ETV Bharat / briefs

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সুবিধা পেলেন না মহিলা

স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকলেও মহিলা পেল না সুবিধা । সেই কার্ডটি ভুয়ো । অন্য একজনের নামে তৈরি । এই দাবি করেছে মালদার এক নার্সিংহোম । ফলত চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের লোক । বিপুল অঙ্কের বিল মেটাতে তাঁরা কার্যত অক্ষম । গত বুধবার ওই নার্সিংহোমে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি ।

author img

By

Published : May 4, 2019, 11:06 PM IST

পরিবারের সদস্যরা

মালদা, 4 মে : হাতে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড । সেই কার্ড নিয়ে শ্বশুর অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে ভর্তি করেছিলেন মালদা শহরের এক নার্সিংহোমে । এক পুত্রসন্তানের জন্মও দিয়েছেন পুত্রবধূ । পরিবারে খুশির মেজাজ । পরদিন সকালে মাথায় হাত পড়েছে শ্বশুরসহ পরিবারের সবার । নার্সিংহোম থেকে ফোন করে তাঁদের জানানো হয়েছে, যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁরা নার্সিংহোমে জমা দিয়েছেন তা ভুয়ো । ফলে তাঁরা আর কার্ডের কোনও সুবিধে পাবেন না । এই অবস্থায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের 16 হাজার টাকা বিল কীভাবে মেটাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরিবারের সবাই । তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন, যে কার্ডের উপর ছবি সহ উপভোক্তার নাম লেখা রয়েছে, সেই কার্ড কীভাবে ভুয়ো হয়? এই ঘটনায় সরকারি এই পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে । যদিও ছুটির দিন প্রশাসনের কোনও কর্তার দেখা মেলেনি । মালদা জেলার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটরও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন ।

কালিয়াচক 2 ব্লকের হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যুগলটোলা গ্রামের বাসিন্দা ঊষা মণ্ডল (26) । বাবা অতুল মণ্ডল কৃষিজীবী । বছর দু'য়েক আগে দেখাশোনা করে ঊষার বিয়ে হয় ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের যুবক বাপি ঘোষের সঙ্গে । বাপি কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কখনও টোটো চালান । অভাবী সংসার । গত বুধবার দুপুরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ঊষাকে ভর্তি করা হয় শহরের একটি নার্সিং হোমে ৷ সেই রাতে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি ৷ খুশির রেশ ছিল পরিবারে । পরদিন সকালেই সেই আনন্দে আঘাত দেয় নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ । ঊষার শ্বশুরমশাই বাবলু ঘোষ আজ নার্সিংহোমের সামনে বলেন, "বুধবার আমি প্রথমে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নার্সিংহোমে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, এই কার্ডে সরকারি সুবিধে পাব কী না । নার্সিং হোম থেকে কার্ড পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের সুবিধে পাওয়া যাবে । এরপরেই দুপুর দুটোয় বউমাকে আমি এখানে ভরতি করি । রাত সাড়ে 10টায় বউমার পুত্রসন্তানের জন্ম হয় । তারপর আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই । পরদিন সকাল 7টা নাগাদ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ফোন করে আমাকে জানায়, বউমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ভুয়ো ৷ সেই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা নার্সিংহোমে ছুটে আসি ৷ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমরা বউমার স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে ওই দপ্তরে যাই । সেখানেও পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের উপর বউমার ছবি ও নাম থাকলেও সেই কার্ড জনৈক সাজেদা বিবির নামে তৈরি করা রয়েছে । ওই দপ্তর থেকে আমাদের বলা হয় কার্ড রেখে যেতে । যদিও আমরা কার্ড জমা করিনি । আমার প্রশ্ন, আমি প্রথমে নার্সিং হোমে কার্ড দেখিয়েছিলাম । তখনই কেন বলা হল না ওই কার্ড ভুয়ো? এখন নার্সিংহোম 16 হাজার টাকা বিল করেছে । এর সঙ্গে প্রতিদিন আয়ামাসির জন্য 200 টাকা করে দিতে হবে । আমি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সব কথা খুলে বলেছি । কিন্তু তাদের এক কথা, 16 হাজার টাকার বিল মেটাতেই হবে । টাকা না দিলে বউমাকে তারা ছুটি দেবে না বলেছে । এই অবস্থায় কী করব, বুঝে পাচ্ছি না ।"

ঊষার দাদা বিপ্লব মণ্ডল হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান । এই নিয়ে বিপ্লববাবুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য ব্লক থেকে লোক পাঠানো হয় । তাদের সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিও থাকে । প্রতি কার্ডে একটি পরিবারের সর্বাধিক 5 জনের নাম থাকতে পারে । আমাদের বাড়িতে তিনটি পরিবার । আমার বাবা আর বোনের নাম একটি কার্ডে ছিল । ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমেই এই কাজ হয়েছিল । ব্লকের তরফে পঞ্চায়েতে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে । সেই লোকজন ছিল মুর্শিদাবাদের । তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও পঞ্চায়েতই করেছিল । প্রত্যেক উপভোক্তার হাতের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছিল । তারপরেও কীভাবে বোনের কার্ডে অন্যজনের নাম রেজিস্টার্ড হয় তা আমিও বুঝতে পারছি না । আমার ধারণা, ব্লক থেকে যে লোকজন পাঠানো হয়েছিল, তাদের ভুলেই এমন ঘটনা ঘটেছে৷ তবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের আগেই কার্ড পরীক্ষা করা উচিত ছিল । তাহলে বোনকে মেডিকেলে ভরতি করা যেত । বোনের এই ঘটনার পর আমি এলাকার সবাইকে বলছি, তারা যেন নিজেদের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পরীক্ষা করিয়ে নেয় । আর কতজনের এমন ভুল হয়েছে, কেউ জানে না । তবে সোমবারই আমি এই নিয়ে কালিয়াচক 2-এর BDO-র সঙ্গে দেখা করব ।"

নার্সিংহোমের ম্যানেজার অপূর্বরঞ্জন ঘোষ বলেন, "স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম থাকা প্রসূতিদের ক্ষেত্রে আমরা সরকারি অনুমোদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না । আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকে মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখা । বুধবার ঊষা মণ্ডল এখানে ভরতি হওয়ার পর আমরা সেটাই করেছি । পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসাথী দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়, এই কার্ডে উপভোক্তা কোনও সরকারি সহায়তা পাবেন না । সেটা নাকি ভুয়ো কার্ড । আমরা সেই কার্ড দিয়ে প্রসূতির পরিবারের লোকজনকেও প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম । কিন্তু তাঁদেরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, এই কার্ডে কোনও কাজ হবে না । টাকা দিয়েই প্রসূতিকে নার্সিংহোম থেকে ছুটি করাতে হবে । তবু আমরা প্রসূতির পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনা করে যতটা কম বিল করা সম্ভব করেছি । 20-22 হাজার টাকার জায়গায় আমরা 16 হাজার টাকার বিল করেছি । এতেও প্রসূতির পরিবারের সমস্যা হলে আমরা আরও বিবেচনা করব ।"
আজ পাওয়া যায়নি জেলাশাসক কিংবা অতিরিক্ত জেলাশাসককে । তালাবন্ধ ছিল প্রশাসনিক ভবনের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর প্রতীক সান্যালের কক্ষও । তিনি ফোন মারফৎ জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করার অধিকারী নন । যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে ।

মালদা, 4 মে : হাতে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড । সেই কার্ড নিয়ে শ্বশুর অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে ভর্তি করেছিলেন মালদা শহরের এক নার্সিংহোমে । এক পুত্রসন্তানের জন্মও দিয়েছেন পুত্রবধূ । পরিবারে খুশির মেজাজ । পরদিন সকালে মাথায় হাত পড়েছে শ্বশুরসহ পরিবারের সবার । নার্সিংহোম থেকে ফোন করে তাঁদের জানানো হয়েছে, যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁরা নার্সিংহোমে জমা দিয়েছেন তা ভুয়ো । ফলে তাঁরা আর কার্ডের কোনও সুবিধে পাবেন না । এই অবস্থায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের 16 হাজার টাকা বিল কীভাবে মেটাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরিবারের সবাই । তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন, যে কার্ডের উপর ছবি সহ উপভোক্তার নাম লেখা রয়েছে, সেই কার্ড কীভাবে ভুয়ো হয়? এই ঘটনায় সরকারি এই পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে । যদিও ছুটির দিন প্রশাসনের কোনও কর্তার দেখা মেলেনি । মালদা জেলার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটরও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন ।

কালিয়াচক 2 ব্লকের হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যুগলটোলা গ্রামের বাসিন্দা ঊষা মণ্ডল (26) । বাবা অতুল মণ্ডল কৃষিজীবী । বছর দু'য়েক আগে দেখাশোনা করে ঊষার বিয়ে হয় ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের যুবক বাপি ঘোষের সঙ্গে । বাপি কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কখনও টোটো চালান । অভাবী সংসার । গত বুধবার দুপুরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ঊষাকে ভর্তি করা হয় শহরের একটি নার্সিং হোমে ৷ সেই রাতে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি ৷ খুশির রেশ ছিল পরিবারে । পরদিন সকালেই সেই আনন্দে আঘাত দেয় নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ । ঊষার শ্বশুরমশাই বাবলু ঘোষ আজ নার্সিংহোমের সামনে বলেন, "বুধবার আমি প্রথমে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নার্সিংহোমে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, এই কার্ডে সরকারি সুবিধে পাব কী না । নার্সিং হোম থেকে কার্ড পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের সুবিধে পাওয়া যাবে । এরপরেই দুপুর দুটোয় বউমাকে আমি এখানে ভরতি করি । রাত সাড়ে 10টায় বউমার পুত্রসন্তানের জন্ম হয় । তারপর আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই । পরদিন সকাল 7টা নাগাদ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ফোন করে আমাকে জানায়, বউমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ভুয়ো ৷ সেই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা নার্সিংহোমে ছুটে আসি ৷ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমরা বউমার স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে ওই দপ্তরে যাই । সেখানেও পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের উপর বউমার ছবি ও নাম থাকলেও সেই কার্ড জনৈক সাজেদা বিবির নামে তৈরি করা রয়েছে । ওই দপ্তর থেকে আমাদের বলা হয় কার্ড রেখে যেতে । যদিও আমরা কার্ড জমা করিনি । আমার প্রশ্ন, আমি প্রথমে নার্সিং হোমে কার্ড দেখিয়েছিলাম । তখনই কেন বলা হল না ওই কার্ড ভুয়ো? এখন নার্সিংহোম 16 হাজার টাকা বিল করেছে । এর সঙ্গে প্রতিদিন আয়ামাসির জন্য 200 টাকা করে দিতে হবে । আমি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সব কথা খুলে বলেছি । কিন্তু তাদের এক কথা, 16 হাজার টাকার বিল মেটাতেই হবে । টাকা না দিলে বউমাকে তারা ছুটি দেবে না বলেছে । এই অবস্থায় কী করব, বুঝে পাচ্ছি না ।"

ঊষার দাদা বিপ্লব মণ্ডল হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান । এই নিয়ে বিপ্লববাবুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য ব্লক থেকে লোক পাঠানো হয় । তাদের সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিও থাকে । প্রতি কার্ডে একটি পরিবারের সর্বাধিক 5 জনের নাম থাকতে পারে । আমাদের বাড়িতে তিনটি পরিবার । আমার বাবা আর বোনের নাম একটি কার্ডে ছিল । ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমেই এই কাজ হয়েছিল । ব্লকের তরফে পঞ্চায়েতে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে । সেই লোকজন ছিল মুর্শিদাবাদের । তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও পঞ্চায়েতই করেছিল । প্রত্যেক উপভোক্তার হাতের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছিল । তারপরেও কীভাবে বোনের কার্ডে অন্যজনের নাম রেজিস্টার্ড হয় তা আমিও বুঝতে পারছি না । আমার ধারণা, ব্লক থেকে যে লোকজন পাঠানো হয়েছিল, তাদের ভুলেই এমন ঘটনা ঘটেছে৷ তবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের আগেই কার্ড পরীক্ষা করা উচিত ছিল । তাহলে বোনকে মেডিকেলে ভরতি করা যেত । বোনের এই ঘটনার পর আমি এলাকার সবাইকে বলছি, তারা যেন নিজেদের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পরীক্ষা করিয়ে নেয় । আর কতজনের এমন ভুল হয়েছে, কেউ জানে না । তবে সোমবারই আমি এই নিয়ে কালিয়াচক 2-এর BDO-র সঙ্গে দেখা করব ।"

নার্সিংহোমের ম্যানেজার অপূর্বরঞ্জন ঘোষ বলেন, "স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম থাকা প্রসূতিদের ক্ষেত্রে আমরা সরকারি অনুমোদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না । আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকে মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখা । বুধবার ঊষা মণ্ডল এখানে ভরতি হওয়ার পর আমরা সেটাই করেছি । পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসাথী দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়, এই কার্ডে উপভোক্তা কোনও সরকারি সহায়তা পাবেন না । সেটা নাকি ভুয়ো কার্ড । আমরা সেই কার্ড দিয়ে প্রসূতির পরিবারের লোকজনকেও প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম । কিন্তু তাঁদেরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, এই কার্ডে কোনও কাজ হবে না । টাকা দিয়েই প্রসূতিকে নার্সিংহোম থেকে ছুটি করাতে হবে । তবু আমরা প্রসূতির পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনা করে যতটা কম বিল করা সম্ভব করেছি । 20-22 হাজার টাকার জায়গায় আমরা 16 হাজার টাকার বিল করেছি । এতেও প্রসূতির পরিবারের সমস্যা হলে আমরা আরও বিবেচনা করব ।"
আজ পাওয়া যায়নি জেলাশাসক কিংবা অতিরিক্ত জেলাশাসককে । তালাবন্ধ ছিল প্রশাসনিক ভবনের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর প্রতীক সান্যালের কক্ষও । তিনি ফোন মারফৎ জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করার অধিকারী নন । যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে ।

Intro:মালদা, ৪ মে : হাতে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড৷ সেই কার্ড নিয়ে শ্বশুরমশাই অন্তঃসত্তা পুত্রবধূকে ভর্তি করেছিলেন মালদা শহরের এক নার্সিং হোমে৷ সেখানে অস্ত্রোপচারে এক পুত্রসন্তানের জন্মও দিয়েছেন পুত্রবধূ৷ পরিবারে খুশির মেজাজ৷ পরদিন সকালে মাথায় হাত পড়েছে শ্বশুরমশাই সহ পরিবারের সবার৷ নার্সিং হোম থেকে ফোন করে তাঁদের জানানো হয়েছে, যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁরা নার্সিং হোমে জমা দিয়েছেন তা ভুয়ো৷ ফলে তাঁরা আর কার্ডের কোনও সুবিধে পাবেন না৷ এই অবস্থায় নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের ১৬ হাজার টাকা বিল কীভাবে মেটাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরিবারের সবাই৷ তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন, যে কার্ডের উপর ছবি সহ উপভোক্তার নাম লেখা রয়েছে, সেই কার্ড কীভাবে ভুয়ো হয়! এই ঘটনায় সরকারি এই পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ যদিও ছুটির দিন প্রশাসনের কোনও কর্তার দেখা মেলেনি৷ মালদা জেলার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটরও এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন৷Body:কালিয়াচক ২ ব্লকের হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যুগলটোলা গ্রামের বাসিন্দা ঊষা মণ্ডল (২৬)৷ বাবা অতুল মণ্ডল কৃষিজীবী৷ বছর দুয়েক আগে দেখাশোনা করে ঊষার বিয়ে দেওয়া হয় ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের যুবক বাপি ঘোষের সঙ্গে৷ বাপি কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কখনও টোটো চালান৷ অভাবী সংসার৷ গত বুধবার দুপুরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ঊষাকে ভর্তি করা হয় শহরের একটি নার্সিং হোমে৷ সেই রাতে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ নতুন অতিথির আগমনে খুশির রেশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা পরিবারে৷ পরদিন সকালেই সেই আনন্দে আঘাত দেয় নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ৷
         ঊষার শ্বশুরমশাই বাবলু ঘোষ আজ নার্সিং হোমের সামনে জানান, "বুধবার আমি প্রথমে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নার্সিং হোমে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, এই কার্ডে সরকারি সুবিধে পাব কিনা৷ নার্সিং হোম থেকে কার্ড পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের সুবিধে পাওয়া যাবে৷ এরপরেই দুপুর ২টোয় বউমাকে আমি এখানে ভর্তি করি৷ রাত সাড়ে ১০টায় অস্ত্রোপচার করে বউমার পুত্রসন্তানের জন্ম হয়৷ তারপর আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই৷ পরদিন সকাল ৭টা নাগাদ নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ ফোন করে আমাকে জানায়, বউমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ভুয়ো৷ সেই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা নার্সিং হোমে ছুটে আসি৷ নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমরা বউমার স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে ওই দপ্তরে যাই৷ সেখানেও পরীক্ষা করে জানানো হয়, কার্ডের উপর বউমার ছবি ও নাম থাকলেও সেই কার্ড জনৈক সাজেদা বিবির নামে তৈরি করা রয়েছে৷ ওই দপ্তর থেকে আমাদের বলা হয় কার্ড রেখে যেতে৷ যদিও আমরা কার্ড জমা করিনি৷ আমার প্রশ্ন, আমি প্রথমে নার্সিং হোমে কার্ড দেখিয়েছিলাম৷ তখনই কেন বলা হল না ওই কার্ড ভুয়ো? এখন নার্সিং হোম ১৬ হাজার টাকা বিল করেছে৷ এর সঙ্গে প্রতিদিন আয়ামাসির জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হবে৷ আমি নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে সব কথা খুলে বলেছি৷ কিন্তু তাদের এক কথা, ১৬ হাজার টাকার বিল মেটাতেই হবে৷ টাকা না দিলে বউমাকে তারা ছুটি দেবে না বলেছে৷ এই অবস্থায় কী করব, বুঝে পাচ্ছি না৷"
         ঊষার দাদা বিপ্লব মণ্ডল হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান৷ এনিয়ে বিপ্লববাবুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য ব্লক থেকে লোক পাঠানো হয়৷ তাদের সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিও থাকে৷ প্রতি কার্ডে একটি পরিবারের সর্বাধিক ৫ জনের নাম থাকতে পারে৷ আমাদের বাড়িতে তিনটি পরিবার৷ আমার বাবা আর বোনের নাম একটি কার্ডে ছিল৷ ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমেই এই কাজ হয়েছিল৷ ব্লকের তরফে পঞ্চায়েতে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তৈরির জন্য হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে৷ সেই লোকজন ছিল মুর্শিদাবাদের৷ তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও পঞ্চায়েতই করেছিল৷ প্রত্যেক উপভোক্তার হাতের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছিল৷ তারপরেও কীভাবে বোনের কার্ডে অন্যজনের নাম রেজিস্টার্ড হয় তা আমিও বুঝতে পারছি না৷ আমার ধারনা, ব্লক থেকে যে লোকজন পাঠানো হয়েছিল, তাদের ভুলেই এমন ঘটনা ঘটেছে৷ তবে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের আগেই কার্ড পরীক্ষা করা উচিত ছিল৷ তাহলে বোনকে মেডিকেলে ভর্তি করা যেত৷ বোনের এই ঘটনার পর আমি এলাকার সবাইকে বলছি, তারা যেন নিজেদের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পরীক্ষা করিয়ে নেয়৷ আর কতজনের এমন ভুল হয়েছে, কেউ জানে না৷ তবে সোমবারই আমি এনিয়ে কালিয়াচক ২-এর বিডিওর সঙ্গে দেখা করব৷"
         নার্সিং হোমের ম্যানেজার অপূর্বরঞ্জন ঘোষ বলেন, "স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম থাকা প্রসুতিদের ক্ষেত্রে আমরা সরকারি অনুমোদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না৷ আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকে মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখা৷ বুধবার ঊষা মণ্ডল এখানে ভর্তি হওয়ার পর আমরা সেটাই করেছি৷ পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসাথী দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়, এই কার্ডে উপভোক্তা কোনও সরকারি সহায়তা পাবেন না৷ সেটা নাকি ভুয়ো কার্ড৷ আমরা সেই কার্ড দিয়ে প্রসুতির পরিবারের লোকজনকেও প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম৷ কিন্তু তাঁদেরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, এই কার্ডে কোনও কাজ হবে না৷ টাকা দিয়েই প্রসুতিকে নার্সিং হোম থেকে ছুটি করাতে হবে৷ তবু আমরা প্রসুতির পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনা করে যতটা কম বিল করা সম্ভব করেছি৷ ২০-২২ হাজার টাকার জায়গায় আমরা ১৬ হাজার টাকার বিল করেছি৷ এতেও প্রসুতির পরিবারের সমস্যা হলে আমরা আরও বিবেচনা করব৷"
Conclusion:শনিবার পাওয়া যায়নি জেলাশাসক কিংবা অতিরিক্ত জেলাশাসককে৷ তালাবন্ধ ছিল প্রশাসনিক ভবনের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর প্রতীক সান্যালের কক্ষও৷ তিনি ফোন মারফৎ জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করার অধিকারী নন৷ যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে৷
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.