প্রকৃতির লীলা ! উষ্ণ প্রস্রবণের কথাই ভাবুন । মাটির ভিতর থেকে আপন খেয়ালে উঠে আসছে ফুটন্ত জল ! টগবগ করে ফুটছে ! সেখানে চাল ফেললে ভাত হয়ে যাবে ! কিংবা অমরনাথ । বরফ জমে শিবলিঙ্গের আকার নেয় ! লীলাময় প্রকৃতিই কি ঈশ্বর ! প্রকৃতি কখনও কি আধুনিক বিজ্ঞানকেও হার মানাতে পারে ? যদি বলা হয়, মাধ্যাকর্ষণকেও ভুল প্রমাণ করে প্রকৃতি ! বিশ্বাস করতে একটু অসুবিধা হচ্ছে তো ? কিন্তু এমনও জায়গা আছে, যেখানে মাধ্যকর্ষণের অস্বীকার করে উলটো চলে গাড়ি । নিজে থেকেই । এর জন্য আপনাকে বেশি দূরে যেতে হবে না । ভূ-ভারতেই রয়েছে এমন জায়গা ।
কাশ্মীরের লাদাখ । কাশ্মীর কথাটা শুনলে প্রথমেই মনে আসে নৈসর্গিক সৌন্দর্য । প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে এখানে । যেখানে প্রকৃতি তার সবটুকু উজাড় করে দেবে, সেখানে সে তার লীলা দেখাবে না এমন হয় নাকি । জানতে চান কী সেই লীলা ?
লাদাখের লেহ থেকে কার্গিলের দিকে যে রাস্তা চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে গাড়ি করে এগিয়ে যান । চারিদিকের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে থাকুন । তিরিশ কিলোমিটার এগোলেই বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশনের একটি লেখা চোখে পড়বে । বড় বড় করে লেখা-এখান থেকে শুরু হচ্ছে ম্যাগনেটিক হিল ।
আরও পড়ুন : আর এক মাঁঝি! তিরিশ বছর ধরে খাল কেটে গ্রামে আনলেন জল
চুম্বক পাহাড় । তার উপর দিয়েই চলে গেছে রাস্তা । রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গিয়ার নিউট্রালে দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন । আর তারপর যা ঘটবে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে চাইবেন না ! চড়াই রাস্তা অথচ আপনার গাড়ি আপনা থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ! যেন কোনও এক অদৃশ্য শক্তি আপনার গাড়িটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে । গাড়ির গতিও নেহাত কম নয় । প্রায় বিশ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে এগিয়ে চলেছে চড়াই বেয়ে ! আপন ছন্দে ! এ এক অদ্ভুত রহস্য ! এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া সব গাড়ির সঙ্গেই এমন ঘটে । তাই গাড়ির চালকরাও এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি নিউট্রালে দিয়ে স্টার্ট বন্ধ করে দেন ৷ ব্রেক থেকে পা সরিয়ে শুধু স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকেন । আর গাড়ি এগিয়ে চলে প্রকৃতির রিমোট কন্ট্রোলে !
শুধু গাড়ি নয়, যে বিমানগুলি এখান দিয়ে যায়, তার পাইলটরাও ম্যাগনেটিক হিল অতিক্রম করার সময় সতর্ক থাকেন । নজর রাখেন যাতে বিমানের গতিপথ কোনওভাবে বদলে না যায় ।
আরও পড়ুন : রাস্তা ছাড়াই মানুষ যায়-আসে রূপকথার এই গ্রামে
কিছুদিন আগে অবধি এই ঘটনার পিছনে অলৌকিক কিছু রয়েছে বলে মনে করা হত । লাদাখের লোকেদের বিশ্বাস, এককালে এই রাস্তাই স্বর্গে নিয়ে যেত । যাঁরা স্বর্গে যাওয়ার উপযুক্ত, তাঁদের আপনা আপনি টেনে নেওয়া হত এই পথে । যাঁরা উপযুক্ত নন, তাঁরা যেতে পারতেন না ।
কিন্তু আদত ঘটনা অন্য । এর পিছনে রয়েছে যুক্তি । দু-রকমের যুক্তি পাওয়া যায় প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেয়ালের । প্রথম যুক্তিটি হল, এই পাহাড়ে প্রচণ্ড শক্তিশালী একটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে । এই চৌম্বক ক্ষেত্র এতটাই শক্তিশালী যে, বায়ুসেনার বিমানগুলিও এই ম্যাগনেটিক হিল এড়িয়ে চলে, যাতে বিমানের কোনও যন্ত্রাংশে চৌম্বকক্ষেত্রের কোনও প্রভাব না পড়ে ।
অন্য একটি যুক্তি বলে, এখানে কোনও চৌম্বকক্ষেত্র নেই । ওই রাস্তা, যেটাকে খাড়াই বলে মনে হয়, সেটা আসলে চড়াই নয় । সামন্য উতরাই । পাহাড়ের আশেপাশের ঢালগুলির এমনই বিন্যাস যে চড়াইকে উতরাই, আর উতরাইকে চড়াই বলে মনে হয় । পুরো ব্যাপারটাই আসলে দৃষ্টিভ্রম । ফলে রাস্তা দিয়ে গাড়িগুলি স্বাভাবিক নিয়মেই নীচের দিকে নামতে থাকে । অথচ দেখে মনে হয় যেন উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে ! অর্থাৎ কি না লীলা, প্রকৃতির!