বেঙ্গালুরু, 8 অগস্ট: গায়ের রং কালো হওয়ায় যদি স্ত্রী বারবার স্বামীকে অপমান করেন, তবে সেটা নিষ্ঠুরতা ৷ ব্যক্তির বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনে অনুমতি দেওয়ার জন্য এটাই শক্তিশালী কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে ৷ এমনই মত কর্ণাটক হাইকোর্টের ৷ সাম্প্রতিক এক রায়ে 44 বছর বয়সি এক ব্যক্তি ও তাঁর 41 বছরের স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদে অনুমতি দেওয়ার সময় এ কথা বলেছে আদালত ৷
কালো হওয়ায় স্বামীকে অপমান: রেকর্ডে থাকা প্রমাণগুলি ভালোভাবে যাচাই করে আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে, স্বামী কালো হওয়ায় তাঁকে সবসময় অপমান করতেন তাঁর স্ত্রী ৷ তিনি সেই কারণে স্বামীর সঙ্গেও থাকতেন না বলে আদালত উল্লেখ করেছে ৷
হিন্দু বিবাহ আইনের এই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সময় কর্ণাটক হাইকোর্ট বলে, "এই দিকটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, তিনি (স্ত্রী) স্বামীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগ তোলেন । এই তথ্যগুলি অবশ্যই নিষ্ঠুরতা ৷"
আছে কন্যাসন্তান: বেঙ্গালুরুর দম্পতি 2007 সালে বিয়ে করেন এবং তাঁদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে । 2012 সালে স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের জন্য বেঙ্গালুরুতে একটি পারিবারিক আদালতে যান । বিচারপতি অলোক আরাধে এবং অনন্ত রামানাথ হেগড়ের ডিভিশন বেঞ্চে তাঁর আবেদনের শুনানি হয় ৷
হাইকোর্ট উল্লেখে করেছে, "গায়ের চামড়া কালো হওয়ায় স্ত্রী তাঁকে অপমান করতেন বলে মামলায় জানিয়েছিলেন স্বামী ৷ তিনি আরও বলেন যে, শুধু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই অপমান সহ্য করতেন ৷"
স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ: ওই মহিলা তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 498এ ধারায় একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন । মহিলাটি গার্হস্থ্য হিংসার আইনে মামলা দায়ের করে শিশুটিকে নিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে চলে যান । তিনি পারিবারিক আদালতে অভিযোগগুলি অস্বীকার করেন এবং পরিবর্তে অভিযোগ করেন যে, স্বামী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন এবং তাঁকে নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছিল ৷ তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁর কাছে যৌতুক দাবি করা হয় এবং তাঁকে তাঁর সন্তানের সঙ্গে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি । তাঁর স্বামীর সঙ্গে অন্য মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে এবং তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই মহিলা ।
আরও পড়ুন: স্ত্রী জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত, ‘তালাক’ পেতে ভুয়ো অভিযোগ দায়ের স্বামীর
নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ: পারিবারিক আদালত 2017 সালে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য স্বামীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল ৷ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে স্বামী হাইকোর্টে যান ৷ হাইকোর্ট বলেছে যে, স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ৷ পারিবারিক আদালতের রায় খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট বলে, কালো বলে অপমান করাটা নিষ্ঠুরতার সমান ৷
আদালতের কথায়, "স্বামীর কাছে ফিরে আসার জন্য স্ত্রী কোনও প্রচেষ্টা করেননি এবং রেকর্ডে থাকা প্রমাণগুলি দেখায় যে, স্বামীর কালো রঙের জন্য তাঁর সঙ্গে থাকতে আগ্রহী ছিলেন না স্ত্রী ।"
পারিবারিক আদালতের বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ডিক্রি মঞ্জুর করা উচিত ছিল বলেও জানিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট ৷