মালদা, 4 জুন : মালদা জেলায় ক্রমশ বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৷ সংক্রামিতদের কোভিড হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যেতে একমাত্র ভরসা হাতে গোনা কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। রোগীদের হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যেতে দিনরাত তৈরি কোভিড অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা ৷ কোরোনা নিয়ে তাঁদের কোনও ভয় নেই, ভয় একমাত্র সমাজকেই ৷
কোরোনা রোগী বাহক হিসাবে তাঁদের নাম প্রকাশ্যে চলে আসলে তার ফল ভুগতে হতে পারে তাঁদের পরিবারকেও ৷ এমনকি, এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে চালকরা ৷ তাই কোরোনা রোগী বহন করার কথা গোপন রাখতে হচ্ছে পরিবারের কাছেও
মালদা জেলায় এখনও পর্যন্ত 158 জন কোরোনা পজিটিভের সন্ধান মিলেছে ৷ সংক্রামিতদের বেশিরভাগকেই পুরাতন মালদার কোভিড হাসপাতাল কিংবা বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ জেলার প্রথম তিন আক্রান্তকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিলিগুড়ি কোভিড হাসপাতালে ৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছিল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ৷ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোরোনা আক্রান্তদের বহন করার জন্য আপাতত আটটি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে ৷ এই অ্যাম্বুলেন্সগুলি প্রত্যেকটিই বেসরকারি ৷ প্রয়োজনে আরও অ্যাম্বুলেন্স কাজে লাগানো হবে ৷ সংক্রামিতদের বহন করার সময় চালকদের পিপিই কিট দেওয়া হচ্ছে ৷ এছাড়া রোগীকে হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা অ্যাম্বুলেন্সকে স্যানিটাইজও করা হচ্ছে ৷ তারপরেই সেই অ্যাম্বুলেন্সকে দ্বিতীয় রোগীর জন্য পাঠানো হচ্ছে
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছি ৷ প্রতিদিন তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে ওষুধ ৷ তাঁদের খাবারের ব্যবস্থাও স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে৷ চালকরা যাতে কোনওভাবেই কোরোনা সংক্রামিত না হন, তার দিকে আমরা কড়া নজর রেখেছি৷”
স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় খুশি অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, “আমাদের জন্য যে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে আমাদের সংক্রমণের ভয় নেই বললেই চলে ৷ আমরাও তাই কোরোনা রোগী বহন করতে কোনও ভয় পাচ্ছি না ৷ তবে আমাদের ভয় অন্য জায়গায় ৷ আমরা কোরোনা রোগী বহন করছি, সেকথা যদি আমাদের এলাকার লোকজন একবার জেনে ফেলে, তবে তারা আমাদের আর বাড়িতে থাকতে দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷ ইতিমধ্যে জেলার অনেক জায়গায় ভিনরাজ্য ফেরত শ্রমিকদের তাদের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি ৷ অনেককেই রাস্তাঘাটে দিন কাটাতে হয়েছে৷ লোকজন আমাদের কথা জেনে ফেললে তার ফল ভোগ করতে হতে পারে পরিবারের সদস্যদেরও ৷"
তিনি আরও যোগ করে বলেন, " বিষয়টি একবার জানাজানি হলে পরিবার সহ আমরা সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে পারি ৷ তাই আমরা যে কোরোনা রোগী বহন করছি, তা পরিবারের কাউকেও জানাই না ৷ রোগী বহন করার সময় আমরা পিপিই কিটে গোটা মুখ ঢেকে ফেলি ৷ যাতে আমাদের কেউ চিনতে না পারে ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত আমাদের কাউকে এই সমস্যায় পড়তে হয়নি ৷ তবে সাবধানের মার নেই ৷”