নয়াদিল্লি, 19 সেপ্টেম্বর: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন মেলার পর নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে লোকসভায় পেশ করা হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল ৷ এই সপ্তাহেই হয়তো লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলাদের সংরক্ষণ নিয়ে তৈরি হয়ে যাবে এই বিলের ভাগ্য ৷ এই সংবিধান সংশোধনী বিল 13 বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসভায় পাশ করা যায়নি ৷ তবে সম্ভবত এ বার তার শিকে ছিঁড়তে চলেছে ৷
দেশে মহিলা সংরক্ষণ বিলের সফর খুব সহজ ছিল না ৷ এর সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল এবং 1992 সাল থেকে এই বিল নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি বিভিন্ন সরকার ৷ বর্তমান বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল 2010 সালের মার্চ মাসে ৷ তারপর থেকে 13 বছরেরও বেশি সময়ে লোকসভায় এই বিল পাশ করা যায়নি ৷
কিন্তু, সংসদে একটি সাংবিধানিক সংশোধনী বিল পাশ করার জন্য আইনি প্রচেষ্টা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে ৷ লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করে মহিলাদের ক্ষমতায়নের দাবি জানায় 73তম এবং 74 তম সংশোধনী । 1992 সালে দেশে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তৈরির সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও-এর আমলে এই বিল পাশ হয়েছিল ৷
73তম এবং 74তম - এই দুটি সংবিধান সংশোধনী মহিলাদের জন্য পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠানে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের পথ প্রশস্ত করে ৷ রাজ্যসভার সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আইন ও বিচার মন্ত্রকের জমা দেওয়া একটি ব্যাকগ্রাউন্ড নোট অনুসারে, তিনটি বিল যথাক্রমে 1996, 1998 এবং 1999 সালে সংসদে পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু এক বা একাধিক কারণে বিলগুলি পাশ করা যায়নি ।
লোকসভা এবং রাজ্যগুলির বিধানসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিষয়টি প্রথম সংসদে একাদশতম লোকসভায় সংবিধানের (81তম সংশোধনী) বিল, 1996 প্রবর্তনের মাধ্যমে আলোচনার জন্য উঠেছিল । 1996 সালের 12 সেপ্টেম্বর বিলটির সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রকৃতির প্রেক্ষিতে এটি পশ্চিমবঙ্গের পাঁশকুড়া থেকে লোকসভার সদস্য গীতা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল ।
আরও পড়ুন: মুলতুবি লোকসভা, সর্বসম্মতিতে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশে সাংসদদের কাছে আর্জি মোদির
গীতা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন যৌথ সংসদীয় কমিটি তাঁর রিপোর্ট জমা দেয় এবং 1996 সালের ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে এই কমিটি ৷ এরপরেও বিলটি পাশ করা যায়নি এবং একাদশতম লোকসভা ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বাতিল হয়ে যায় । দ্বাদশ লোকসভায় বিলটি পাশ করানোর আরেকটি প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং সংবিধান (84তম সংশোধনী) বিল, 1998 নামে অনুরূপ একটি বিল দ্বাদশ লোকসভায় উত্থাপিত হয়েছিল, যা ওই লোকসভার বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যায় ।
তৃতীয় প্রয়াসটি ত্রয়োদশ লোকসভায় করা হয়েছিল ৷ পূর্ববর্তী দুটি সংবিধান সংশোধনী বিলের আদলে তৈরি হয় সংবিধান (85তম সংশোধনী) বিল, 1999 ৷ 1999 সালের ডিসেম্বর মাসে লোকসভায় পেশ করা হয় এই বিল, কিন্তু রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের অভাবে তা অমীমাংসিতই থেকে যায় ৷ এরপর ত্রয়োদশ লোকসভা ভেঙে যাওয়ার পর এই বিলও বাতিল হয়ে যায় ৷
ইউপিএ সরকার 2008 সালের 6 মে রাজ্যসভায় সংবিধান (108তম সংশোধনী) বিল, 2008 পেশ করে ৷ এই বিল ওই বছরই আট মে রাজ্যসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয় । জয়ন্তী নটরাজনের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটি 2009 সালের ডিসেম্বরে রাজ্যসভা ও লোকসভায় তার সুপারিশ জমা দেয় এবং বিলটি 2010 সালের মার্চ মাসে রাজ্যসভায় পাশ করা হয় ৷ রাজ্যসভা একটি স্থায়ী কক্ষ হওয়ায় 2010 সালের মার্চ মাসে রাজ্যসভায় পাশ হওয়া বিলটি আর বাতিল হয়নি ৷
আরও পড়ুন: মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে উচ্ছ্বসিত কঙ্গনা-এষা, দরাজ প্রশংসা মোদির
এর আগে, 2002 এবং 2003 সালে তৎকালীন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারও লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করার চেষ্টা করেছিল ৷ কিন্তু রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে সরকার সেই বিলকে নিম্নকক্ষে পাশ করাতে পারেনি । 2004 সালের মে মাসে সরকার পরিবর্তনের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার 2008 সালের মে মাসে রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করে এবং 2010 সালের মার্চে এটি পাশ করে ।
লোকসভায় এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ে এই বিল নিয়ে নতুন করে তৎপর হন ৷ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল লোকসভায় একটি নতুন বিল, সংবিধান (128তম সংশোধনী) বিল, 2023 পেশ করেছেন ৷
2014 এবং 2019 উভয় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছিল ৷ এ বার সর্বসম্মতিক্রমে এই বিল পাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি মঙ্গলবার সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন ৷