে । ধীরে ধীরে তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করা হয় । এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সেই মতো ওষুধ দিতে হবে। যেমন, কারও খুব বমি হলে তাঁকে ওষুধ দিতে হবে ।

ETV ভারত : যদি বমি হয়, তাহলে কী করতে হবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : শরীর ঠান্ডা করার উপায় ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। কারণ, খাওয়ানোর উপায় তো বন্ধ হয়ে গেছে । ওষুধও খাওয়ানো যাবে না, জল খাওয়াতেও পারছে না । এই অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, ততই ভালো।

ETV ভারত : কীভাবে এড়ানো যেতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে । খুব ডার্ক কালারের পোশাক পরা যাবে না, যাতে হিট শুষে নিতে না পারে শরীর‌ । দিনের মাঝামাঝি সময় যখন তাপমাত্রা সবথেকে বেশি থাকে, সেইসময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো । অসুস্থ এবং যাঁদের ক্ষেত্রে এরকম আগে হয়েছে, তাঁদের তো এই অবস্থায় বের না হওয়া উচিত। সঙ্গে সব সময় জল রাখা উচিত। যাতে উপসর্গ বুঝতে পারা যাক বা না যাক, মাঝে মধ্যেই কিছুটা পরিমাণে জল খেয়ে নিজেকে হাইড্রেটেড করে রাখা যায় । কোনও বন্ধ গাড়ির মধ্যে যেমন, রোদের মধ্যে গাড়ি রয়েছে। এই অবস্থায় গাড়ির মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এমন গাড়িতে বসে না থাকা কিংবা ছোটদের বসিয়ে যেন না রাখা হয়। এতে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে চলে যায়।


ETV ভারত : সাদা জল বা শরবত রাখা যেতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : সাধারণত যখন ঘাম হয়, তখন শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যায়। সম্ভব হলে শরবত ঠিক নয়, নুন চিনির জল হলে ভালো হয়। কিন্তু, এটা যদি সম্ভব না হয়, তা হলে কিছু না খেলেও সাদা জল খেলে কাজ দেবে। বারবার জল খেয়ে শরীর যাতে ঠান্ডা রাখা যায় ততটাই ভালো।


ETV ভারত : হিটস্ট্রোকের আগে খুব বেশি ঘাম হতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : যাঁদের হিটস্ট্রোক হয়, তাঁদের ঘাম হয়ে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়া ফেল করে গেছে। যাঁদের ঘাম হচ্ছে, শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্তরা একদমই ঘামেন না। একদম হট ওয়ার্ম স্ক্রিন বলা হয়। আর, খুব শুষ্ক থাকে। সেজন্য, তাঁদের খুব ঘাম হবে এটা নাও হতে পারে।


ETV ভারত : যাঁরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত, নুন-চিনির মেশানো জল খেলে কি সমস্যা হতে পারে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : নুন ও চিনি মেশানো জল সবার জন্য আদর্শ, এটা বলা কঠিন হতে পারে । যাঁদের ব্লাড সুগার রয়েছে অথচ রক্তচাপ স্বাভাবিক, তাঁদের ক্ষেত্রে নুন মেশানো জল দেওয়া যেতে পারে। রক্তচাপ থাকলে নুন মেশানো জল দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সাদা জল খেতে হবে। দেখা গেল, সারাদিনে বাইরে থাকার সময় তিন লিটার জল প্রয়োজন। নুন মেশানো জল হয়ত 25 শতাংশ এবং বাকিটা সাদা জল খেলেন।

ETV ভারত : আর কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে কী করা যাবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : তাঁরা যেন গরমের মধ্যে বাইরে না বেরোন । কারণ, তাঁদের জল খাওয়ার ক্ষেত্রে বাধানিষেধ থাকে । অনেক ক্ষেত্রে 500-600 মিলিলিটার জল খান । শরীরে জলের অভাব কতটা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারবেন না। এর মধ্যেও সমস্যা দেখা দেয়, কিছুটা জল খাওয়ানো যেতে পারে। হয়তো 700-800 মিলিলিটার জল খাওয়ানোর কথা বলে দিয়েছেন চিকিৎসক। এক্ষেত্রে 300-400 মিলিলিটার জল খেতে পারেন। এরপরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যেতে পারে।

কলকাতা, 28 এপ্রিল : তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ চড়ছে । আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আপাতত কয়েকদিন এই গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । তার জেরে বাড়ছে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা । অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো যায় না মৃত্যু । কিন্তু, কী এই হিটস্ট্রোক ? কীভাবে এড়ানো যাবে? বিষয়টি নিয়ে ETV ভারতের সঙ্গে কথা বললেন ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মহুয়া ভট্টাচার্য ।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোকে আসলে কী হয়?

মহুয়া ভট্টাচার্য : গরমে শরীরের তাপমাত্রা খুব বাড়তে থাকে । ডিহাইড্রেশন হয় । শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য যে পরিমাণ জল প্রয়োজন , তা না থাকলে শরীরের অন্য অর্গ্যানগুলিতে রক্ত সঞ্চালন হয় না । তার জেরে ধীরে ধীরে অর্গ্যান ফেলিয়োর হয় । প্রথমে ব্রেনে প্রভাব পড়ে । তার জেরে মানুষ ঝিমিয়ে পড়ে । অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোক কতটা ক্ষতিকর?

মহুয়া ভট্টাচার্য : হিটস্ট্রোক অনেকটাই ক্ষতি করতে পারে। কথাটির মাধ্যমে মূলত বোঝা যায়, কোনও তাপ থেকে স্ট্রোকের মতো উপসর্গ দেখা দেবে । অর্থাৎ রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন । অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে । যাঁদের খুব কম বয়স ও বেশি বয়স, সব থেকে বেশি সমস্যা তাঁদের দেখা দেয় । যাঁরা অসুস্থ, কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়তে পারেন । যেমন, যাঁরা সাইকিয়াট্রিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা যে ওষুধগুলি খান, তাঁদের ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয় ।

শরীরের মেকানিজ়মে কুলিং মেথড রয়েছে । যাতে খুব গরমের মধ্যে মানুষ গেলেও, শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা যেটাকে কো-টেম্পারেচার বলা হয়, সেটা অতটা বাড়ার কথা নয় । কিন্তু, যাঁরা অসুস্থ অথবা কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ খান, অনেক সময় তাঁরা হয়ত এক্সারসাইজ করছেন না । শুধুমাত্র বেশি তাপমাত্রার মধ্যে এলেন, তাতেও হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে । প্রাপ্তবয়স্ক যাঁরা সুস্থ-স্বাভাবিক, তাঁরা যদি এই গরমের মধ্যে খুব বেশি মাত্রায় এক্সারসাইজ় করেন, কোনও কাজ করেন, যেমন, যাঁরা মাঠে চাষ করছেন, তাঁদের যে পরিশ্রম হয়, তাঁদের শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় ।

আমাদের এখানকার আবহাওয়ায় তাপমাত্রার সঙ্গে আর্দ্রতা থাকে । শরীর তার তাপ ছাড়তে পারে না । সেজন্য শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে । তারপর ধীরে ধীরে ক্র্যাম্প হয় । সেটাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না । ক্র্যাম্প বাড়তে বাড়তে মাথাব্যথা, বমি, একটা আচ্ছন্ন বোধ শুরু হয় । এর পরে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

রোদের মধ্যে একটানা কেউ কাজ করছেন । ক্র্যাম্প হওয়া থেকে কখন অজ্ঞান হয়ে যাবেন, তা নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল । কিন্তু, যাঁদের ক্র্যাম্প হচ্ছে, তাঁদের বিশ্রাম নেওয়া উচিত । তাঁদের আরও কিছুক্ষণ রোদের মধ্যে ঘোরাফেরা করা, কাজ করা উচিত হবে না । এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে মে-জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে । আরও একটি বিষয় হচ্ছে ডিরেক্ট হিট। যাঁরা রোদের মধ্যে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের হিটস্ট্রোক বেশি হয় । যেমন কাউকে রোদের মধ্যে বাইকে ঘুরে বেড়াতে হয়, তাঁদেরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁদের অন্য সমস্যা রয়েছে। যেমন হার্টের সমস্যা রয়েছে। অন্য কোনও ওষুধ খান। তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হঠাৎ করে আসতে পারে। এমন নয় যে কোনও ফেজ-এর মধ্য দিয়ে যাবে, তার পরে মৃত্যু হবে। এমন নাও হতে পারে। এটা হয় হৃদযন্ত্রের ছন্দ তখন খুব অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সেই ছন্দটা হার্ট বা মানুষের সহ্য করার মতো পরিস্থিতি অনেক সময় থাকে না।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

ETV ভারত : কম ও বেশি বয়সিরা সব থেকে বেশি সমস্যায় পারেন কেন?

মহুয়া ভট্টাচার্য : আমাদের শরীরে যে কুলিং মেকানিজ়ম বা হিটের জন্য মস্তিষ্ক যেভাবে সাড়া দেয়, এই বিষয়টি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয় না । ছোটদের শরীরের সারফেস এরিয়া এত বেশি যে ছোটরা খুব সহজে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। বয়স্করা একটু ঝিমিয়ে পড়লে জল খাইয়ে ঠান্ডা করতে হবে । না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে।

ETV ভারত : হিটস্ট্রোক হলে কী করতে হবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : হিটস্ট্রোকে আক্রান্তকে কুলিং করতে হবে । হাসপাতালে ভরতির আগে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে । শরীরে জল স্প্রিঙ্কল করে ফ্যান চালিয়ে দিলে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। যদি জ্ঞান থাকে, তা হলে ঠান্ডা জল খাওয়াতে হবে । ঠান্ডা জল মানে এমন নয় যে ফ্রিজ থেকে বের করে খাওয়াতে হবে, নর্মাল তাপমাত্রার জল খাওয়াতে হবে ।

প্রাথমিক পর্যায়ে সাদা জল ও পরে ORS খাওয়ানো যেতে পারে । হাসপাতালে ভর্তির পর সাধারণত স্যালাইন দেওয়া হয়। কারণ স্যালাইনের তাপমাত্রা রুমের তাপমাত্রা এক হয় । ঠান্ডা করানোর জন্য অনেক উপায় আছে । ধীরে ধীরে তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করা হয় । এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সেই মতো ওষুধ দিতে হবে। যেমন, কারও খুব বমি হলে তাঁকে ওষুধ দিতে হবে ।

ETV ভারত : যদি বমি হয়, তাহলে কী করতে হবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : শরীর ঠান্ডা করার উপায় ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। কারণ, খাওয়ানোর উপায় তো বন্ধ হয়ে গেছে । ওষুধও খাওয়ানো যাবে না, জল খাওয়াতেও পারছে না । এই অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, ততই ভালো।

ETV ভারত : কীভাবে এড়ানো যেতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে । খুব ডার্ক কালারের পোশাক পরা যাবে না, যাতে হিট শুষে নিতে না পারে শরীর‌ । দিনের মাঝামাঝি সময় যখন তাপমাত্রা সবথেকে বেশি থাকে, সেইসময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো । অসুস্থ এবং যাঁদের ক্ষেত্রে এরকম আগে হয়েছে, তাঁদের তো এই অবস্থায় বের না হওয়া উচিত। সঙ্গে সব সময় জল রাখা উচিত। যাতে উপসর্গ বুঝতে পারা যাক বা না যাক, মাঝে মধ্যেই কিছুটা পরিমাণে জল খেয়ে নিজেকে হাইড্রেটেড করে রাখা যায় । কোনও বন্ধ গাড়ির মধ্যে যেমন, রোদের মধ্যে গাড়ি রয়েছে। এই অবস্থায় গাড়ির মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এমন গাড়িতে বসে না থাকা কিংবা ছোটদের বসিয়ে যেন না রাখা হয়। এতে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে চলে যায়।


ETV ভারত : সাদা জল বা শরবত রাখা যেতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : সাধারণত যখন ঘাম হয়, তখন শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যায়। সম্ভব হলে শরবত ঠিক নয়, নুন চিনির জল হলে ভালো হয়। কিন্তু, এটা যদি সম্ভব না হয়, তা হলে কিছু না খেলেও সাদা জল খেলে কাজ দেবে। বারবার জল খেয়ে শরীর যাতে ঠান্ডা রাখা যায় ততটাই ভালো।


ETV ভারত : হিটস্ট্রোকের আগে খুব বেশি ঘাম হতে পারে?

মহুয়া ভট্টাচার্য : যাঁদের হিটস্ট্রোক হয়, তাঁদের ঘাম হয়ে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়া ফেল করে গেছে। যাঁদের ঘাম হচ্ছে, শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্তরা একদমই ঘামেন না। একদম হট ওয়ার্ম স্ক্রিন বলা হয়। আর, খুব শুষ্ক থাকে। সেজন্য, তাঁদের খুব ঘাম হবে এটা নাও হতে পারে।


ETV ভারত : যাঁরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত, নুন-চিনির মেশানো জল খেলে কি সমস্যা হতে পারে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : নুন ও চিনি মেশানো জল সবার জন্য আদর্শ, এটা বলা কঠিন হতে পারে । যাঁদের ব্লাড সুগার রয়েছে অথচ রক্তচাপ স্বাভাবিক, তাঁদের ক্ষেত্রে নুন মেশানো জল দেওয়া যেতে পারে। রক্তচাপ থাকলে নুন মেশানো জল দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সাদা জল খেতে হবে। দেখা গেল, সারাদিনে বাইরে থাকার সময় তিন লিটার জল প্রয়োজন। নুন মেশানো জল হয়ত 25 শতাংশ এবং বাকিটা সাদা জল খেলেন।

ETV ভারত : আর কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে কী করা যাবে ?

মহুয়া ভট্টাচার্য : তাঁরা যেন গরমের মধ্যে বাইরে না বেরোন । কারণ, তাঁদের জল খাওয়ার ক্ষেত্রে বাধানিষেধ থাকে । অনেক ক্ষেত্রে 500-600 মিলিলিটার জল খান । শরীরে জলের অভাব কতটা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারবেন না। এর মধ্যেও সমস্যা দেখা দেয়, কিছুটা জল খাওয়ানো যেতে পারে। হয়তো 700-800 মিলিলিটার জল খাওয়ানোর কথা বলে দিয়েছেন চিকিৎসক। এক্ষেত্রে 300-400 মিলিলিটার জল খেতে পারেন। এরপরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যেতে পারে।

Last Updated : Apr 30, 2019, 1:06 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.